শিরোনাম

বরিশাল নগর বিএনপির কমিটি ঘিরে গুঞ্জন

Views: 39

বরিশাল অফিস :: সদ্যবিলুপ্ত বরিশাল মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি কবে হবে, কাদের নিয়ে হবেÑ তা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকের মতে, এখানে আবারও আহ্বায়ক কমিটিই ঘোষণা করা হবে। কেউ কেউ বলছেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচ সদস্যের কমিটিও গঠিত হতে পারে। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকেই এসব নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা চলছে বিএনপি ও এর বিভিন্ন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে।

এদিকে মহানগর বিএনপির সদ্যবিলুপ্ত কমিটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা জাহিদুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, ‘কী ধরনের কমিটি হবে, সেই বিষয়ে আমরা কেউ নিশ্চিত নই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সিদ্ধান্ত দেবেন কী কমিটি হবে।’

বিএনপি নেতা রিপনের ধারণা, পহেলা জুলাইয়ের আগেই এই কমিটি পাবে মহানগর বিএনপি। মহানগর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হাসান আনিচ বলছেন, ‘ধারণা করছি, দক্ষিণ জেলা বিএনপির মতো মহানগর বিএনপিরও আবারও আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হবে। দক্ষিণ জেলার মতো এখানেও আসলে আহ্বায়ক কমিটিই পুনর্গঠন করা হবে।’

বিএনপি নেতারা জানান, ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর বিএনপি বরিশাল মহানগরের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে মো. মনিরুজ্জামান ফারুককে আহ্বায়ক, অ্যাডভোকেট আলী হায়দার বাবুলকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং মীর জাহিদুল কবিরকে সদস্য সচিব করা হয়। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত ৫ নভেম্বর কমিটি অনুমোদনের স্বাক্ষর দেন। ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি আহ্বায়ক কমিটি ৪২ সদস্যসম্পন্ন করার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু আকস্মিকভাবে গত ১৩ জুন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তখন থেকে বরিশালে বিএনপির কমিটি নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়।

দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যেহেতু আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে, তাই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি-সম্পাদকসহ আপাতত ৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।

সভাপতি হিসেবে আলোচিত হচ্ছেন যারা ::

এ ক্ষেত্রে সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। আবার চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হওয়ায় তার এই সুযোগ নেই বলেও মনে করছেন অনেকে। যদিও সরোয়ার অনুসারীদের ধারণা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এ পদ দিতে পারেন।

এ বিষয়ে মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘দল যদি দায়িত্ব দেয়, তাহলে সিদ্ধান্ত মেনে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে দলকে এগিয়ে নেব। দল দায়িত্ব দিলে একাধিক পদ কোনো বিষয় নয়।’

এরপরেই আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরীন। তিনি বললেন, ‘গত সাত বছর ধরে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। এখন আমি পদোন্নতি প্রত্যাশা করছি। তা ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিলেও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।’

তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়দুল হক চানকে এবার মহানগর বিএনপির সভাপতি করা হতে পারে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

এ বিষয়ে এবায়দুল হক চান বলেন, ‘দলের প্রতি ভালোবাসা সব সময় ছিল, থাকবে।’ মহানগরের কমিটিতে তাকে রাখার বিষয় সম্পর্কে কিছু জানেন না, এ-কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব দিলে অবশ্যই আমার সঙ্গে আগে আলোচনা করতে হবে।’

সদ্যবিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকও রয়েছেন আলোচনায়। এ বিষয়ে মনিরুজ্জামান খান ফারুক জানান, দলের সিদ্ধান্ত মেনেছেন সব সময়। আন্দোলন-সংগ্রামে পিছপা হননি কখনও। দায়িত্ব পাওয়ার পর বরিশাল মহানগর বিএনপিকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন। তিন মাসের বেশি সময় জেল খেটেছেন। সব দিক বিবেচনা করে তার প্রতিদান পাওয়ার প্রত্যাশা তো থাকতেই পারে। তারপরও দলের চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা তিনি মাথা পেতে নেবেন।

সম্পাদক/সদস্য সচিব পদে আলোচিত যারা ::

সাধারণ সম্পাদক কিংবা সদস্য সচিব হিসেবে আলোচনায় রয়েছে তিন জনের নাম। তারা হলেনÑ সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার, সদ্যবিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মীর জাহিদুল কবির ও মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান শামীম।

এ বিষয়ে জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে আসছি শুরু থেকেই। এই দলের জন্য নিজের সর্বস্ব দিতে রাজি আমি। দলের চলমান প্রক্রিয়ায় আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় আবারও কমিটি হবে। দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে কমিটিতে যেখানে রাখার যোগ্য মনে করবেন, সেখানেই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। এ বিষয়ে আমি চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তের ওপর পুরোপুরি আস্থাশীল।’

মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আক্তারুজ্জামান শামীম বলেন, ‘৪০ বছর ধরে বরিশাল নগরীতে বিএনপির সৈনিক হয়ে কাজ করছি। দল যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করেছি নিষ্ঠা ও একাগ্রতা নিয়ে। মৃতপ্রায় যুবদলের কার্যক্রমকে উজ্জীবিত করেছি। ভবিষ্যতেও যদি দল আমাকে যোগ্য মনে করে কোনো দায়িত্ব দেয় তবে নিজের শতভাগ দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করব।

সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন, ‘রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এই পর্যন্ত এসেছি। টানা চারবারের কাউন্সিলর ছিলাম। দলের সিদ্ধান্ত মেনে এবার নির্বাচন থেকে বিরত থেকেছি। সব সময় দলের সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত ছিলাম, এখনও আছি। ভবিষ্যতে যাদের দায়িত্ব দেবেন, তাদের নিয়েই কাজ করব।’

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *