পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: নিলুফা বেগম (৫৫)। তার স্বামী ২০ বছর আগে সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে চলে গেছেন। তার অবর্তমানে ছেলে শাফিনকে নিয়ে বিপাকে পরে যান মা নিলুফা। ছেলে শাফিন লেখাপড়ায় ভালো হওয়ায় অনেক আশা ছিল তার। ছেলের পড়াশুনার খরচ মেটাতে নিলুফা বেগম বাধ্য হয়ে অন্যের বাসায় কাজ করেন। তার স্বপ্ন ছেলে বড় হয়ে চাকরি করলে সব দুঃখ-কষ্ট শেষ হয়ে যাবে। ২০১৫ সাল থেকে হঠাৎ অজানা কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে শাফিন। তার মা বিভিন্ন মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ডাক্তার দেখালে শাফিন মানসিক ভারসাম্য কিছুটা ঠিক হলে আবারও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
অন্যদিকে, তার মা নিলুফা বেগমের এখন মেরুদন্ড ও পায়ের হাড়ে ক্ষয় রোগ হয়েছে। যার কারণে এখন আর তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করতে পারেন না। সোজা হয়ে ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারে না নিলুফা। মানুষের ধারে ধারে হাত পেতে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে কোনোরকম দিন পার করছে মা-ছেলে।
নিলুফা বেগম পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের হাওলাদার বাড়ির বাসিন্দা।
সরেজমিনে নিলুফা বেগমের বাড়িতে দেখা যায়, মাথা গোজার জন্য পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে পাওয়া একমাত্র টিন দিয়ে বানানো ছোট ঘরে দুই মা-ছেলে বসবাস করেন। এছাড়া, তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য নেই কোনো রাস্তা, যেতে হয় কাদা-মাটি পার হয়ে।
নিলুফা বেগম বলেন, ‘আমার অনেক আশা আছিলো। সবাই বলছে ও রেজাল্ট ভালো করে ওরে (শাফিন) পড়াও। আমি কষ্ট কইরা, কাজ কইরা ছেলেরে পড়াইছি। আইএ পাশ করছে। এ প্লাস পাইছে। ঢাকা দিছিলাম এরপর ব্রেন্টে সমস্যা হইছি। দেশের বাড়িতে আনার পর ডাক্তার দেখাইছি ফকির দেখাইছি। দেখানোর পর কিছু বুঝি নাহ। ছেলের বন্ধুরা টাকা পয়সা দিছে হেইয়া দিয়া মানসিক হাসপাতালে ডাক্তার দেখাইছি। এহন ঔষধ চলে পুরাটা ঠিক হয় নাই। এহন ওই আল্লাহ উপর ভরসা।’
কান্নাজড়িত কন্ঠে নিলুফা বেগম আরও বলেন, ‘আমি এহন কি করমু? মানষের কাজ করছি, এহন মেরুদন্ড সমস্যা হইছে। ডাক্তারে বলছে আপনি কোনো কাজ করতে পারবেনা, ভাড়ি জিনিস লইতে পারবেন নাহ। এহন কি কইরা চলমু আমার তো কোনো লোহা লক্কর নাই। আমার কোনো অর্থ সম্পদ নাই, কিচ্ছু নাই একমাত্র মালিক ছাড়া।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাবার কাছে যৌতুক চেয়েছিলো আমার স্বামী, যৌতুক না দেওয়ায় আমাকে ডিভোর্স এর কাগজ দিয়া চইল্লা গেছে। আমি এই ছেলে (শাফিন) লইয়া হাবুডুবু করছি। সে বিয়া করছে, আমি বিয়া করি নাই। আমি আল্লাহরে ভাইব্বা এই ছেলে দেইখা রইছি। সে ছেলের কোনো খোঁজ খবর নেয় না, ছেলেকে পাত্তা দেয় নাহ। কোনো খরচও দিতে চায় না।’
মানসিক ভারসাম্যহীন শাফিনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তখন তিনি অদ্ভুত কিছু কথা বলেন। এছাড়া কিছুতেই যেন কথা ঘুছিয়ে বলতে পারছিলেন নাহ শাফিন।
এলাকাবাসীরা জানান, নিলুফা বেগম খুবই অসহায়। অনেক আগেই তার স্বামী চলে গেছে। খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। তার ছেলে শাফিনের দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন সমস্যা। ওর মা অনেক ট্রিট মেন্ট করছে, বর্তমানে এখন যে ট্রিটমেন্ট করবে এজন্য কোনো টাকা পয়সা নাই। বৃত্তবানদের এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন স্থানীয়রা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নাই, আমি খোঁজ খবর নিবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’