বরিশাল অফিস :: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যদি একটু ধৈর্য ধরা হতো তাহলে ছাত্র আন্দোলনে বিএনপি জামায়াত দেশ বিরোধী অপশক্তির সুযোগ নিতে পারতো না। ছাত্রনেতাদের মধ্যে জঙ্গি গোষ্ঠীর এজেন্ট আছে কিনা খোঁজ নেওয়া দরকার।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে ‘দেশ ও স্বাধীনতা বিরোধী সন্ত্রাস নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের শপথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে সাপ্তাহিক গণ বাংলা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রকৃত কোনো ছাত্র এই ধরনের হামলা অগ্নি সংযোগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তাদের নেতাকর্মী ও জামায়াত ইসলাম রাষ্ট্রের ওপর এই হামলা চালিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। যারা পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, মেট্রোরেল, বিটিভিতে আগুন দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে। আমরা এটি করতে বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, আজকে রাষ্ট্র আক্রান্ত। এই রাষ্ট্রের ওপরে হামলা তারেক রহমানের নির্দেশে হয়েছে। গতকাল তারা (বিএনপি নেতারা) স্বীকারোক্তি দিয়েছে, ছাত্র লীগ মারলে পাঁচ হাজার ও পুলিশ মারলে দশ হাজার টাকা দেওয়া হবে। আমির খসরু নির্দেশ দিচ্ছেন তাদের তরুণ নেতাকর্মীদেরকে ছাত্র আন্দোলনে ঢুকে পড়ার জন্য। তারেক রহমান নির্দেশ দিচ্ছেন, সেই অডিও ক্লিপ সরকারের কাছে আছে। অডিওতে তারেক রহমান বলছেন, ‘কারফিউ ভাঙো, আর নাহয় পদত্যাগ করো’। গত বছরে ২৮ অক্টোবর যারা ঢাকা শহরে অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্য করেছিল তাদেরকে বিএনপি বড় বড় পদ দিয়েছে। এবারও যারা মানুষ মারবে, পুলিশ মারবে তাদেরকে বিএনপি বড় বড় পদ দিবে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল! এটি একটি দেশবিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন।
তিনি আরও বলেন, দেশ স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গি বিএনপি-জামায়াত দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ ও তাদের সহায় সম্পত্তি আক্রান্ত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংস ও রাষ্ট্রের ওপরে আঘাত হানা হয়েছে। এ অঞ্চলে স্থাপিত প্রথম টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভিতে আঘাত হানা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের ওপর এমন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি।
তিনি বলেন, দেশে যখন ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণায়লের কর্মকর্তারা দুর্যোগ কবলিত মানুষের কাছে ছুটে যান। কিন্তু, এখন সেই মন্ত্রণালয়েও আগুন দিয়েছে। এটি রাষ্ট্রের ওপরে হামলা। যে সেতু ভবন পদ্মা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ কাজ পরিচালনা করেছে সেই সেতুভবনকেও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডাটা সেন্টারে আগুন দেওয়া হয়েছে, যার কারণে বেশ কয়েকদিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে সাবমেরিন কেবলগুলোকে কেটে দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ঢাকাবাসীর গর্ব মেট্রোরেলে হামলা চালিয়েছে। ফুটওভার ব্রিজে আগুন দেওয়া হয়েছে। একহাজারের বেশি গাড়িকে আগুন দিয়ে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি বিদেশি রাষ্ট্রদূতদেরকে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখানোর জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ইটালিয়ান রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘এটা লজ্জাজনক’। বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সামাজিক মাধ্যমের আইডি হ্যাক করে উল্টাপাল্টা পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার কোটা পুনর্বহাল করেনি। ২০১৮ আমাদের সরকার কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিল। সে অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাইকোর্টে আপিল করেছিল। হাইকোর্ট ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপনকে বাতিল করে রায় দেয়। এটি হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত, সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। সরকার সাথে সাথে আপিল বিভাগে গেলে হাইকোর্টের রায়কে স্থগিত করে দেওয়া হয় এবং ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বহাল হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, যেটি আমাদের সংবিধান ও আইন মতে যদি কোনো বিষয় সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে সরকারের পক্ষে নির্বাহী ক্ষমতায় কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। সরকারের পক্ষ থেকে সেটি আমরা বারবার বলেছি।
প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেছেন,‘শিক্ষার্থীরা হতাশ হবেন না’। কিন্তু দেখলাম প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আধা ঘণ্টা পরেই শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু, পরে উচ্চ আদালতের রায়ে সমস্যার সমাধান হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যা চেয়েছিল; তার চেয়ে বেশি পেয়েছে। রায়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা রাখা হলেও বাস্তবে তারা এক-দুই শতাংশের বেশি পাবে না। তাহলে বাকিটাও মেধাতে যাবে। কোটা থাকলেও সবাইকে মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষার শেষ ধাপে যেতে হয়। শেষ ধাপে যেতে পারে মাত্র দুই শতাংশ শিক্ষার্থী। তারপরেই তাদের ক্ষেত্রে কোটা প্রয়োগ হয়। কিন্তু কোটার বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে। কিন্তু, এরপরেও পত্র-পত্রিকায় নানা ধরনের বিবৃতি ও আহবান দেখি।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী এই নির্মমতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অনেক সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীও যে ঘটনার স্বীকার হয়নি তা নয়। সমস্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিচার আওতায় আনা হবে- এই প্রতিশ্রুতি শেখ হাসিনা দেশের জনগণকে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিমের সভাপতিতে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মো.মহিববুর রহমান,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক,জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।