বরিশাল অফিস :: ৭২ বছর বয়সী রিজিয়া বেগম। তিনি এই পুরো বয়স কাটিয়েছেন ভোলার লালমোহন উপজেলার ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের ফায়ার সার্ভিস অফিস সংলগ্ন সড়ক ও জনপদ বিভাগের খাস জমিতে। শারীরিক জটিলতায় বৃদ্ধা রিজিয়ার স্বামী প্রায় গত ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। সেই থেকে জীবন আরো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে রিজিয়া বেগমের।
তিনি জানান, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে বিয়ে করেছে। সেও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে সরকারি খাস জমিতেই থাকে। মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছি। মেয়েকে রেখে জামাই অন্যত্র আবার বিয়ে করেছে। যার জন্য মেয়ে ও নাতি-নাতিনদের নিয়ে একসঙ্গেই থাকি। আমরা সবাই মিলে যেই ঘরটিতে থাকি তা একেবারেই জরাজীর্ণ। সামান্য বাতাসেই দোলে ঘরটি। বাতাস হলে খুবই আতঙ্কে থাকি, মনে হয় এই যেন ঘরটি ভেঙে পড়বে। এছাড়া বৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে পানি পড়ে সব ভিজে যায়। ঘরের টিনগুলো জরাজীর্ণ হওয়ায় তার ওপর তেরপাল দিয়েছি। তবুও পানি থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। বৃষ্টির সময় দিন কোনোভাবে পার হলেও রাতে থাকতে হয় সজাগ।
বৃদ্ধা রিজিয়া বেগম আরো বলেন, আমাদের কোনো নিজস্ব জমি নেই। যার জন্যই এখানে কষ্ট হলেও থাকতে হচ্ছে। জীবন বাঁচিয়ে রাখতে তিন বেলা খাওয়ার জন্য মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করি। কাজের বিনিময়ে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার মতো পাই। এই টাকা দিয়েই চলে সংসার। এছাড়া গত দুই বছর আগে আমার কোমড়ের হাড় ক্ষয় ধরা পড়ে। টাকার অভাবে সেই চিকিৎসাও করাতে পারছি না। প্রায় সময়ই প্রচণ্ড ব্যথায় কাতরাতে হয়। সরকারি একটি ঘর এবং কিছু আর্থিক সহায়তা পেলে যতদিন হায়াৎ আছে ততদিন একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম।
শুধু বৃদ্ধা রিজিয়া বেগমই নয়, তার মতো লালমোহন উপজেলার ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের ফায়ার সার্ভিস অফিস থেকে শুরু করে সূর্যের হাসি ক্লিনিক পর্যন্ত সড়ক ও জনপদ বিভাগের খাস জমিতে অন্তত ৬টি পরিবার বসবাস করছেন। এখানের সকলেরই দিন কাটে চরম কষ্টে।
ওই স্থানের বাসিন্দা এমনই আরেক নারী মোসা. লিলু বেগম। তার স্বামী আলমগীর। পেশায় তিনি একজন রাজমিস্ত্রি। তার শরীরের অবস্থাও ততো ভালো না। একদিন কাজ করতে পারলে তাকে বসে থাকতে হয় কয়েকদিন। তাদের তিন মেয়ে। মেয়েদের মধ্যে দুই জনকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে জামাইদেরও অবস্থা ততো ভালো না। এখন এক মেয়ে আর স্বামী-স্ত্রীসহ থাকেন সড়ক ও জনপদ বিভাগের খাস জমিতে। তাদের ঘরটিও জরাজীর্ণ। হোগলা পাতা দিয়ে বেড়া দেওয়া ঘরের বিভিন্নস্থানে। টিনের চালের ওপর দেওয়া তেরপাল। বৃষ্টি হলে লিলু-আলমগীর দম্পতির দুর্ভোগের শেষ থাকে না। তাই একটু শান্তিতে থাকতে সরকারি একটি ঘর পাওয়ার দাবি লিলু বেগমের।
লালমোহন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহাগ ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম অর্ন্তভুক্ত করা আছে। খুব শিগগিরই তারা ওই ঘরে উঠতে পারবেন।