বরিশাল অফিস : পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রতœপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের কাঠ মিস্ত্রী নির্মল সরকারের ছেলে লিটন সরকার ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
লিটনের বাবা নির্মল সরকার জানান, তার ছেলে ২০১৩ সালে বারপাইকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করে বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজে ভর্তি হয়। ২০১৫ সালে এইচএসসি পাশ করার পর ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হয়। তার পড়ালেখার জন্য নিজের (নির্মল) ৫০ শতক জমি, স্বর্ণালংকার বিক্রি করে এবং ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এখন তাদের সব জলে গেছে। লিটন কোন লোভে পরে এই অপরাধে যুক্ত হয়েছে সেই প্রশ্ন নির্মলের।
গ্রামের বাড়িতে লিটনদের চৌ-চালা একটি পুরনো টিনের ঘর রয়েছে। যেখানে লিটনের কাঠমিস্ত্রি বাবা নির্মল সরকার, চাচা সুনীল সরকার ও স্বপন সরকার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। সুব্রত সরকার ও শিউলী নামে গ্রেপ্তারকৃত লিটনের ভাই ও বোন রয়েছে। সবাইকে নিয়ে চরম কষ্টে জীবন যাপন করতে হয় নির্মল সরকারকে। ফলে লিটন কারাগারে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পরেছেন তার পরিবার।
লিটনের মা লীলা রানী সরকার বলেন, দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলেটা প্রতিবন্ধী। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। বড় ছেলেকে (লিটন) অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে পড়াশুনা করিয়েছি। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকার জমি, তিনটি গরু, ঘরে থাকা একটি পিতলের হাঁড়ি, পাঁচটি কলস, একটি ঘট, পিতলের সিন্ধুক ও থালা বিক্রি করেও টাকা দেওয়া হয়েছে। এরপরেও বিভিন্ন সময় লিটন আরো টাকা দাবি করায় ঋণ উত্তোলন করেও তাকে টাকা দেওয়া হয়েছে।
লিটনের চাচা সুনীল সরকার বলেন, লিটনের লেখাপড়ার জন্য কাঠমিস্ত্রির কাজ করে টাকা পাঠিয়েছি। সেই লিটন যে এই কাম করবে তার স্বপ্নেও ভাবিনি। পাঁচ মাস আগে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার রাখালতলা গ্রামে সুস্মিতা নামের এক মেয়েকে লিটন বিয়ে করেছে। সুস্মিতা নাকি ব্যাংকে চাকরি করে। লিটনের কাঠমিস্ত্রী বাবা ছেলের গ্রেপ্তারের খবরে অসুস্থ হয়ে পরেছেন।
রতœপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিধান রায় বলেন, ছেলে হিসেবে এলাকায় লিটন ভালো ছিল। শুনেছি সে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত থাকার ব্যাপারে তার পরিবার আমার কাছে কিছু বলেনি। লোকমুখে শুনেছি বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে লিটন ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছে। আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় লিটন সরকারের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে এখনও আমাদের কাছে কোনো তথ্য আসেনি।
উল্লেখ্য, দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান লিটন সরকারকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তার দরিদ্র পরিবারের। অনেক কষ্ট করে হলেও লিটনকে লেখাপড়া করিয়েছেন ঢাকার বেসরকারি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে। সেই লিটন কিভাবে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো এত বড় একটি ঘটনায় জড়িয়ে পরেছে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না তার স্বজনরা। দেশজুড়ে আলোচিত এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তাদের মধ্যে লিটন সরকারও রয়েছে।