চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: বাধ্যতামূলক হিজাব বা হেড স্কার্ফ পরার বিষয়ে ইরানে নারীদের আর ‘বিরক্ত’ করবে না নৈতিকতা পুলিশ। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান একথা জানিয়েছেন।
কঠোর পোশাক নীতি ভঙ্গ করার জন্য নারীদের এখনও সহিংস শাস্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করার কয়েকদিন পর তিনি এই ঘোষণা দিলেন। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর দ্বিতীয় বার্ষিকীতে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের এই মন্তব্য সামনে এসেছে।
সঠিকভাবে হিজাব না পরার অভিযোগে ইরানি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল এবং পরে তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনা দেশব্যাপী প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছিল।
জাতিসংঘ গত সপ্তাহে বলেছে, ইরানের সরকার সেই সময় থেকেই নারীদের অধিকারকে দমন করতে এবং প্রতিবাদ-বিক্ষোভের শেষ নিদর্শনকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য ‘তীব্র প্রচেষ্টা’ চালিয়েছে।
কিন্তু সোমবার প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, ইরানের নৈতিকতা পুলিশের আর রাস্তায় নারীদের মুখোমুখি হওয়া উচিত নয়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পরে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পেজেশকিয়ান। তাকে একজন সম্ভাব্য সংস্কারবাদী নেতা হিসাবে দেখা হয়।
বিবিসি বলছে, ইরানের একজন নারী প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ান সময় পেজেশকিয়ান এসব কথা বলেন। তিনি (নারী প্রতিবেদক) বলেন, পুলিশ ভ্যান এড়িয়ে সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পথ ঘুরেছেন। তিনি তার মাথার স্কার্ফ পরা ছিলেন এবং তার কিছু চুলও দেখা যাচ্ছিল।
পেজেশকিয়ান যখন জিজ্ঞাসা করেন, পুলিশ এখনও রাস্তায় আছে কিনা। তখন ওই নারী প্রতিবেদক নিশ্চিত করেন— তারা এখনও রাস্তায় রয়েছে। জবাবে তিনি বলেন: ‘নৈতিকতা পুলিশের (নারীদের) মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল না। আমি বিষয়টি দেখব, যাতে তারা (নারীদের) বিরক্ত না করে’।
প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের এই মন্তব্যগুলো ইরানের প্রধান রাষ্ট্রীয় টিভি নেটওয়ার্কগুলোতেও সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। পরে নারী সাংবাদিকের সঙ্গে তার কথোপকথনের ক্লিপটি অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়।
অতিরক্ষণশীল ইব্রাহিম রাইসির স্থলাভিষিক্ত হয়ে জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল পেজেশকিয়ানের প্রথম সংবাদ সম্মেলন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বাধ্যতামূলক হিজাব পরার বিষয়ে পুলিশ টহলের বিরোধিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তিনি দেশের দীর্ঘস্থায়ী ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধও শিথিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মূলত ২০২২ সালে নারীদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর ইরান সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নজরদারি বাড়িয়েছিল।