বরিশাল অফিস:: বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারার বিশেষ বিধান ‘এক নেতার এক পদ’ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চের কাউন্সিলে যুক্ত করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি দলের কোনো পর্যায়ের কমিটির দুই পদে থাকতে পারবেন না। কিন্তু গত আট বছরে বরিশাল বিএনপির কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে এই বিধান কার্যকর হয়নি। এমনকি সম্প্রতি ঘোষণা হওয়া মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি গঠনতন্ত্রের এই বিধান লঙ্ঘন করেছে।
দ্বৈত পদ গ্রহণের অভিযোগ ::
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ওয়ার্ড এবং অঙ্গ সংগঠনের পদে থাকা নেতারা মহানগর বিএনপির কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। এর পাশাপাশি, জেলা বিএনপির নেতাদেরও মহানগর কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো, দলের প্রবীণ নেতা, মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আলম ফরিদের অবমূল্যায়ন। তাঁকে আহ্বায়ক কমিটির দুই নম্বর সদস্য করা হয়েছে, অথচ তার ভাগ্নে ওয়ায়ের ইবনে গোলাম কাদিরকে কমিটির এক নম্বর সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
এছাড়া, কমিটিতে ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়কদেরও দ্বৈত পদ দেওয়া হয়েছে, যা গঠনতন্ত্রের বিরোধী। বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সোহেল সিকদার, বিভিন্ন ওয়ার্ডের আহবায়ক মাহফুজুর রহমান মাহফুজ, সাজ্জাদ হোসেন এবং অন্যান্য নেতারা মহানগর বিএনপির সদস্য পদ পেয়েছেন।
বিক্ষুব্ধ নেতাদের প্রতিবাদ:
নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ নেতারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং কমিটির প্রথম পরিচিতি সভা বর্জন করেছেন। ১৩ জন নেতার মধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট কাজী বশির, হুমায়ুন কবির মাসুদ এবং অন্যান্য নেতারা অংশগ্রহণ করেননি। প্রতিবাদকারী নেতাদের দাবি, নবগঠিত কমিটি ‘মাই ম্যান’ কমিটি, যেখানে অনেকেরই যোগ্যতা নেই। তাঁরা অভিযোগ করেছেন যে, সিনিয়র নেতাদের উপেক্ষা করে দলের কিছু নেতার ঘনিষ্ঠদের পদ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে আরিফুর রহমান বাবু, একজন প্রতিবাদকারী নেতা, বলেছেন, “এটা কোনো কমিটি নয়, এটা শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট মানুষের কমিটি।” তিনি আরও দাবি করেছেন যে, এই কমিটি গঠন করার আগে দলের নেতৃবৃন্দকে ভুল বুঝিয়ে এক ধরনের ভুয়া কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তারা এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অভিযোগ জানাবেন।
:নতুন কমিটির পক্ষে অবস্থান : তবে, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক এবং সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার কমিটির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেছেন যে, নতুন কমিটি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনা অনুযায়ী অঙ্গ সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের পদ দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র নেতা নূরুল আলম ফরিদের বিষয়টি তিনি দুঃখজনক হলেও কেন্দ্রের নির্দেশনার ফলস্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন।
সংশোধন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেছেন, “ওয়ার্ড নেতাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি গঠনতন্ত্রের বিরুদ্ধে নয়, আগামী ১৬ নভেম্বরের মহাসমাবেশের পর আমরা ওই কমিটিগুলো বিলুপ্ত করতে উদ্যোগ নেব।” তিনি জানান, যাঁরা মহানগর কমিটিতে রয়েছেন, তাদের আর ওয়ার্ড কমিটিতে রাখা হবে না।
বরিশাল মহানগর বিএনপির ৪২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঘোষণার পর দলের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। প্রবীণ নেতাদের অবমূল্যায়ন এবং ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি লঙ্ঘনের কারণে দলীয় অস্থিরতা বাড়ছে। বিএনপির নেতারা বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।