পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় এক ব্যবসায়ীর হোটেল দখলের চেষ্টা করছে স্থানীয় এক সন্ত্রাসী। মোটা অঙ্কের চাঁদার দাবিতে হোটেলের মালিককে দলবল নিয়ে অপহরণের পর নির্যাতনও করেছেন অভিযুক্ত জসিম শিকদার রানা।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ক্র্যাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের নিরাপত্তা এবং হামলা হুমকির বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী এম এ খায়ের মোল্লা।
ভুক্তভোগী জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের গত ৫ আগস্ট কলাপাড়া উপজেলার নবীনপুরে অবস্থিত ‘রোজ ভ্যালী মোটেল এন্ড রিসোর্ট’ দখলের চেষ্টা করে হামলা চালায় পটুয়াখালী সদর থানার লোহালিয়া এলাকার মো. জসিম শিকদার রানা ও তার ভাই কবির শিকদার। এক পর্যায়ে তারা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় হোটেলের ম্যানেজার রেজাউল করিম, তাজুল বেপারি ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি দেয়৷ তারা দলবল নিয়ে হোটেলে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং মালিক খায়ের মোল্লাসহ অন্যান্যদের মেরে সাগরে ভাসিয়ে দেবে মর্মে হুমকি দেয়।
অপহরণের পর খায়ের মোল্লাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে জসিম শিকদার ও তার বাহিনী
অপহরণের পর খায়ের মোল্লাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে জসিম শিকদার ও তার বাহিনী
খায়ের মোল্লা বলেন, এই ঘটনার পর থেকে তারা নানাভাবে আমাকে এবং ম্যানেজারসহ আমার স্টাফদেরকে হুমকি দিতে থাকে। এ ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতে মামলা করতে যাই। কিন্তু আদালত চত্ত্বর থেকে জসিম শিকদার, কবির শিকদার, সাঈদুর রহমান, মো. রনিসহ ২০/৪০ জনের একটি দল আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। জসিম শিকদারের নিজের ব্যবহৃত গাড়ীতে (ঢাকা মেট্রো-গ-২৩-৩০৩৮) করে লোহালিয়া ব্রিজ পার হয়ে কিছু দূরে বিলের মাঝে নির্জন এলাকায় নিয়ে বেধরক মারধোর করে। রাতভার আমাকে নির্যাতন করে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে একশ টাকা মূল্যের ১২টি ননজুডিশিয়াল স্টাম্পে আমার স্বাক্ষর নেয়। আমার সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের রাজধানীর বিজয়নগর শাখার একটি চেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়। এছাড়া তিনটি ব্লাঙ্ক কাগজে আমার সই নেয় জসিম শিকদারের সন্ত্রাসী বাহিনী। এমনকি তারা আমাকে নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে যেন আমি এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় না নেই সেজন্য হুমকি দেয়। আমি আইনের আশ্রয় নিলে নগ্ন ভিডিওর মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলার হুমকি দেয়। এরমধ্যে আমার ম্যানেজার সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে। এক পর্যায়ের সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যসূত্রে থানা পুলিশ আমাকে উদ্ধার অভিযানে নেমেছে জেনে পরেরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় লোহালিয়া ব্রিজের নিচে ফেলে যায়।
ভুক্তভোগী খায়ের মোল্লা বলেন, সন্ত্রাসীরা আমাকে ফেলে যাওয়ার পর পটুয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল আমাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করার কথা জানিয়ে খায়ের মোল্লা বলেন, পুলিশ আসামি জসিম শিকদারের ব্যবহৃত গাড়িটি ড্রাইভারসহ জব্দ করেছে। আসামিদের হুমকি-ধমকিতে প্রাণভয়ে আমি আইনের আশ্রয় নিতে চেয়েও পারিনি। প্রাণ ভয়ে আমার কোনো প্রতিনিধি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেনি। প্রায় একমাস চিকিৎসা নিয়ে এবং প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়িয়ে এক পর্যায়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমি পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা দায়ের করি। কিন্তু আসামি জসিম শিকদার এখনো আমাকে ফোন করে এবং হোটেলে লোক পাঠিয়ে আমার স্টাফদের হুমকি দিচ্ছে। আমি যদি হোটেলে যাই তাহলে আমাকে মেরে সাগরে ভাসিয়ে দেবে। এ অবস্থায় আমার প্রাণহানির শঙ্কায় আছি এবং আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির আশঙ্কা করছি।
খায়ের মোল্লা বলেন, আমার স্থায়ী ঠিকানা রাজধানীর ফুলবাড়িয়া। এখান থেকে কুয়াকাটায় গিয়ে ব্যবসা করবো সেটা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হিংসার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আমার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রাণভয়ে আমি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছি না। আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো পদক্ষেপ ও বিশেষ দৃষ্টি কামনা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী খায়ের মোল্লা আরও বলেন, আসামির রাজনৈতিক পরিচয় জানি না। আমি মনে করি সন্ত্রাসীদের রাজনৈতিক পরিচয় থাকে না। তারা সব সময় ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সন্ত্রাসী কায়দায় মানুষকে হয়রানি করে।