চন্দ্রদ্বীপ নিউজ :: প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসনিা শুধু বাংলাদেশের জনগণ থেকে নয়, নিজ দলের নেতাকর্মীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক। আজ শনিবার নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের রাজনীতি করেছিল, তার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, প্রতিশোধের রাজনীতি। সে প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে। এই দেশটাকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করতে যা যা করা লাগে তিনি সব করেছেন। শেখ হাসিনা শুধু এই দেশের মানুষের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তিনি তার দল আওয়ামী লীগ থেকেও প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘স্বৈরশাসক হুসেই মুহম্মদ এরশাদ গ্রেপ্তার হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের ছেড়ে পালিয়ে যাননি। বেগম খালেদা জিয়া একাধিকবার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, কিন্তু তিনিও দেশ ছেড়ে পালাননি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও তিনি বছরের পর বছর অসুস্থ অবস্থায় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘ইতিহাস প্রমাণ করে, যে দেশের মানুষ হাসিমুখে প্রাণ দিতে জানে, যারা নিজেরা বাঁচতে শিখে তাদেরকে কেউ মারতে পারে না, শেখ হাসিনাও মারতে পারে নাই। শেখ হাসিনাকে নিজের তল্পিতল্পাসহ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এই পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ঐতিহ্যবাহী এই দলটিকে সারা দেশের মানুষের সামনে কলঙ্কিত করে তুলেছে।’
মামুনুল হক বলেন, ‘শেখ হাসিনা জানত ১৫ আগস্ট তার বাবাকে হত্যা করার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। তিনি পঞ্চাশ বছর ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নাটক সাজিয়েছিলেন যেন আওয়ামী লীগ আর বাংলাদেশের কোনোদিন রাজনীতি করতে না পারে।’
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কাজেই আওয়ামী লীগে যদি কোনো রাজনীতিবিদ থেকে থাকেন, আপনাদের যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্র নিয়ে কোনো কাজ করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আপনাদেরকে আমি দুইটা পরামর্শ দেব। এক নম্বর পরামর্শ, আপনাদের বড় অপরাধ হয়েছে, এরকম একজন মানসিক বৈকল্যের স্বীকার মানুষকে এই জাতির ওপর আপনারা বছরের পর বছর চাপিয়ে রেখেছেন। এটা আপনাদের মস্তবড় অপরাধ হয়েছে। এই জন্য আপনাদের তওবা করা দরকার।’
মামুনুল হক বলেন, ‘আর একটা পরামর্শ থাকবে, এই নামটা পরিবর্তন করে ফেলেন। কারণ এই লীগ নামে যা কিছু হয় সবকিছুই আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়ে যায়। এত হত্যার দাগ নিয়ে, এত রক্তের দাগ নিয়ে এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের মানুষের সামনে আসতে পারবে না।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমরা আপনাদের সহযোগিতা করছি, এখনো করছি এবং ভবিষ্যতেও করব এ ধরনের ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। তবে সরকারকে আমাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। দেশের মানুষের প্রশ্নে, দেশের মানুষের স্বার্থের প্রশ্নে, দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, ইসলামের প্রশ্নে কারো চেহারা দিকে তাকিয়ে কথা বলার ফুরসত আমাদের নাই।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেত্রকোনা জেলা শাখার সভাপতি শাইখুল হাদীস আল্লামা জিয়া উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আবুল হাসনাত জালালী, সহবায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান প্রমুখ।