চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক :: ভারত সরকার আধা সেদ্ধ চালের রপ্তানি শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করেছে। মূলত দেশটিতে চালের মজুত বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং এ বছর ভালো বর্ষার পর চাল উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আধা সেদ্ধ চালের রপ্তানি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার পর এবার পুরোপুরি প্রত্যাহার করেছে। কয়েক মাস ধরে ভারত সরকার চাল রপ্তানি থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে। গত মাসে তারা বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চালের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল, তবে সরকার চালের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য প্রতি টন ৪৯০ ডলার নির্ধারণ করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এর ফলে চাল রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়বে।
এর আগে, স্থানীয় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে আধা সেদ্ধ চালের রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল ভারত। সেবার গম ও চালের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বিশেষ করে অকালবৃষ্টির কারণে গমের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং পূর্বাঞ্চলে কম বৃষ্টির কারণে চাল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। তবে সেবার ভারতে চালের মজুত কমেনি।
ভারতের চাল রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বিভি কৃষ্ণা রাও জানান, শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে আফ্রিকার ক্রেতারা ভারত থেকে চাল কেনা বাড়াবে, যাদের সাধারণত মূল্যের বিষয়ে সংবেদনশীল। সমিতির সহসভাপতি দেব গর্গ বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত নতুন মৌসুমের ফসল নিয়ে সরকারের আস্থার প্রতীক।
বর্তমানে চালের উদ্বৃত্ত মজুত তৈরি হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খরিফ (বর্ষাকালীন) মৌসুমে স্থানীয় বাজার থেকে চাল কেনার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসের প্রথমার্ধে ফুড করপোরেশন অব ইন্ডিয়া ও অন্যান্য সংস্থাগুলো মজুতের অভাবে চাল কেনা অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে। এসব কারণে রপ্তানির বাধা কমিয়ে আনছে সরকার।
গত মাসে বাসমতী ছাড়া সাদা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে ভারতের চাল রপ্তানিকারকরা সন্তুষ্ট হয়েছেন। এ সিদ্ধান্তকে তাঁরা চালের বাজারের জন্য ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। চাল রপ্তানিকারক সংগঠন রাইস ভিলার প্রধান নির্বাহী সুরজ আগরওয়াল জানান, এই কৌশলগত সিদ্ধান্তের ফলে শুধু রপ্তানিকারকদের আয় বৃদ্ধি পাবে না, বরং কৃষকদেরও উপকার হবে।
ভারত বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ চাল রপ্তানি হয় ভারত থেকে। অন্যান্য শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। চালের প্রধান ক্রেতা দেশ হলো চীন, ফিলিপাইন ও নাইজেরিয়া। ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো ভারতের কাছ থেকে প্রয়োজনের সময় চাল কেনে। অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিলে এই দেশগুলো ভারত থেকে চাল কেনে, যা বিশ্বের চালের বাজারে দামের ওঠানামার ওপর প্রভাব ফেলে।
আগে থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল যে, ভারত চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে। আগস্ট মাসের শুরুতে ভারত সরকারের শীর্ষ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নীতি আয়োগের সদস্য রমেশ চাঁদ জানিয়েছিলেন, এবার ধানের আবাদ বেড়েছে এবং মজুতও আছে পর্যাপ্ত, ফলে চাল রপ্তানি হলেও ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।