বরগুনার বেতাগী উপজেলায় সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় রোপণ করা হাজার হাজার গাছের “মৃত্যু পরোয়ানা” জারি করেছে বন বিভাগ। গাছগুলোতে নম্বর দিয়ে কাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং কিছু সড়কের গাছ ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। এসব গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য সুরক্ষা প্রদান করেছিল, তবে বর্তমানে বন বিভাগের কাটার সিদ্ধান্তে এলাকাবাসী শঙ্কিত।
বেতাগী পৌরসভার সবদার চান মুন্সীর মাজার থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত সড়কের দুপাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, যেমন রেইনট্রি, আকাশমণি, কড়ই, মেহগনি রোপণ করা হয়েছিল। বর্তমানে সেখানকার বেশিরভাগ গাছ কেটে ফেলা হলেও কিছু আকাশমণি গাছ এখনও “মৃত্যু পরোয়ানা” নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাছের প্রতিটিতে নম্বর দেওয়া হয়েছে, যা কাটার জন্য প্রস্তুতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়া, বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের বদনীখালী বাজার থেকে কনার খাল পর্যন্ত সড়কের গাছগুলোও কাটা হবে। বন বিভাগ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য দরপত্র আহ্বান করে গাছ বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। স্থানীয়রা initially ধারণা করেছিলেন, এসব নম্বর গাছ গণনার জন্য দেওয়া হয়েছে, কিন্তু পরে জানানো হয় যে, গাছগুলো কাটা হবে, যা তাদের জন্য বিস্ময়কর ছিল। একসাথে এত গাছ কাটা হবে শুনে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বেতাগী উপজেলায় ১৫ হাজার ৯৫৭ হেক্টর আয়তনে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৬৪ মানুষের বসবাস, এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৬৯ হেক্টর বনভূমি রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বন বিভাগ ১৯৯১ সাল থেকে সামাজিক বনায়নের আওতায় ১৮০ কিলোমিটার সড়কে নানা প্রজাতির গাছ রোপণ করেছিল, তবে ৫০ কিলোমিটার সড়কের গাছ ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। সামাজিক বনায়ন বিধিমালা অনুযায়ী, গাছের বয়স ১৫-২০ বছরের মধ্যে পৌঁছালে তা কেটে ফেলা হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় এই গাছগুলো অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। স্থানীয় কৃষক ও পরিবেশবান্ধব বাসিন্দা আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘‘এই গাছগুলো আমাদের নিরাপত্তা দেয়, এগুলো কাটলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, গাছগুলো বেঁচে থাকুক এবং আরও গাছ লাগানোর দিকে নজর দেওয়া হোক।’’
বেতাগী সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক মানবেন্দ্র সাধক বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে স্থানীয় জনগণের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন এবং জনগণকে নতুন করে বনায়নে উদ্বুদ্ধকরণে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’’
এছাড়া, উপজেলা এনজিও বিষয়ক সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘‘সামাজিক বনায়ন থেকে বন বিভাগকে বেরিয়ে আসতে হবে। মুনাফাকেন্দ্রিক এই নীতি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, এতে দ্রুত বর্ধনশীল গাছের লাগানো হতো। প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষা করতে, দেশীয় ঔষধি, বনজ এবং ফলদ গাছ লাগানো উচিত, যাতে পরিবেশ ও মানুষের জন্য উপকারী হয়।’’
বেতাগী উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানিয়েছেন, সামাজিক বনায়নের বিধিমালা অনুযায়ী গাছগুলো কাটতে হবে। রাস্তায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গাছ লাগানো হয়েছিল এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এসব গাছের পরিচর্যা করেছেন। গাছ বিক্রির টাকা ভাগ করে দেয়া হবে— উপকারভোগী ৫৫%, বন অধিদপ্তর ১০%, সওজ ২০%, ইউনিয়ন পরিষদ ৫%, এবং বাকি ১০% দিয়ে পুনরায় বনায়ন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক আহমদ বলেন, ‘‘বিষয়টি বন বিভাগের অধীনে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে।’’
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম