পার্বত্য চট্টগ্রামে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে চলতি বছরের মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। বিশেষত, পার্বত্য অঞ্চলের ব্লক ২২ এবং ২২(ক)-এ গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য অফশোর পিএসসি (উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি) আদলে একটি নতুন পিএসসি খসড়া প্রস্তুত হয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার জানান, খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে এবং আশা করা যাচ্ছে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এরপরই মার্চে দরপত্র আহ্বান করা হবে।
পার্বত্য অঞ্চলে গ্যাসের প্রচুর মজুদ থাকতে পারে বলে আশাবাদী পেট্রোবাংলা, যদিও এখন পর্যন্ত এখানে তেমন কোনো বড় অনুসন্ধান কার্যক্রম হয়নি। এই অঞ্চলের গ্যাসের দাম সাগরের তুলনায় কিছুটা বেশি হতে পারে, কারণ সেখানে গ্যাস উত্তোলন এবং পাইপলাইন নির্মাণের খরচ বেশি। পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, অফশোর গ্যাসের দাম সাধারণত ব্রেন্ট ক্রুডের ১০% রাখা হয়, তবে পার্বত্য অঞ্চলের জন্য এটি ৮% প্রস্তাব করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলা আরো জানিয়েছে, পার্বত্য অঞ্চলে গ্যাস উত্তোলনে পেট্রোবাংলার সঙ্গে বাপেক্স একটি যৌথ উদ্যোগে অংশ নেবে। তবে, ব্লক চুক্তি করার ক্ষমতা কেবল পেট্রোবাংলার আছে; বাপেক্স বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ তৈরি করে প্রস্তাব দিতে পারবে, তবে বিনিয়োগের দিক থেকে তাদের ভূমিকা সীমিত থাকবে।
বাংলাদেশে প্রথম কূপ খনন করা হয় ১৯১১ সালে, এবং তারপর ১৯১৪ সালে সীতাকুন্ডে প্রথম গ্যাস কূপ খননের মাধ্যমে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের যাত্রা শুরু হয়। এর পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছু কূপ খনন করা হলেও, বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে হালদা এলাকায় কূপ খনন করা হয়েছিল।
২০০১ সালে ইউএসজিএস এবং পেট্রোবাংলা যৌথভাবে পার্বত্য অঞ্চলের গ্যাস মজুদ সম্ভাবনা নিরূপণ করে। তাদের মতে, এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন ৮.৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ থাকতে পারে, যা সর্বোচ্চ ৬৫.৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত হতে পারে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ২৯টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে, তবে বেশ কিছু ফিল্ডের উৎপাদন কমে এসেছে। গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ার কারণে কিছু ফিল্ড পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, নতুন অনুসন্ধান উদ্যোগের মাধ্যমে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলে নতুন ব্লকগুলোর মাধ্যমে।
পেট্রোবাংলা আগামী ৩ বছরে ৭০টি নতুন অনুসন্ধান কূপ খনন করতে চায়, এবং পার্বত্য অঞ্চলের গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের পাশাপাশি সাগরের গ্যাস অনুসন্ধানও অব্যাহত থাকবে। এটি বাংলাদেশের গ্যাস মজুদ বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতে গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।