পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মোটরসাইকেল মেকানিক হোসেন আলী। প্রায় দশ বছর আগে ব্রেন স্ট্রোকের পরে তার চোখে সমস্যা দেখা দেয়, এবং চিকিৎসার অভাবে দুইটি চোখই নষ্ট হয়ে যায়। অন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও হোসেন আলী থেমে যাননি। তিনি এখনো শব্দ শুনে মোটরসাইকেল মেরামত করতে পারেন। তাঁর মেকানিকের কাজ দেখে কেউই বুঝতে পারে না তিনি পুরোপুরি দৃষ্টিহীন। এমনকি, টাকা হাতে নিয়েই তিনি বুঝে ফেলেন কোনটা কত টাকার নোট। স্বল্প খরচে ভালো কাজ করার জন্য এলাকায় তিনি বেশ পরিচিত।
৯ বছর বয়সে ভাইয়ের দোকানে মোটরসাইকেল ও জেনারেটর মেরামতের হাতেখড়ি হয়েছিল হোসেন আলীর। এরপর ধীরে ধীরে মেকানিকের কাজ রপ্ত করেন। তার দক্ষতা ছিল এতটাই উন্নত যে, যন্ত্রের শব্দ শুনে তিনি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে মেরামত করতে পারতেন। তবে, দশ বছর আগে তার ব্রেন স্ট্রোকের পর থেকে তার চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে যায়। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি এবং এ কারণে তাঁর দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি চলে যায়। তবে, অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে হোসেন আলী আবারও তার কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া পৌরশহরের কে এম লতিফ সুপার মার্কেটে একটি ছোট দোকানে মেকানিকের কাজ করছেন।
হোসেন আলী জানান, “এখন আগের মতো আয় রোজগার নেই, সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। দৈনিক ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করলেও অনেক সময় খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। এখন যদি সরকার সাহায্য করতো, তাহলে আমি সেটা মাথা পেতে নিতাম।”
হোসেন আলীর ছেলে, মো. তুহিন বলেন, “আমার বাবা আমারও শিক্ষক। কোনো কাজেই তিনি দমে যাননি। যেকোনো কাজ তিনি শব্দ শুনে করতে পারেন। আমাদের একটাই আবেদন, সরকারের কাছে যদি কিছু সাহায্য পাওয়া যেত, তাহলে আমরা বাবার চিকিৎসা করাতে পারতাম।”
এদিকে, মঠবাড়িয়া পৌরশহরের ব্যবসায়ী মো. রিপন জানান, “হোসেন আলী ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে ঢাকা থেকে মঠবাড়িয়াতে আসে এবং তার দক্ষতার জন্য এখানকার সব মেকানিক তার শিষ্য। তিনি এখনো গাড়ির শব্দ শুনে সমস্যা চিহ্নিত করে মেরামত করতে পারেন।”
স্থানীয় বাসিন্দা শিবু মজুমদার বলেন, “অন্ধ হয়েও হোসেন আলী নির্ভরযোগ্য একজন মোটরসাইকেল মেকানিক। তার কাজ দেখলে বোঝা যায় না তিনি দৃষ্টিহীন। মানুষ তার কাছ থেকে মোটরসাইকেল মেরামত করাতে বিশ্বাস করে।”
মোটরসাইকেল মেকানিক হোসেন আলীর কাজের প্রতি এলাকার মানুষের আস্থা অনেক। তিনি এখনো জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে।
এ বিষয়ে, মঠবাড়িয়া উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. শফিকুল আলম বলেন, “হোসেন আলী দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতার সঙ্গে মোটরসাইকেল মেরামত করে যাচ্ছেন। তাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়া হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া গেলে তা তাকে প্রদান করা হবে।”
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম