শিরোনাম

বরিশালের ভিক্ষুক রিজিয়া বেগম: ঝুপড়ি ঘরে জীবনযুদ্ধ

Views: 25

বরিশাল অফিস :: বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের খালের পাড়ে একটি ছোট্ট ঝুপড়ি ঘর। সেখানেই ৭০ বছরের বৃদ্ধা রিজিয়া বেগমের জীবন কাটছে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে। স্বামী মোসলেম আলী হাওলাদারের মৃত্যুর পর বিয়ে না করে একমাত্র কন্যা সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন গুজরান করছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে মেয়েও সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বৃদ্ধ মা আজ একাকী, বিধ্বস্ত ঘরে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তার বেঁচে থাকার জন্য।

বিগত ২০ বছর ধরে ভিক্ষা করেই কোনো রকমে পেটের ভাত জুটছে রিজিয়ার। সকাল হলে নিজের ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ছুটে বেড়ান তিনি। কিন্তু প্রতিদিনই মিলছে না সহায়তা। কোনোদিন ভিক্ষার চাল না পেলে সেই দিন অনাহারে কাটাতে হয়। তার ঝুপড়ি ঘরটি ধ্বংসের মুখে; ছাউনির উপরটা ভাঙ্গা, সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরে পানি জমে যায়। সামনের ও পিছনের অংশ খোলা থাকায় বৃষ্টির সময় পলিথিন টাঙিয়ে ঝড়-বৃষ্টি সামলাতে হয়।

রিজিয়া বেগমের জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ, সরকারি সহায়তার আবেদন করেও এখনও পর্যন্ত কোনো ঘর পাননি তিনি। বহুবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে ঘর চেয়েছেন, কিন্তু কেউই তার দুর্দশা মেটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। এক বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান বাবু কিছু টিন দিয়ে একটি ছাপরার ঘর তৈরি করে দিয়েছিলেন, কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সেই ঘরটিও উড়ে গেছে।

একাকী, অসহায় রিজিয়া বেগম আজ ভেঙে পড়েছেন। তার এই মানবেতর অবস্থায় কোনো খোঁজখবর নেয়ার লোক নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সমাজের বিত্তশালীদের কাছে আকুতি জানিয়েছেন—একটি ঘর তৈরি করে দেয়ার জন্য। তিনি আর এই ঝুপড়ি ঘরে বৃষ্টির পানিতে ভিজে, অনাহারে দিন কাটাতে চান না।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালে রিজিয়া বেগমের ঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে তাকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছিল। তবে নতুন করে তার মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করার জন্য নিজের বেতন থেকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

বৃদ্ধা রিজিয়ার জীবনের এই করুণ চিত্র আমাদের সমাজের দায়বদ্ধতা ও উদাসীনতার প্রতিচ্ছবি। তিনি সমাজের বিত্তবানদের কাছে আরেকটি সুযোগের অপেক্ষায় আছেন, যাতে তার শেষ বয়সে একটু স্বস্তি ও নিরাপত্তা মেলে। রিজিয়ার জন্য আমাদের ছোট্ট সহানুভূতিই হতে পারে তার জীবনের বড় আশ্রয়।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *