শিরোনাম

শিক্ষক সংকটে ধুকছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ

Views: 32

বরিশাল অফিস :: দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে শিক্ষা ব্যবস্থা মারাত্মক অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৩১ জন শিক্ষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫১ জন। ১৮০টি পদে কোন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তা নেই। অনুমোদিত পদের প্রায় ৬৫ ভাগেরও বেশি শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, কিউরেটর, প্রভাষক, প্যাথলজিষ্ট, মেডিকেল অফিসার ও বায়োকেমিষ্টের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর অর্ধেকেও পদায়ন নিশ্চিত হয়নি।

সূত্র মতে, বছর দুয়েক আগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের কিছু নতুন পদ সৃষ্টি করা হলেও সে আলোকে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে শূন্য পদের সংখ্যাটা বেড়ে সংকট আরো তীব্রতর হয়েছে। কলেজে শিক্ষক সংকটের কারণে হাসপাতালটিতেও চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভয়াবহ সংকট চলছে।

পুরো হাসপাতালটিতে নানা অব্যবস্থা-অনিয়ম আর চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা সংকটের মধ্যে অতি সম্প্রতি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বদল হয়েছে।

নতুন সভাপতি বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম গত ২৮ জুন রাতে বরিশালের সর্বস্তরের জনগণসহ হাসপাতাল ও কলেজ প্রশাসন নিয়ে এক বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে আগামী তিন মাসের মধ্যে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা উন্নত করাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখানে মেডিকেল কলেজ ব্যবস্থাপনায় কোন বেসরকারি কমিটি নেই।

সচেতন বরিশালবাসী মনে করছেন, সদর আসনের এমপি এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে কলেজের শিক্ষক সংকটসহ শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে তার নৈতিক দায় রয়েছে। সেই দায় থেকে জাহিদ ফারুক শামীমের হাত ধরে অতি দ্রুত সকল সমস্যার সমাধান হবে বলেও সচেতন বরিশালবাসী মনে করছেন।

সূত্র মতে, ১৯৬৪ সালের ৬ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর আব্দুল মোনয়েম খান বরিশাল মেডিক্যাল কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৮ সালের ২০ নভেম্বর দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার একমাত্র মেডিকেল কলেজটির উদ্বোধন করা হয়। ১৯৭৮ সালে কলেজটি সংযুক্ত করে হাসপাতালের নিজস্ব ভবন উদ্বোধন করা হয়। ওইসময় অবিভক্ত বাংলার গভর্ণর ও বরিশালের কৃতি সন্তান শের-ই বাংলার নামে এ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালটির নামকরণ করা হয়। শিক্ষক সংকটে ঐতিহ্যবাহী এ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ব্যবস্থা এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে শিক্ষক সংকটের মধ্যেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে মঞ্জুরিকৃত পদের ৮০ ভাগ শিক্ষকও নিয়োগ না দেওয়ার কারণে সংকট ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশার। তিনি বলেন, শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়টি আমরা নিয়মিত অবহিত করছি। শিক্ষক সংকটে এখানে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এমন কী চিকিৎসা শিক্ষার ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৬৫ ভাগ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।

সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে নতুন ১০টিসহ ৫০ জন অধ্যাপকের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র পাঁচজন। নতুন ২৪ জনসহ ৫০ জন সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে রয়েছেন ৪২ জন। ৪৩টি নতুন পদসহ ১২৩ জন সহকারী অধ্যাপকের মধ্যে আছেন মাত্র ৫৭ জন।

এছাড়া চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ৮২ জন প্রভাষক, মেডিক্যাল অফিসার, প্যাথলজিষ্ট, বায়োকেমেষ্ট্রি ও ফার্মাসিষ্ট পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪৫ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ থেকে ২০তম গ্রেডের ২০৫ জন কর্মচারীর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৯২ জন।

ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ১২৩জন সহকারী অধ্যাপক পদের ৬৬টি পদই শূন্য পরে আছে। ফলে অনেক বিভাগে কোন শিক্ষকই নেই। প্রভাষক বা মেডিক্যাল অফিসার দিয়েও পুরো বিভাগের শিক্ষাক্রম চলছে বেশ কয়েকটি বিভাগে। কিন্তু প্রভাষক, মেডিক্যাল অফিসার, প্যাথলজি, বায়োকেমেষ্ট্রি ও ফার্মাসিষ্টের ৮২টি পদের ৩৭টি শূন্য পরে আছে।

সূত্রমতে, এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেন্টাল বিভাগে প্রতি বছর প্রায় অর্ধশত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হলেও সেখানে শিক্ষা দেওয়ার মতো তেমন কোন শিক্ষকই নেই। ফলে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগ থেকে যারা পাস করে বের হচ্ছে তাদের বিষয়েও নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। এমন কী এই বিভাগের ক্লিনিক্যাল শিক্ষার জন্য সংলগ্ন হাসপাতালটির ইনডোরের অবস্থাও চরম নাজুক।

দেশের ঐতিহ্যবাহী ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকের শূন্যপদ নিয়ে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশার বলেন, করোনাকালে ১৯ মাস ক্লাস বন্ধ ছিল। এসময়ে অনেক শিক্ষক অবসরে গেছেন। ফলে ওইসব শূন্যপদে জনবল নিয়োগে যে বিলম্ব ঘটেছে তা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগছে।

তিনি আরও বলেন, সমস্যা থাকলেও কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *