শিরোনাম

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে স্থাপন প্রকল্পে চাঁদাবাজির অভিযোগ

Views: 144

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালী ২৫০ বেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি ৫শ বেডে উন্নীত করণের জন্য গ্রহণ করা প্রকল্পটি চলতি বছরের ৩০ জুন কাগজে কলমে সমাপ্ত হলেও বাস্তবে এখনও কাজ শেষ হয়নি।

আর প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে এসে ছাত্রলীগের চাহিদার ৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে মারধর করে বেশ কয়েকবার ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়াসহ কাজ বন্ধ করারও অভিযোগ উঠেছে মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইতোমধ্যে মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পৌর মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করে চিঠি দিয়েছেন।

৯ জুলাই গণপূর্ত বিভাগের ই/এম কাঠের কারখানা বিভাগ, শের ই বাংলা নগর ঢাকা-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে পাঠানো হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণপূর্ত ই/এম কাঠের কারখানা বিভাগ নিয়োগপ্রাপ্ত। উক্ত প্রকল্পের আওতাধীন হোস্টেলের জন্য নির্ধারিত আসবাবপত্র সরবরাহ পরবর্তীতে তার চাহিদার প্রেক্ষিতে পুরুষ ও মহিলা হোস্টেলে আসবাবপত্র সেটিং ও ফিটিং করানোর জন্য ঢাকা থেকে গত ১২ মে টেকনিশিয়ান প্রেরণ করা হয়।

হোস্টেলের আসবাবপত্র ফিটিং করার সময় কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি টেকনিশিয়ানদের কাজে বাধা প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে নির্বাহী প্রকৌশলী ই/এম বিভাগ গত ২০ মে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আসবাবপত্র সেটিং করণের কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন অধ্যক্ষসহ ২৫০ বেড হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক। পরে ছাত্রলীগের কর্মীদের সাথে সাক্ষাৎ করে কাজের স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে বিস্তরিত আলাপ-আলোচনা করে সহযোগিতা চাওয়া হয়। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে পুনরায় টেকনিশিয়ান প্রেরণ করা হয় গত ২২ জুন।

নির্বাহী প্রকৌশলী ই/এম বিভাগ কে-০১৩১৬৬৬৪৩৪৩ নাম্বার থেকে আনুমানিক রাত ১১.৩০টায় ফোন করে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং টেকনিশিয়ান যাতে প্রেরণ না করা হয় সে ব্যাপারে হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষকে টেলিফোনে অবহিত করা হয়। ঈদ-উল-আজহা পরবর্তীতে হোস্টেলের আসবাবপত্র ফিটিং এর সময় টেকনিশিয়াদের পুনরায় পটুয়াখালী মেডিকেলের ছাত্রলীগ কর্মীরা সরকারি কাজে বাধা প্রদান করেন। এমনকি টেকনিশিয়ানরা যে হোটেলে রাতে অবস্থান করে সেখান থেকেও মারধর করে, মোবাইল কেড়ে নেওয়াসহ কলেজে ঢুকে যাতে কাজ না করে সে ব্যাপারে হুমকি প্রদর্শন করা হয়।

পরে টেকনিশিয়ানরা ভয়ে কাজ না করে তারা পটুয়াখালী ত্যাগ করেন। গত ১ জুলাই ঢাকা থেকে কর্তৃপক্ষের চাহিদার প্রেক্ষিতে পুনরায় নতুন (দশ) টেকনিশিয়ানদের হোস্টেলের আসবাবপত্র ফিটিং করণের জন্য প্রেরণ করা হলে মহিলা হোস্টেলের আসবাবপত্র ফিটিং এর সময় কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ কতিপয় ছাত্রলীগ কর্মী সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করেন এবং কাজ না করার জন্য হুমকি প্রদর্শন করায় তারা প্রাণ ভয়ে কাজ করতে এবং স্থানীয় হোটেলে অবস্থান করতে চাচ্ছে না।

আরো পড়ুন : কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ‘বৃহন্নলা’

এমতাবস্থায়, বারবার টেকনিশিয়ান পাঠানোর পরেও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মারধরের হুমকি সহ কলেজে প্রবেশে নিষেধ করায় সরকারের কাজ যথাসময়ে বাস্তবায়ন হবে না মর্মে প্রতীয়মান। সুতরাং যথাসময়ে সরকারি কাজ বাস্তবায়ন করতে হলে স্থানীয় কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীদের সরকারি কাজে বাধা প্রদানে বিরত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ জানানো হল। অন্যথায় প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে সমাপ্ত হবেনা মর্মে আশংকা করা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আন্তরিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

এ বিষয় জানতে চাইলে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। ছাত্রলীগের ওরাও তো আমাদের ছাত্র। ইতোমধ্যে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এ ঘটনায় একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে। তবে বর্তমানে পুলিশের পাহারায় কাজ চলছে।

রোববার (১৪ জুলাই) সকালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বিভাগ ও হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের জন্য আনা বিভিন্ন আসবাবপত্র নতুন ভবনের বিভিন্ন কক্ষে মজুত করে রাখা হয়েছে। নির্ধারিত সময় কাজ করলে এসব আসবাবপত্র সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে সংযোজন করার কথা। কিন্তু ছাত্রলীগের বাধার কারণে তার অধিকাংশই মজুত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে করে হোস্টেলে অবস্থান করা ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকেই মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাদিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইফাদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিল। প্রাথমিক ভাবে তারা পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে, এ নিয়ে শিক্ষকরা একাধিকবার কথা বললে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের সাথে অশোভন আচরণ করে। তবে এ বিষয় মেডিকেল কলেজ শিক্ষকরা সরাসরি কেউ কথা বলতে সাচ্ছন্দ বোধ করছেন না।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মো. মনিরুজ্জামান জানান, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার পর পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মো. সাদিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইফাদুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তারা পুরো বিষয়ের সাথে ছাত্রলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন। পাশাপাশি এটিকে বিএনপি জামায়াত ঘরানার শিক্ষকদের একটি কর্মকাণ্ড বলেও জানান তারা।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ঠিক রাখার পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন সবাই।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *