বরিশাল অফিস :: নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে আসন্ন রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ১৬ লক্ষাধীক টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষে মাঠ পর্যায়ে প্রস্তুতি শুরু করেছেন কৃষি যোদ্ধারা। ইতোমধ্যে বরিশালের বেশ কিছু এলাকায় শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষে ভাসমান বীজতলা তৈরী সম্পন্ন হয়েছে। নদ-নদী ও অসংখ্য খালবেষ্টিত বরিশাল কৃষি অঞ্চল দেশের অন্য এলাকার তুলনায় কিছুটা নীচু এবং মৌসুমী বায়ু দেরীতে বিদায়ের কারণে বর্ষাও কিছুটা বিলম্বিত হয়ে থাকে। ফলে শীতকালীন সবজি আবাদের সময় পেরিয়ে গেলেও অনেক জমিতে পানি আটকে থাকায় আবাদ বিলম্বিত হয়।
এসব কারণে গত কয়েক দশক ধরে বানারীপাড়া, উজিরপুর ও নেছারাবাদ সহ কয়েকটি এলাকার বিল অঞ্চলে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজিসহ নানা ধরনের বীজের আবাদ হচ্ছে। ফলে এসব বীজতলা থেকে বর্ষা বিদায়ের সাথে শীতকালীন সবজির চারা উত্তোলন করে রোপন সম্ভব হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম সময়ে সবজির আবাদ ও উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। ফলে জমিতে আদ্রতা বিরাজ করার সাথে শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন রবি ফসলের আবাদ সহজতর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে বিশে^র শতাধীক দেশে বর্তমানে বাংলাদেশের যে কৃষি পণ্য রপ্তানী হচ্ছে সেখানে বরিশাল অঞ্চলের সবজি রয়েছে। এরমধ্যে শীতকালীন সবজিই অন্যতম প্রাধান কৃষিপণ্য। আগামীতে এ বাজার আরো সম্প্রসারণের লক্ষে সরকার দেশে সবজির আবাদে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
আসন্ন রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে অন্তত ১৪ লাখ হেক্টরে শীতকালীন সবজি সহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে শুধু ৪ লক্ষাধীক হেক্টরে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৬ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকা হওয়ায় এখনো বরিশাল অঞ্চলের জমিতে আমন ধান থোর পর্যায়ে রয়েছে। এ অঞ্চলে আমনের কর্তন শুরু হতে আরো অন্তত ৩০-৪৫ দিন বাকি রয়েছে।
তবে বরিশাল অঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারা এখন ক্রমে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন শীতকালীন সবজি আবাদে। আসন্ন রবি মৌসুমে কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় সোয়া ২ কোটি টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনে কাজ করেছে। এরমধ্যে শুধু বরিশাল কৃষি অঞ্চলেই প্রায় ৭৮ হাজার ৭৯৫ হেক্টরে ১৬ লাখ ৮ হাজার ৫৫ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষে কাজ শুরু করেছেন কৃষি যোদ্ধারা। ইতোমধ্যে অপেক্ষাকৃত উচু জমিতে লালশাক ও পালং শাক এর কিছু আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। শিম, পটল, ফুলকপি, বাধাকপি, শালগম, গাজর, মুলা সহ বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির আবাদ শুরু হবে চলতি মাসের শেষভাগে। তবে এর বাইরে লাউ সহ বেশ কিছু সবজি এখন ১২ মাসই আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে।
কৃষকরা বর্ষা বিদায়ের সাথে দ্রুততম সময়ে শীতকালীন সবজি আবাদের মাধ্যমে তা বাজারজাত করে ভাল মুনাফা ঘরে তুলতে জমি তৈরী সম্পন্ন করে ভাসমান সবজি বীজতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপনের চেষ্টা করছেন। এ অঞ্চলে শীতকালীন সবজির আবাদ বিলম্বিত হওয়ায় এখনো দেশের দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের সবজি বরিশাল অঞ্চলের বাজারে আসছে। ফলে পরিবহন ব্যয়জনিত কারণে দামও কিছুটা চড়া। এবার ভাদ্রের পূর্ণিমা ও আশি^নের অমাবশ্যার ব্যাপক বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলের গ্রীষ্মকালীন সবজির অন্তত ৮০ ভাগই বিনষ্ট হয়েছে। ফলে সবজির দামও অনেক বেশি।
কৃষকরা আশা করছেন আগামী ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি বরিশাল অঞ্চলের বাজারে আসতে শুরু করলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, দেশে গত বছর প্রায় ২ কোটি টনের মত শীতকালীন সবজি উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুল থাকলে চলতি অর্থ বছরে তা প্রায় ২.১০ কোটি টনের কাছে পৌঁছতে পারে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে।
এদিকে গবেষনা কার্যক্রমের মাধ্যমে অন্যসব ফসলের মত বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজির উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ‘বারী’। ফলে কম জমিতে অধিক সবজি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানী বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ ঘটছে।