পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীতে নির্মিত কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভৌত কাঠামোসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম নির্মিত ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র’ থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে রাবনাবাদ নদীর তীরে একই সক্ষমতার নতুন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ হয়। কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রস্তুতি শেষ। গত জুনের মাঝামাঝি সময় বয়লারে ফায়ারিং করা হয়েছে। এখন শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার অপেক্ষা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে নবনির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলকভাবে অক্টোবরে আংশিক উৎপাদন শুরু হবে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বরগুনার আমতলীতে সুইচিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। সেই স্টেশনের টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজও শেষপর্যায়ে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) থেকে স্টার্টআপ পাওয়ার পাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। সংযোগ পেলেই পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে যাবে নবনির্মিত ১৩২০ মেগাওয়াটের এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, কেন্দ্রটি চালু করতে হলে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি বরিশালের উৎপাদন অন্তত ১০ দিন বন্ধ রাখতে হবে। ফলে পিজিসিবি থেকে স্টার্টআপ পাওয়ার আটকে আছে। সেপ্টেম্বর শেষে তাপমাত্রা কিছুটা কমলে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করে নতুন কেন্দ্রটি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
সবকিছু ঠিকভাবে চললে ডিসেম্বর নাগাদ প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণরূপে পুরোপুরি এই কেন্দ্রের ১৩২০ মেগাওয়াটই উৎপাদনে আসবে। এতে করে পটুয়াখালীর দু’টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দুই হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। তখন দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ২০ ভাগই পূরণ হবে এই দুথ’টি কেন্দ্র থেকে। এ কারণে দেশের বিদ্যুৎসঙ্কট অনেকটাই লাঘব হবে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক দ্বিতীয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার লিমিটেড বা আরপিসিএল এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন লিমিটেড যৌথভাবে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) কোম্পানি গঠিত হয়। এভাবে কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে দুই দেশের সমান অংশীদারত্বে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হয়।
আরএনপিএল সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া, ধানখালী ও লোন্দা মৌজার ৯১৫ একর জমি এই প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে ৫০০ একর জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবকাঠামো নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শেষ হয়েছে। কয়লা খালাসের জন্য জেটি, দু’টি ইউনিটের বয়লার, মেইন পাওয়ার হাউজ, টারবাইন, জেনারেটর হল প্রভৃতি ভৌত কাঠামোর কাজও শেষ হয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: আশরাফ উদ্দিন জানান, চলতি বছরের মে এবং আগস্টে ইন্দোনেশিয়া থেকে দুই দফায় ৫৫ হাজার টন কয়লা আমদানি করা হয়েছে। মজুদকৃত কয়লা দিয়ে এক মাস কেন্দ্রটি সচল রাখা যাবে। তা ছাড়া কেন্দ্রটি পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদনে যখন যাবে, ঠিক তখনই নতুন করে কয়লা আমদানি করা হবে।
তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ পিজিসিবি থেকে স্টার্টআপ পাওয়ার পেলে অক্টোবরে প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাবে। ডিথসেম্বথরে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। পর্যায়ক্রমে এ কেন্দ্র থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হথবে।’
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী আকতারুজ্জামান পলাশ জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আমতলী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি লাইনের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে।
এ ব্যাপারে তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রর প্রকল্প পরিচালক তৌফিক ইসলাম জানান, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রে পিজিসিবি থেকে স্টার্টআপ পাওয়ার পেতে হলে পায়রা প্ল্যান্ট এবং তালতলীতে আবস্থিত বরিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টির উৎপাদন অন্তত ১০দিন বন্ধ রাখতে হবে। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে।’