পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: বর্ষার মৌসুমে বুড়াগৌরাঙ্গ, আগুনমুখা ও রামনাবাদ নদী উত্তাল থাকে। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার জনসাধারণ উত্তাল নদী দিয়ে গলাচিপার পাশের উপজেলায় দৈনিক শত শত লোক আসা-যাওয়া করে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পীড বোটে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই, বেশিরভাগ যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট পড়তে অনীহা, লাইফ জ্যাকেটের সঙ্কট, লোক গাদাগাদিসহ জনপ্রতি ১৫০ টাকা আদায় করার অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
শিশু কিশোর ,বৃদ্ধ নানা বয়সের যাত্রীদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে এ রুটে চলাচল করতে হয়। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারি ও অক্টোবরে এ রুটে স্পীড বোটের দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে সাতজন মারা যায়।
সূত্র জানায়, গলাচিপা উপজেলার বোয়ালীয়া টু কোড়ালিয়া যাত্রীরা পায়রাবন্দর সংলগ্ন আগুনমুখা নদী, গলাচিপা টু রাঙ্গাবালী রামনাবাদ ও আগুনমুখা নদী দিয়ে ও বদনাতলী টু চরকাজল লঞ্চ ঘাট বুড়াগৌরাঙ্গ নদী দিয়ে স্পীড বোটের মাধ্যমে যাত্রীরা যাতায়াত করে। রুটগুলোতে ট্রলার ও লঞ্চে যাত্রীরা নদী পার হলেও সময় বাঁচানোর জন্য স্পীড বোটে বেশি যাতায়াত করে। বর্তমানে এসব নদীতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢেউয়ের আচর থাকে। তবে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রশাসনের নির্দেশনা থাকলেও সতর্কতা মানছে না চালক, ঘাট কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীরা।
রুট পারমিট কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, গলাচিপার বোয়ালীয়া টু কোড়ালিয়ার ঘাটে নিয়ম বর্হিভূতভাবে বিআইডব্লিউটিএ ৩৬ খানা স্পীড বোড দিয়েছে অথচ সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ খানা স্পীড বোট চলতে পারে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কোড়ালিয়া থেকে গলাচিপায় ফেরার সময় আগুনমুখা নদীতে দুই স্পীড বোটের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে হারুন হাং ও আউয়ুব হাং নামের দুই ব্যক্তি নিখোঁজ হয়। ঘটনার চার দিন পর গলাচিপার পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় হারুন হাওলাদারের (৩২) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, হারুন হাওলাদার দক্ষিণ পানপট্টি এলাকার শাহজাহান হাওলাদারের ছেলে। তিনি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালক ছিলেন। দুর্ঘটনার দিন হারুন মোটরসাইকেল কিনতে রাঙ্গাবালীতে গিয়েছিল। পরে আগুনমুখা নদী থেকে আউয়ুব হাংয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি একজন ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন।
অন্য একটি ঘটনায় ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার আগুনমুখা নদীতে স্পিডবোট ডুবির ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর নিখোঁজ পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করেছিল আগুনমুখা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে কোস্টগার্ড ও স্থানীয়রা।
তারা হলেন, রাঙ্গাবালী থানার পুলিশ কনস্টেবল মো: মহিবুল হক (৫৭), বাহেরচর শাখা কৃষি ব্যাংকের পরিদর্শক মো: মোস্তাফিজুর রহমান (৩৫), আশা ব্যাংকের খালগোড়া শাখার লোন অফিসার কবির হোসেন (৩১), এলজিইডির রাস্তার কাজে আসা শ্রমিক মো: হাসান মিয়া (৩০) ও মো: ইমরান (৩২)।
আরো জানা গেছে, দুর্ঘটনার দিন নদী বন্দরে ২ নম্বর ও সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত জারি ছিল। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দুর্যোগপূর্ণ এ আবহাওয়ার মধ্যে ১৮ জন যাত্রী নিয়ে রুমেন-১ নামের স্পীডবোটটি কোড়ালীয়া থেকে পানপট্টির উদ্দ্যেশ্যে ছেড়ে যায়। মাঝপথে আগুনমুখা নদীর ঢেউয়ের আঘাতে স্পীডবোট উল্টে গেলে যাত্রীরা নদীতে পড়ে যায়। এ সময় সাঁতার কেটে ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় চালকসহ ১৩ জন জীবিত উদ্ধার করা হলেও বাকি পাঁচজন নিখোঁজ হয়।
এ ব্যাপারে এ এলাকার কোস্টগার্ডের কন্ডিজেন্ট কমান্ডার মো: আলমগীর জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, অতিরিক্ত বোঝাই এবং লাইফ জ্যাকেট পড়া অনিহাসহ ঝুঁকি নিয়ে স্পীড বোট যাতায়ত করে। তবে সচেতন করার জন্য যাত্রী ও রুট কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, বিষয়টি দেখতেছি।