স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কথায়ও সেই আভাস মিলেছে। গতকাল আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনো যোগদান করেননি তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যারা চাকরিতে ফিরতে পারবেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশনস) রেজাউল করিম বলেন, ফৌজদারি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি পুলিশ সদস্যদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের অনুমতি রয়েছে। যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে।
কর্মে না ফেরা পলাতক তালিকার শীর্ষে হারুন
পুলিশের পলাতক কর্মকর্তাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ৩৮ মামলার আসামি ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। তাকে এখনো চাকরিচ্যুত করা হয়নি। পলাতক হিসেবে হারুনকে পুলিশ সদর দপ্তরের তালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
নিরাপত্তার অজুহাতে আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি কার্যালয়ে আটকে রাখার ঘটনায় বেশি সমালোচনায় পড়েন হারুন। ৫ আগস্টের পর তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি।
তার বিরুদ্ধে ২০১১ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুককে নির্যাতনের অকাট্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পুনর্বাসন ও পদোন্নতি দিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ১৩ বছর পর গত ১৯ আগস্ট হারুনের বিরুদ্ধে ডিএমপির শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন বিএনপি নেতা ফারুক।
বিপ্লব কোথায়?
গত ১২ সেপ্টেম্বরে গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে- লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে চলে গেছেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। দাবি করা হয়, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে কোনো এক সময় তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। পাচারকারীদের এসংক্রান্ত কয়েকটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্ত পার হওয়ার জন্য বিপ্লব কুমারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেওয়া হয় বলেও জানা যায়।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের এসবি প্রধান মো. শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুলিশের দুই সাবেক কর্মকর্তা ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কোনো কর্মকর্তা ইমিগ্রেশন ক্রস করেননি। আমি মনে করি তারা দেশেই আছেন। তবে কোথায় আছেন সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করব না।’
দেশ ছাড়তে ব্যর্থ গোলাম ফারুক :
গত ২০ আগস্ট ব্যাঙ্ককের উদ্দেশে রওনা হওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান ডিএমপির সাবেক কমিশনার গোলাম ফারুক। ডিবিকে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানানো হলে তার দেশ ত্যাগের বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। পরে অবশ্য তিনি বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফিরে যান। খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।
কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া ১৮৭ সদস্যের যে তালিকা পুলিশ সদর দপ্তর দিয়েছে, এর মধ্যে ডিআইজি থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ১৬ জন। পুলিশ পরিদর্শক আছেন পাঁচজন, উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তা আছেন ১৪ জন। অন্যদের মধ্যে এএসআই ৯ জন, নায়েক ৭ জন ও কনস্টেবল ১৩৬ জন।
কাজে যোগ না দেওয়া শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান (স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসরের আবেদন করেছেন), ডিএমপির সাবেক যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ডিবির সাবেক যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান, রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার উত্তম কুমার পাল এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
পুলিশ সুপার থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আত্মগোপনে থাকা ৮ কর্মকর্তা হলেন আরপিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, আরপিএমপি ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ নূর আলম, ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান ও ইফতেখার মাহমুদ(গ্রেপ্তার), আরপিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান ও আল ইমরান হোসেন এবং সিরাজগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার রানা।
পরিদর্শক পদে কর্মস্থলে যোগ না দেওয়া কর্মকর্তারা হলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানার সাবেক ওসি মাহফুজার রহমান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পরিদর্শক খাদেমুল বাহার বিন আবেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সার্কেলের পরিদর্শক ইউসুফ হাসান, ডিএমপির সাবেক পরিদর্শক জাকির হোসাইন ও ঢাকা জেলা পুলিশের পরিদর্শক আরাফাত হোসেন।
ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা যোগদান করেননি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের কাজ চলছে।’