বরিশাল অফিস :: খালটি দিয়ে একসময় নৌকা চলত। জোয়ার-ভাটার পানি আসত। নিষ্কাশন হতো জমে থাকা বৃষ্টির পানি। চলত সেচকাজ। পৌর কর্তৃপক্ষ সেই খাল ভরাট করে বাজার বসিয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন যে যার মতো দখল করে দোকান তৈরি করেছে। এতে সংকুচিত হয়ে পড়েছে খালটি।
এ চিত্র বরগুনার বেতাগী পৌরসভার টাউনব্রিজ এলাকার বেতাগী খালের। পাইলিং দিয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে খালটির। বাজার বসিয়ে ইজারা দিয়ে রীতিমতো খাজনা আদায় করছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, এ এলাকায় কাঁচাবাজার, দুধ বিক্রি ও চায়ের দোকানিদের বসার কোনো জায়গা নেই। সেতু ও রাস্তার ওপর পণ্য বিক্রি করা হয়। এতে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের চলাচলে সমস্যা হয়। তাদের কথা চিন্তা করেই পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি অফিসের সঙ্গে আলোচনা করে কাবিটা, টিআর ও উন্নয়ন খাতের অর্থ দিয়ে খালটি ভরাট করে বাজার বসানো হয়েছে।
এতে বছরে ১০ লাখ টাকার রাজস্ব আয় বেড়েছে। আক্ষেপ করে বরগুনা পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসান ঝন্টু বলেন, সাময়িক লাভের আশায় পরিবেশের এত বড় ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। সরকারি কোন কোন প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। খাল রক্ষায় আইনের শতভাগ প্রয়োগ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
বিষখালী নদীর মোহনা থেকে বেতাগী মৌজায় ৭ হাজার মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩৫ মিটার প্রস্থের খালটি বেতাগী সদর ও হোসনাবাদ ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। এ খাল ব্যবহার করে একসময় নৌকায় করে সরকারি খাদ্যগুদাম ও বেতাগী বন্দরের ব্যবসায়ীদের মালপত্র পরিবহন হতো। কয়েক বছর ধরে খালটি দখল ও ভরাট করছে স্থানীয় লোকজন। গত বছর এ কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
এতে খাল দিয়ে নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া খাল ভরাটের কারণে পানি সরবরাহ, মৎস্য অভয়াশ্রমসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ পরিবেশবিদরা।
মৎস্য অফিসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, খাল সংকুচিত হওয়ায় অভয়াশ্রম থেকে মাছসহ জলজ প্রাণী অন্য এলাকায় চলে যাচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীন কাজে খালটি অস্তিত্ব হারানোর উপক্রম হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমদ বলেন, খাল ভরাট হয়ে গেলে কৃষকের সেচ সুবিধা সংকুচিত হবে। ফসল আবাদে খরচ বেড়ে যাবে। এতে তাদের জীবন-জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। পাশাপাশি খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
দক্ষিণ হোসনাবাদ গ্রামের জেলে আফজাল হোসেন বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মাছ ধরে খাই। খাল ভরাট হয়ে গেলে আমরা না খেয়ে মারা যাব।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে খালটি স্থানীয় লোকজন বিভিন্নভাবে দখল করে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে বাধা দেওয়া হয়নি। খোদ পৌর কর্তৃপক্ষ কীভাবে খালটি ভরাট করল বোধগম্য নয়।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দীন বলেন, সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর খালে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে পৌর প্রশাসক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেভাবে নির্দেশ দেবেন, সে অনুযায়ী কাজ করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী ভূমি কমিশনার ফারুক আহমদ বলেন, যৌক্তিক কারণ ছাড়া খাল ভরাটের এখতিয়ার ভূমি অফিস বা পৌর কর্তৃপক্ষের নেই। আমি এখানে যোগদানের আগেই এ কাজ হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে খালের ভরাট অংশ উচ্ছেদেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, খালটি ভূমি অফিসের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। আমাদের সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ভরাটে বাধা দেওয়া হয়নি।