কাউকে কম ঘুমাতে দিয়ে এবং কাউকে পর্যাপ্ত ঘুমাতে দিয়ে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করেছেন। পেয়েছেন দারুণ শিহরণ জাগানিয়া তথ্য। নিউরোসাইন্টিস্ট ম্যাথু ওয়াকারের ভিডিও অবলম্বনে এই তথ্য নিয়ে লিখেছেন মো: লতিফুর রহমান।
১. যারা কম ঘুমায় তাদের স্মৃতি তৈরি হয় না। বিশেষ করে বাচ্চারা রাতে কম ঘুমালে পড়া ভুলে যায়। অনেকটা কম্পিউটারে কাজ করার পর ফাইল সেভ না করার মতো।
২. আমরা দৈনন্দিন অনেক কিছু ভুলে যায় কিন্তু পুরানো স্মৃতি মনে রাখতে পারি। এজন্য দরকার শর্ট টার্ম স্মৃতিকে লং টার্মে কনভার্ট করা। কিন্তু ঘুম কম হলে এখানেও সমস্যা হয়। ব্রেইনের হিপোকমপাস নামক মেমরি ইনবক্সে নতুন স্মৃতি প্রবেশ করে না।
৩. এক রাত কম ঘুমালে পর দিন ব্রেইনের কর্মক্ষমতা কমে যায় ৪০%।
৪. শরীরে রয়েছে ন্যাচারাল কিলার সেল। এরা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার মতো ভুমিকা পালন করে। এক রাত ঠিক মতো না ঘুমালে এটার উৎপাদন কমে যায় ৭০%। ফলে ওই সময় রোগ-ব্যাধীতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
৫. কোষের ডিএনএ-র মধ্যে থাকে জিন। এরা বিভিন্ন শারিরীক প্রতিক্রিয়া ঘটানোর জন্য দায়ী। ঘুম এলোমেলো হলে এদের কেউ সক্রিয় হয় এবং কেউ হয় নিস্ক্রিয়। যেমন- ঘুম কম হলে ন্যাচারাল কিলার সেলের জিন নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। আর টিউমার ও ক্যানসারের জিন সক্রিয় হয়।
তাই বলা যায়, বংশগত রোগ বলে কিছু নেই। মূলত আছে বংশের অভ্যাস। বাবার অভ্যাস অনুসরণ করে ছেলেরও একই রোগ হয়েছে।
৬. কম ঘুমালে পুরুষের টেস্টকল ছোট হয়ে যায় এবং টেস্টটেরন কমে যায়। যৌন ক্ষমতা কমে যায় দশ গুন। অর্থাৎ অকালে পুরুষের বয়স বেড়ে যায় ১০ বছর।
৭. মেয়েদের বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা মারাত্নক কমে যায়। হরমোন এলোমেলো হওয়ার প্রভাবে তাদের স্বভাব চরিত্র হয়ে পড়ে পুরুষের মতো মাসিকে সমস্যা দেখা দেয়।
৮. নারী পুরুষ উভয়ের হার্টঅ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বলা নাই কওয়া নাই হুট করে কেউ কেউ মরে যায়।
৯. স্বপ্ন দেখা ভালো। তার মানে আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। যেদিন কেউ স্বপ্ন দেখেছে তার ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে তার জ্ঞান বুদ্ধি আগের তুলনায় বেড়েছে।
১০. ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমালে উপকার পাওয়া যায় না। এছাড়া কারো সহযোগিতা ছাড়া নিজ থেকে ঘুম থেকে ওঠা ভালো।
১১. ঘুমের উপকারী সময় হচ্ছে রাত ৯টা থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। অর্থাৎ ভোর ৫টা। দেরি করে ঘুমিয়ে দেরি করে উঠে ৮ ঘণ্টা ঘুমালে একই ফায়দা পাওয়া যায় না। কারণ কোয়ালিটি ঘুম হওয়া উচিত। অর্থাৎ যেই ঘুমের সময় শরীরে উপকারী হরমোন ও এনজাইম নিসৃত হয় সেটা লাগবে।
১২. প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং একই সময়ে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করা খুবই উপকারী।
১৩. কৃত্রিম আলো ও কৃত্রিম শব্দ নেই এমন স্থানে ঘুমাতে হবে। এমনকি চার্জারের মিটিমিটি আলো নিভায়ে ফেলতে হবে। ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করা উত্তম। রাতের খাবার খেতে হবে সন্ধ্যার সময়। আর বিকালের পরে চা, কফি বা এজাতীয় উত্তেজক কিছু খাওয়া যাবে না।
১৪. ঘুমের কাজা আদায় হয় না। পরে বেশি ঘুমিয়ে কখনই আয়ু বাড়ানো যায় না। এজন্য বর্তমানে অকালে মৃত্যু বেড়ে গিয়েছে।