বরিশাল অফিস :: লালমোহন উপজেলার একমাত্র খেলাধুলার জন্য নির্মাণাধীন বীর বিক্রম মেজর হাফিজ স্টেডিয়াম ২০ বছর ধরে অযতœ-অবহেলায় পড়ে আছে। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দলীয় নেতাদের অনিচ্ছার কারণে দেশের একজন শীর্ষ ক্রীড়াবিদের নামে এই স্টেডিয়ামটি আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি বিগত সরকারের আমলে এটির নামও পরিবর্তন করতে চেয়েছিলো একটি মহল।
শেষ পর্যন্ত তা না পেরে স্টেডিয়ামটিকে পরিকল্পিতভাবে পৌরসভার ময়লার ভাগারে পরিণত করেছেন। এরসাথে গরুর খোয়াড় এবং পল্লী বিদ্যুতের খুটি রেখে স্টেডিয়ামের মাঠটিকে পরিত্যাক্ত করে রাখা হয়েছে। এখানে যুবসমাজকে খেলাধুলার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত রাখায় স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীদের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলে স্থানীয় ছাত্র ও ক্রীড়াপ্রেমীরা স্টেডিয়ামটিকে দখলমুক্ত এবং পরিচ্ছন্ন করে খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেন।
জানা গেছে, ভোলা-চরফ্যাশন আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে লালমোহন পৌর এলাকার প্রান্ত সীমানায় লাঙ্গলখালী এলাকায় প্রায় ৪ একর জমিজুড়ে আরব আমিরাতের একটি স্টেডিয়ামের আদলে ২০০৪ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয় স্টেডিয়ামটির। এটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যেখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন টুর্ণামেন্ট আয়োজন করা সম্ভব হতো। দ্বিতল এই অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম ভবনে ভিআইপি লাউঞ্জ, প্রেসবক্স, প্লেয়ার লাউঞ্জসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধার পরিকল্পনা ছিল। থাকতো মাঠের চারদিকে দর্শক গ্যালারী। ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা প্রাথমিক ব্যয় ধরে ১৯৯৫ সালে স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য জাতীয় ফুটবলার দৌলতখানের সন্তান মোঃ গজনবীর কাছ থেকে ৫ একর জমি ১৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন লালমোহন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে ওই জায়গায় ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল স্টেডিয়ামটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। দেশের ক্রীড়া অঙ্গনে অসামান্য অবদান রাখায় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠক হওয়ার সুবাদে তার নামেই নামকরণ হয় ‘বীর বীক্রম হাফিজ উদ্দিন স্টেডিয়াম’। সে সময়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে ১৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে টেন্ডার আহবান করে স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এর পর আরো ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও মাঠে মাটি, বালু ভরাটের জন্য ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পায়।
বরাদ্ধকৃত অর্থ দিয়ে বালু ভরাট ও মূল গেটটি করা সম্পন্ন হলেও গ্যালারী করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই স্টেডিয়ামের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার আর কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। মেজর হাফিজের নামে নামকরণ হওয়ার কারণে এটি নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি বরং এর নাম পরিবর্তন করার জন্য ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে ‘শেখ রাসেল স্টেডিয়াম’ নাম দিয়ে প্রস্তাব পেশ করে। বর্তমানে নির্মিত আংশিক ভবন অযতœ অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খেলোয়াড়দের জন্য নির্মিত মাঠ এখন গরু ছাগলের খোয়াড়ে পরিণত হয়েছে।
পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলা এবং পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি রাখার কারণে মাঠটি পুরোপুরি অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি নির্মিত ভবনটির মধ্যে এক পরিবার বসতঘর বানিয়ে বসবাস করে আসছে গত ২০ বছর ধরে।
ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করা স্টেডিয়ামটিকে সংস্কার করে খেলার উপযোগী করার দাবীতে সোমবার উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ও খেলোয়াড়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাক্ষাত করেন। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য মুছা কালিমুল্লাহ, মেহেরাব হোসেন অপি জানান, শিগগিরই স্টেডিয়ামটিকে খেলার উপযোগী করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্টেডিয়ামটি খেলার উপযোগী করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ময়লা ফেলা বন্ধ করা হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএমকে বলা হয়েছে মাঠে রাখা তাদের খুঁটিগুলো সরিয়ে নিতে। আশা করি সকলের সহযোগিতায় স্টেডিয়ামটি পরিপূর্ণতা পাবে।