শিরোনাম

মেয়রের বাড়িতে আগুনে দগ্ধ স্কুলছাত্র, ২৭ দিন পর ঢামেকে মৃত্যু

Views: 35

বরিশাল অফিস :: আগুনে দগ্ধ হয়ে ২৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বরগুনার আমতলীর এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গত ৫ আগস্ট আমতলী পৌরসভার মেয়রের বাড়িতে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয় সে।

নিহত স্কুলছাত্রের নাম ইহতাশিমুল হক তেশাম (১৭)। সে আমতলী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

সে পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাড়ি সড়কে মা ইল্লিন বেগম ও ভাইদের সঙ্গে থাকত। বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় তার বাবা রবিউল ইসলাম খুলনায় থাকেন। আজ সোমবার সকালে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি আমতলী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার সড়কের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর আমতলী পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমানের বাসায় আগুন দেয় একদল দুর্বৃত্ত। আগুনের খবর পেয়ে সেখানে নেভাতে গিয়ে ইহতাশিমুল আটকা পড়ে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা সে মেয়রের বাসায় আটকা ছিল। পরে স্থানীয় ও স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। চার ঘণ্টা ওই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে সে চিকিৎসাধীন ছিল।

ছেলেকে হারিয়ে মা ইল্লিন বেগম ও ছোট দুই ভাই শেখ মো. আসাদুল্লাহ রায়হান ও শেখ হোসাইন আহম্মেদ ত্বোহা বাকরুদ্ধ হয়ে পরেছে। তার মেজ ভাই রায়হান আমতলী টেকনিক্যাল স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র ও ছোট ভাই ওয়াবদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণিতে পড়ে।

গতকাল রোববার বিকেলে ইহতাশিমুল তেশামের প্রথম জানাজার নামাজ ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন রাতে তেশামের মরদেহ গ্রামের বাড়ি আমতলী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার সড়কের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আজ সোমবার সকালে তার দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ইহতাশিমুল হক তেশাম লেখাপড়ার পাশাপাশি ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করত। তার আয় দিয়েই চলত মা ও তিন ভাইয়ের সংসার। তেশামের মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবার।

মেজ ভাই শেখ মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘আমার ভাইকে দুর্বৃত্তরা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এ হত্যার বিচার আল্লাহ করবেন।’

প্রতিবন্ধী মা ইল্লিন বেগম কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, ‘মোর আর কিছুই রইল না। ক্যারে লইয়্যা মুই বাঁচমু। মোর পোলায় ল্যাহাপড়ার পর বিদ্যুতের কাম হরতো। তার আয় দিয়েই মোর সংসার চালত। এ্যাহন কি অইবে মুই কইতে পারি না?’

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। ওই স্কুলছাত্রের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *