শিরোনাম

সংকটে পেশা, টিকে থাকার লড়াইয়ে কামার সৌরভ

Views: 14

বরিশাল অফিস : বরিশাল নগরের উপকণ্ঠে ছাপরার একটি ছোট্ট দোকানে কাজ করেন সৌরভ দাস (৩৫)। পেশায় তিনি একজন কামার। কাছে গেলে সৌরভ আন্তরিকভাবে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন। তবে না সূচক জবাব শোনার পর সেই হাসি মিলিয়ে গেল।

সৌরভ জানালেন, কামার পেশায় এখন আর টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। কয়লা, লোহা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিশ্রম অনুযায়ী উপার্জন করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সামান্য আয় দিয়ে চারজনের পরিবার চালানো প্রায় অসম্ভব। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,জীবন এভাবে আর চলে না। এই পেশায় আর কেউ আসতে চাইবে না। আমার ছেলেমেয়েদের এই পেশায় আনবো না, আর আমি কেন যে এই পেশায় এসেছিলাম!।

কামার পেশার প্রসঙ্গ উঠতেই সৌরভের আক্ষেপ স্পষ্ট হয়ে উঠল। একসময় গ্রামের বাজার ও বিভিন্ন এলাকায় কামারদের নিয়ে বিশেষ জায়গাগুলোতে ‘কামারপাড়া’ গড়ে উঠত। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির উন্নয়নে এবং বাজারের পরিবর্তনের ফলে এই পেশাটি ক্রমশ বিলুপ্তির পথে। বরিশাল নগর ও এর আশেপাশে একসময় অনেক কামারের বসতি ছিল। নগরের হাটখোলা, নতুন বাজার, বাংলাবাজার, নথুল্লাবাদ, পলাশপুরসহ বিভিন্ন বাজারে কামারদের দোকান থাকত। কিন্তু এখন তাদের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। যাঁরা এখনো টিকে আছেন, তাঁরাও আর্থিক সংকটে ভুগছেন।

সৌরভ দাস বলেন, বরিশালের হাটখোলা এলাকায় এখন মাত্র দু-চারটি কামারের ঘর রয়েছে। এই প্রজন্ম শেষ হলে এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে তার ধারণা। এছাড়া ক্ষুদ্রঋণ সহায়তাও তারা পান না, কারণ তাদের ঘরবাড়ি নেই। গরিব মানুষের জন্য ঋণ পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফেরার সময় সৌরভ হাপরের চেইন দিয়ে কয়লার আগুন চাঙা করতে করতে হতাশ কণ্ঠে বলেন,কামারদের কেউ মানুষ মনে করে না। আমরা অনেক পরিশ্রম করে লোহার হাতিয়ার বানাই, কিন্তু কিনতে আসলে দামাদামির শেষ থাকে না। এই দেশে গরিবদের সঙ্গে সব হিসাব। গরিবরা যেন না খেয়ে, না পরে দুবেলা খাওয়ার জন্য শুধু পরিশ্রম করবে, এটাই নিয়ম হয়ে গেছে। কেউ আমাদের কথা ভাবে না, অথচ আমরাও তো মানুষ, আমরাও তো একটা জীবন নিয়ে বাঁচি।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *