বরিশাল অফিস :: দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শিশুদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশালে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দুই বছরের মধ্যে ‘সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতাল’-এর অবকোঠামোর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেই কাজ সাত বছরেও শেষ হয়নি! বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। কাজের দীর্ঘসূত্রতার জন্য করোনাকাল, জমি অধিগ্রহণে জটিলতাসহ একাধিক সংকটকে সামনে এনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ভবনের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। তবে গণপূর্ত বিভাগের দাবি, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় ২০১৪ সালে ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেই অনুযায়ী ২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে ১০ তলা ভিতের ওপর প্রাথমিকভাবে চারতলা ভবন নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১৮ আগস্ট তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মো. নাসিম এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
গণপূর্ত বিভাগ জানায়, ২০১৭ সালে বরিশাল নগরের আমানতগঞ্জে ১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকা ব্যয়ে ১০ তলা ভিত্তির প্রথম পর্যায়ে চারতলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ এমপি এ কাজের উদ্বোধন করেন। যৌথভাবে কাজ পায় কেএসবিএল এবং এসআরআর নামে দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ২০১৯ সালে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ শেষ করতে সাত বছরে অন্তত চারবার সময় বাড়িয়েছে। সর্বশেষে চলতি বছরেও সময় বৃদ্ধি করে জুন মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে ভবন হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু জুন মাস পার হলেও বর্ধিত সময়ের মধ্যে হাসপাতালটি হস্তান্তর করা হয়নি।
বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়সাল আলম বলেন, ‘ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে হাসপাতাল নির্মাণ কাজে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার ভবন হস্তান্তর করলে আমরা সেটির দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেব।’
এসআরআর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতাল নির্মাণকাজে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। ভবনের নকশা পরিবর্তন এবং করোনার কারণে যথাসময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করা যায়নি। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণে কিছুটা জটিলতা ছিল। সবকিছু মোকাবিলা করে ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন শেষ সময়ের ছোট ছোট কিছু কাজ চলছে। দ্রুত সময়ে তা সম্পন্ন করে গণপূর্ত বিভাগকে হাসপাতালটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’ তবে কবে নাগাদ ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়া যাবে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।’
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শেবাচিমের শিশু ওয়ার্ডে ৪৫ শয্যার বিপরীতে গড়ে চারশ থেকে সাড়ে চারশ রোগী চিকিৎসাধীন থাকে। রোগীরা প্রত্যাশিত সেবা পান না। নতুন বিশেষায়িত হাসপাতালটি চালু হলে শিশুদের চিকিৎসার সংকট কেটে যাবে। শিশুরা উন্নত চিকিৎসা সেবা পাবে। কাজ শেষ হলে সুকান্ত বাবু শিশু হাসপাতালটি দক্ষিণাঞ্চলে একমাত্র বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল হবে।’
বিশেষায়িত এই হাসপাতালে শিশুদের জন্য জরুরি বিভাগ ছাড়াও রেডিওলজি, ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি বিভাগ, অপারেশন ব্লক, ওষুধ সরবরাহ বিভাগ, থেরাপি বিভাগ, সাধারণ শিশু ওয়ার্ড, প্রশাসনিক ব্লক ও সম্মেলনকক্ষ থাকবে বলেও জানান তিনি।