বরিশাল অফিস :: দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি যোদ্ধারা এখন চরম দুশ্চিন্তায় আছেন ঘূর্ণিঝড় দানার হুমকির মুখে। অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বড় ঘূর্ণিঝড় এ অঞ্চলে আঘাত হেনেছিল, যার মধ্যে ৭০ সালের ‘হেরিকেন’ এবং ২০০৭ সালের ‘সিডর’ ছিল সবচেয়ে বিধ্বংসী। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ও কয়েক হাজার কোটি টাকার ফসল নষ্ট হওয়ার পর, এখন আবার নতুন করে একটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় দানা মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছে। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে উপকূলের আকাশ মেঘলা, বইছে হালকা বাতাস এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
পটুয়াখালীর উপকূলবাসী, বিশেষত কলাপাড়ার মানুষ বিগত বছরগুলোর দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দুর্বল বেড়িবাঁধগুলোর অবস্থা তাদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, কারণ আগের দুর্যোগগুলোতে সেগুলো অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এখনো সেগুলো সঠিকভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়নি। জরুরি মেরামত হিসেবে জিও ব্যাগ এবং রিং বাঁধ ব্যবহার করা হলেও সেগুলো যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে পারছে না।
কলাপাড়া উপজেলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপকূলের চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষজন ঘূর্ণিঝড়ের খবরে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে। বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত হাজারো পরিবার প্রতিটি দুর্যোগেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে, বিশেষত নদী এবং সাগরের পানির স্তর বেড়ে গেলে।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর কলাপাড়ার ৭নং লতাচাপলী ইউনিয়ন এবং কুয়াকাটা পৌরসভার দলনেতা মো. শফিকুল আলম জানান, তারা ইতোমধ্যেই স্থানীয়দের সচেতন করতে মাইকিং শুরু করেছে এবং তাদের টিমগুলো মাঠে কাজ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার জাহান জানান, বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের খবর পাওয়ার পরপরই তারা জরুরি সভা ডেকেছেন এবং আগাম প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। আগের দুর্যোগগুলোতে পূর্বপ্রস্তুতির কারণে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানো গেছে। এবারও তারা সার্বিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন।