শিরোনাম

ভোলায় ছোট্ট জিহাদের কাঁধে পরিবারের বোঝা!

Views: 44

বরিশাল অফিস  :: মো. জিহাদ। বয়স ১২ কিংবা ১৩। বয়সের হিসেবে সে এখনো শিশু। তার বয়সের অন্য শিশুরা রোজ বই-খাতা নিয়ে যায় স্কুল-মাদরাসায়। থাকে বাবা-মায়ের পরম যত্নে। তবে ছোট্ট জিহাদ এই বয়সেই ভীষণ দায়িত্বশীল। বয়সের হিসেবে এই বয়সে তারও থাকার কথা ছিল স্কুল বা মাদরাসায়। জিহাদও গিয়েছিল মাদরাসায়। হাফেজি পড়তো সে। তবে তা আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী বাবার অসুস্থতার কারণে তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে পড়ালেখা। বাবার অসুস্থতার কারণে এখন ছোট্ট জিহাদের পুরো পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে। জিহাদের পরিবারে রয়েছে- অসুস্থ বাবা, মা এবং ছোট এক ভাই।

ভোলার লালমোহন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মধুছন্দা সিনেমা হল সংলগ্ন একটি ভাড়া বাসায় গত দেড় বছরের মতো সময় ধরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকে মো. জিহাদ। তবে তার মূল ঠিকানা উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাজার এলাকার ধনগাজী সরদার বাড়ি। জিহাদ ওই বাড়ির মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

জিহাদ জানায়, গত ৩ বছরেরও অধিক সময় ধরে আমার বাবা অসুস্থ। তিনি কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই মা মানুষের বাসায় কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। আমিও পড়ালেখা করতাম। তবে সংসারে অভাবের কারণে আর পড়তে পারিনি। যার জন্য গত এক বছর আগ থেকে শুরু করি ভাঙারি মালামাল সংগ্রহ ও কেনার কাজ। প্রতিদিন সকালে একটি ভ্যানগাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের কাছ থেকে পুরনো ভাঙারি মালামাল কিনি, একই সঙ্গে নিজেই আবার মানুষের ফেলে দেওয়া অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করি। এরপর ওইসব মালামাল বিকেলে আড়তে নিয়ে বিক্রি করি। এতে করে দৈনিক এক হাজার থেকে ১২ শ টাকার ভাঙারি মালামাল বিক্রি করতে পারি। সেখান থেকে লাভ হিসেবে থাকে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকার মতো। লাভের এই টাকা থেকে নিজের জন্য কিছু রেখে বাকি টাকা বাবাকে দিই। ওই টাকা দিয়ে তিনিই সংসার চালান। এ কাজ করতে অনেক কষ্ট হয়। তবুও নিরুপায় হয়ে এ কাজ করছি। মাঝে মাঝে সময় পেলে ছোট ভাইও আমার সঙ্গে বের হয়। সে আমাকে মালামাল গোছাতে সাহায্য করে।

জিহাদের বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি ৩ বছরেরও অধিক সময় ধরে অসুস্থ। হঠাৎ হঠাৎই মাথার ভেতর প্রচণ্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। এজন্য ঠিকমতো কোনো কাজ করতে পারি না। যার জন্য স্থানীয় অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। তবে কোনো প্রতিকার পাইনি। টাকার অভাবে বিশেষজ্ঞ কোনো ডাক্তারও দেখাতে পারছি না। তাই বাসায় শুয়ে-বসেই থাকি। এমন পরিস্থিতে বাধ্য হয়ে আমার ছেলেটা এখন ভাঙারি মালামাল সংগ্রহ এবং কেনার কাজ করছে। আগে এই কাজ আমি নিজেই করতাম। এখন ছেলে করছে সে কাজ, আর ওর মা বিভিন্ন মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। ছেলে আর তার মায়ের সামান্য আয় দিয়েই এখন সংসারটা কোনো রকমে চলছে।

তিনি আরো বলেন, জিহাদের ছোট আমার আরেক ছেলে রয়েছে। সন্তানদের মধ্যে সবার বড় ছিল মেয়ে। তাকে ধারদেনা করে বিয়ে দিয়েছি। তবে এখন যে দুই ছেলে রয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তাই ভাবতে পারছি না। আমার নিজস্ব তেমন কোনো সম্পদও নেই। গরিবদের জন্য তো সরকারি অনেক সাহায্য-সহযোগিতা রয়েছে। আমার অবস্থা বিবেচনা করে সেখান থেকে কোনো একটি সহযোগিতা দিলে আমার জন্য খুবই ভালো হতো। বিশেষ করে চালের ব্যবস্থা করা হলে, মাস শেষে অন্তত চাল কেনার চিন্তাটা দূর হতো।

লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, জিহাদের পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *