শিরোনাম

ঝালকাঠিতে শামুক ও ঝিনুক সংকটে চুন শিল্পীদের দুর্দিন

Views: 47

বরিশাল অফিস :: আতিথেয়তার অন্যতম উপকরণ পান, সুপারি ও চুনের আপ্যায়ন। সব ধরনের আপ্যায়ন শেষে পান দিয়ে আপ্যায়ন করাতে ভুল হয় না কোনো অনুষ্ঠান বা পারিবারিক সামাজিকতায়। রুচি অনুযায়ী পান, সুপারি ও চুনের সংমিশ্রণের সঙ্গে জর্দা যুক্ত করে থাকেন পান বিলাসীরা।

ঝালকাঠি শহরের পশ্চিম চাঁদকাঠি (বাসন্ডা ব্রিজ সংলগ্ন) এলাকায় শামুক ও ঝিনুক দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে চুন তৈরি করতেন কারিগররা। তাদের কর্মযজ্ঞ ও নান্দনিকতা দেখলে শৈল্পিক দিকটিও ফুটে ওঠে।

এ জন্যই চুন তৈরির সব প্রক্রিয়া মিলে চুনকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও অবাধে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের ফলে প্রজনন তো দূরের কথা, জীবনধারণই বিপন্ন হচ্ছে শামুক ও ঝিনুকের। বংশ বিস্তার না হওয়ার ফলে সামুদ্রিক শামুক-ঝিনুকের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে চুন শিল্পীদের। অতিরিক্ত মূল্য, পরিবহন খরচ, মধ্যস্বত্বভোগীসহ কয়েকহাত ঘুরে চুন তৈরির কারিগরদের কাছে এসে কাঁচামাল পৌঁছে।

কারিগরদের পারিশ্রমিক ও প্রক্রিয়াজাতকরণসহ যে পরিমাণ খরচ হয় সেভাবে বিক্রয় মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাই পৈতৃক পেশা টিকিয়ে রেখে কোনোমতে জীবনযাপন করছে চুনারুরা।

প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি করা চুনের কদর আজও রয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে। ঝালকাঠি শহরের পালবাড়ী ও বাউকাঠি এলাকার কিছু পরিবার কারিগরদের নিয়ে আজও ধরে রেখেছে এ পেশা। চুনারুদের নানা অভাব অনটনের মাঝেও প্রায় ২০টি পরিবার এখনও এ পেশায় টিকে আছে।

কারিগররা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কৃষি জমিতে কীটনাশক ব্যবহারে শামুক ও ঝিনুক কমে গেছে। কাঁচামালেরও দাম বেড়েছে। তাই লোকসানের মুখে এ পেশা ছেড়েছেন অনেকে। যারাও টিকে আছেন তারাও কোনো রকমে এ পেশা চালাচ্ছেন। এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন জড়িত চুনারুদের কয়েকজন।

চুন শিল্প টিকিয়ে রাখতে চুনারুদের সার্বিক সহযোগিতার কথা জানালেন শিল্পনগরী (বিসিক) ঝালকাঠির কর্মকর্তা আল আমিন। তিনি বলেন, চুন তৈরির কারিগররা নিয়মানুযায়ী আমাদের কাছে এলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে পারি।

চুন শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিষ্ণু পদ ধর বলেন, আগে গ্রামের খাল, বিল ও নদীর পাড়ে এবং বর্ষাকালে ধানের মাঠে শামুক ও ঝিনুক কুড়িয়ে পাওয়া যেত।

এখন ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ, অবাধে অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ শামুক ও ঝিনুক অস্তিত্ব হারাচ্ছে।

এসব কারণে গ্রামীণ পর্যায় থেকে শামুক ও ঝিনুক আসা বন্ধ রয়েছে। আমাদের এখন শামুক ও ঝিনুক আনতে হচ্ছে সাগরকূল থেকে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে পণ্য সরবরাহের খরচও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপর প্রক্রিয়াজাত করে চুন তৈরি করতে যে সময় বা শ্রম ব্যয় হয় তাতে এ পেশায় টিকে থাকা খুবই মুশকিল। সব মিলিয়ে শুধু পূর্বপুরুষের পেশাটাকেই ধরে রেখেছি। নইলে এতদিনে সব বন্ধ করে অন্য পেশা বা ব্যবসায় চলে যেতাম।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *