পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: আর দিন সাতেক পর শুরু হবে ইলিশ শিকারের ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তার আগে এই ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না জেলেদের জালে। পটুয়াখালীর উপকূলীয় মৎস্য বন্দরগুলোতে ইলিশের জায়গা অন্য নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছে সয়লাব।
শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে উপকূলীয় বিভিন্ন মাছের বাজারে পোয়া, ডাডি, গাগরা, চিংড়ি, চন্দনা, ডেলা, তেলাপিয়া, ভাডা, চাউম্মা ও হিলালসহ ১৮-২০ প্রজাতির মাছ দেখা গেছে। এসব মাছই স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের নানা প্রান্তের মোকামে পাঠাচ্ছেন পাইকাররা।
জানা গেছে, আগামী ১৩ অক্টোবর শুরু হবে ইলিশ শিকারের ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তার আগে এই সময়ে ইলিশ ধরা না পড়ায় হতাশ জেলেরা। পটুয়াখালীর উপকূলীয় মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুর, কুয়াকাটা, আশাখালীসহ উপজেলার বিভিন্ন পাইকারি মাছের বাজারে দেখা নেই ইলিশের। দু-একটি বোট ইলিশ মাছ নিয়ে ঘাটে এলেও তা অতি নগণ্য।
মাছ বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে ইলিশ না আসায় সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে আমার ব্যবসা চলমান রয়েছে। যে সামান্য ইলিশের সরবরাহ রয়েছে, তা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।’
ইলিশ বেশি না থাকলেও ব্যবস্ততা কম নেই ব্যবসায়ীদের। স্থানীয় মাছ বাজারের রব্বানী ফিশের আড়তদার ও মৎস্য ব্যবসায়ী মো. রুবেল হাওলাদার বলেন, ‘ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় প্রায় ২৫ মণ মাছ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য প্যাকেট করা হয়েছে। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় এসব মাছের অনেক চাহিদা রয়েছে।’
বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাচের ব্যবসা সব সময় থাকলেও তাদের মূল ব্যবসা ইলিশ মাছ নিয়ে বলে জানান মেসার্স খান ফিশের ব্যবস্থাপক মো. রহিম খান। তিনি বলেন, ‘চলমান ইলিশ মৌসুম শেষ পর্যায়ে, তবুও দেখা নেই কাঙ্খিত ইলিশের। এর মধ্যে আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভিযান শুরু হবে। তখন বঙ্গোপসাগরে কোনো ধরনের মাছ ধরা যাবে না। এতে ব্যবসায়ী ও জেলেরা চিন্তিত।’
এই সময়ে ইলিশ না মেলার কারণ হিসেবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাজেদুল হক বলেন, প্রতিনিয়ত সমুদ্রদূষণ হচ্ছে, নদীর গতিবেগ পরিবর্তন হচ্ছে, পাশাপাশি ইলিশের খাদ্যাভ্যাসের কারণে তারা মাইগ্রেশন (চলাচল) করে, যে কারণে বড় ইলিশের দেখা মিলছে না।
অধ্যাপক ডা. সাজেদুল হক জানান, প্রতিবছর মা ইলিশ নিয়ে গবেষণা করেন তারা। কখন-কোথায় তারা ডিম দেয়, কোথায়-কখন বড় হয়। এর ওপর নির্ভর করে এ বছরও আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকছে।’
যেসব ছোট প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ বেশি ধরা পড়ছে সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে জানান অধ্যাপক সাজেদুল হক।
তিনি আরও বলেন, ‘এসব মাছ মাইগ্রেশন করে না। এরা উপকূলের কাছাকাছি থাকে বলে বেশি ধরা পড়ছে।