শিরোনাম

দূর্যোগময় পরিস্থিতিতে রাঙামাটির জনজীবনে স্থবিরতা! জলবন্দি ৩০ হাজার মানুষ

Views: 18

চন্দ্রদ্বীপ নিউজ :: দূর্যোগপূর্ন আবহাওয়ায় কয়েকদিনের টানা বর্ষণের ফলে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কাপ্তাই হ্রদের পানি হু-হু করে বাড়ছে। টানাবর্ষণের ফলে পানির প্রবলল ভেসে গিয়ে নানিয়ারচরে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে করে জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, বিলাইছড়ি, কাউখালী, নানিয়ারচর ও সদর উপজেলার নিন্মাঞ্চল পানির নীচে তলিয়ে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ জলবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

অভ্যন্তরীন বেশ কয়েকটি সড়কে পাহাড় ধস, রাস্তা ভেঙ্গে এবং ঢলের পানিতে তলিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও প্রবল বর্ষণের ফলে ঘাগড়া-বড়ইছড়ি-বান্দরবান এবং রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের ২১টি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের কেঙ্গেলছড়ি এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। টানাবৃষ্টিপাতের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা।

বাঘাইছড়ি উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাঁচালং নদীর পানি বেড়ে বাঘাইছড়ি পৌরসভার ও আট ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরিন আক্তার জানিয়েছেন, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলা। ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে তিন হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হতে থাকায় এলাকাবাসী আশ্রয় কেন্দ্রমুখী হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকালে নানিয়ারচর উপজেলায় বুড়িঘাট ইউনিয়নের কুকুর মারা এলাকায় চেঙ্গী নদীতে ঢলের স্রোতে ভেসে শ্রেষ্ঠ চাকমা (৩) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নানিয়ারচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আরাফাত হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জেলার কাউখালী উপজেলার ইছামতি ও কাউখালী খালের পানি বেড়ে ডুবে গেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২০টি ঘর। সড়কে পানি থাকায় রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি আন্তঃজেলা যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সদর উপজেলাধীন সাপছড়ি ইউনিয়ন, মানিকছড়িসহ কয়েকটি পাহাড়ী এলাকায় পানি বেড়ে মানুষের ঘরবাড়ীতে ঢুকে পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিভিন্ন ফসলী জমি।
জেলার লংগদু উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া কাচালং নদীর শাখা নদীসহ পাহাড়ী ঢলের কারনে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে উপজেলার কয়েকশত পরিবার। অনেকেই তাদের পরিবার নিয়ে পাহাড়ের উচু স্থানে অবস্থান নিয়েছে, বন্যার কারনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

লংগদু উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন মাহমুদ জানান, পাহাড়ী ঢলে মাইনী নদীর পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার বেশকিছু অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র।

গত কয়েকদিনে রাঙামাটির সাজেকে আটকে পড়েছে অন্তত আড়াইশো পর্যটক। কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে জেলার একমাত্র সিম্বল ঝুলন্ত সেতুতে পানি উঠায় পর্যটক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পর্যটন কর্তৃপক্ষ। রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে ঝুলন্ত সেতু ডুবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় পর্যটকদের জন্য আজ শুক্রবার সকাল থেকে সেতু পারাপারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারি বৃষ্টিপাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় পুরো রাঙামাটি জেলায় মোট ২৬২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানিয়েছেন, অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাসে রাঙামাটিতেও পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসাবসকারীদের ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যেতে শহর জুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে।

জেলার সার্বিক দুর্যোগ ও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, জেলার বাঘাইছড়ি, কাউখালী, লংগদুসহ কয়েকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রাঙামাটি সদরে পাহাড়ধসের ঝুঁকি থাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকলকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার শহর এলাকায় ৭৫টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ পুরো জেলায় সর্বমোট ২৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি হু-হু করে বাড়তে থাকায় নিন্মাঞ্চলে বসবাসরতদের মানুষজনের মাঝে চরম উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। হ্রদে পানি বেড়ে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতার কাছাকাছি পৌঁছেছে। কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদনও বেড়েছে। কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের বলেন, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত হ্রদে পানির উচ্চতা রয়েছে ১০৬.০৬ ফুট এমএসএল। যা বৃহস্পতিবার ছিল ১০৫.৮৪ ফুট এমএসএল।

তিনি জানান, কাপ্তাই হ্রদে সর্বোচ্চ পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রতি সেকেন্ডে ৩০ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। আর সাধারণত পানির উচ্চতা ১০৮ এর বেশি হলে তখন আমরা গেইটগুলো খুলে দিয়ে থাকি। আগাম সতর্কতা ছাড়াই হ্রদের গেইটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে তথ্য ছড়িয়েছে এটাকে গুজব বলে উড়িয়েও দিয়ে তিনি বলেন, কাপ্তাই বাঁধের গেইটগুলো খুলে দেওয়ার আগে সবসময়ই আমরা কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীকে চিঠি দিয়ে অবহিত করি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধরনের গুজব ছড়ানো মোটেও উচিত হচ্ছেনা বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট্য দূর্যোগময় এলাকাগুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনপ্রতিনিধিরা বহিস্কার, পলাতক থাকায় এবং প্রশাসনিক গতিশীলতার কচ্ছপগতির কারনে সরকারী সহায়তা সঠিক সময়ে পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছে দূর্গতরা।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *