এখন প্রশ্ন হলো বামপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ায় ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
শ্রীলঙ্কার বিদেশ নীতিতে ভারতের অবস্থান
রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে, অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই তালিকায় আছে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট, দুর্নীতি ও জাতিগত উত্তেজনার মতো অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ। এর পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার বিদেশ নীতিকে তিনি কোন দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন ও তার নিরিখে ভারতের সঙ্গে সে দেশের সম্পর্কই বা কোন পথে যাবে সেটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
মতাদর্শের দিক থেকে ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি ডানপন্থি। অন্যদিকে, অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে বামপন্থি আদর্শের নেতা। সাধারণত বামপন্থি সরকারকে মতাদর্শগতভাবে চীন ঘনিষ্ঠ হিসেবে ধরা হয়। এই পরিস্থিতিতে দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়াবেন?
অধ্যাপক হর্ষ ভি পন্থ দিল্লির ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্টাডিজ অ্যান্ড ফরেন পলিসি’ বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান। তার মতে দিসানায়েকে ও জেভিপি (জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা) অতীতে কিছুটা ‘ভারত-বিরোধী’ ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই নীতিতে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে।
অধ্যাপক পন্থ বলছেন, “তার দল জেভিপি ঐতিহ্যগতভাবে ভারত বিরোধী। শুরু থেকেই তারা সে দেশে ভারতের প্রভাবের বিরুদ্ধে। ইতিহাস ঘাটলে আপনি দেখতে পাবেন ওরা বহুবার ভারতের বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিবাদ করেছে।”
অধ্যাপক পন্থ বলছেন, “শ্রীলঙ্কায় ভারতের প্রভাব কমানোর বিষয়টা বরাবরই দিশানায়েকের কাছে একটা বড় এজেন্ডা। তবে, আমার মনে হয় সাম্প্রতিক বছরে দিশানায়েকের বক্তব্য কিছুটা ভারসাম্যপূর্ণ এবং চিন্তাশীল হয়েছে। তিনি সুশাসন, ভারসাম্য ও জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির ওপর গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন।”
‘এই বিষয়টা তার সরকারের নজরে থাকবে বলে আমার মনে হয়। বিশেষত আইএমএফের (ইন্টারন্যাশানাল মানিটারি ফান্ড বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল)-এর প্যাকেজের পরবর্তী প্রভাব ও সমাজে তার ফল সে কথা কথা মাথায় রেখে। এসব ইস্যুই কিন্তু নির্বাচনে তার জয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
অধ্যাপক পন্থ জানিয়েছেন, ২০২২ সালে মহিন্দা রাজাপাকসার সরকার যেভাবে পড়ে গিয়েছিল এবং রনিল বিক্রমাসিংহে ক্ষমতায় এসেছিলেন, সেই সময় শ্রীলঙ্কাকে যেভাবে সাহায্য করেছিল ভারত সেকথা মাথায় রেখেই নতুন সরকারকে কাজ করতে হবে।
চেন্নাইয়ের লয়োলা কলেজের অধ্যাপক গ্ল্যাডসন জেভিয়ার বলেন, ভারতের করা আর্থিক সহায়তার কথা নতুন প্রেসিডেন্ট স্মরণে রাখবেন। কিছু ভারতীয় প্রজেক্টের সমালোচনা করেছেন তিনি (অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে)। কিন্তু তিনি কখনো চীনের সমালোচনা করেননি। তাই ধরে নেওয়া যায় যে তার মধ্যে এক ধরনের পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।
‘তবে শ্রীলঙ্কা এখনো অর্থনৈতিক সঙ্কটে রয়েছে। তাদের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন কিন্তু এখনও অব্যাহত থাকবে। যখন শ্রীলঙ্কায় গভীর অর্থনৈতিক সংকট দেখা গিয়েছিল তখন ভারত তৎক্ষণিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। আমি মনে করি, নতুন প্রেসিডেন্ট এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন। আমার মনে হয় না, তিনি ভারতকে বের করে দিয়ে ওই দেশেকে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলবেন।’
জাফনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহিলন কাদিরগামার অবশ্য ভিন্ন মত পোষণ করেন। তার মতে, এই মুহূর্তে জেভিপি কোনো দেশের সঙ্গে খুব নৈকট্য যেমন রাখবে না, তেমনই খুব দূরত্বও তৈরি করবে না।
বিবিসি তামিল সার্ভিসের সংবাদদাতা মুরলীধরন কাশী বিশ্বনাথনের সঙ্গে কথোপকথনের সময় তিনি বলছেন, বিষয়টা হলো জনতা বিমুক্তি পেরামুনার কিন্তু সেই পুরনো জেভিপি নেই। এটা একটা মধ্যপন্থি দলে পরিণত হয়েছে। তবে রনিল বিক্রমাসিংহের মতো তিনি ভারতের পক্ষে অতটা অনুকূল হবেন কি না তা বলা সম্ভব নয়। আমি মনে করি, কোনো দেশের সঙ্গে তিনি খুব ঘনিষ্ঠ বা বৈরী হবেন না। তিনি বুঝবেন এখন কঠোর অবস্থান নেওয়ার সময় নয়।