শিরোনাম

পরাজিত ফ্যাসিবাদ পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে : ফখরুল

Views: 11

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ এখন একটি জটিল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়েছে এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠন ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। কিন্তু ঠিক তখনই কিছু ফ্যাসিবাদী শক্তি, যারা পরাজিত হয়েছে, পরিস্থিতি বদলানোর জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য আন্দোলনের বিজয়কে অন্য খাতে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের মানুষকে আবারও অস্থিতিশীল পরিবেশে ঠেলে দেওয়া।

আজ (বৃহস্পতিবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, “একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে একটি জটিল কাজ। রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে লেখক-শিল্পীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

ফখরুল বলেন, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো রাষ্ট্র পুনর্গঠন সম্ভব নয়। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে যেন আর কোনো ফ্যাসিবাদের আগমন না ঘটে, সেদিকে লেখক-সাহিত্যিকদের সজাগ থাকতে হবে।” তিনি আরও জানান, “ফ্যাসিবাদ রুখতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে এবং সংস্কারের বিষয়ে লেখক-শিল্পীদের মতামত অত্যন্ত জরুরি।” তিনি বলেন, “লেখক ও শিল্পীদের একটি বড় দায়িত্ব রয়েছে— তা হলো, দেশের সার্বভৌমত্ব যেন হুমকির মুখে না পড়ে, সে বিষয়ে তাদের দৃষ্টি রাখা।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তারা যেন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন। সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে, সবার সম্মিলিত উদ্যোগে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন সম্ভব হবে।”

মতবিনিময় সভায় সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, লেখক ও সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সাংবাদিক ও কবি সোহরার হাসান, লেখক ও গবেষক সলিমুল্লাহ খান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম মনি, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সম্পাদক ও কবি শওকত হোসেনসহ আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারের সূচনা বক্তৃতা দেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সদস্য সচিব কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। স্বাগত বক্তৃতা ও অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পরিষদের আহবায়ক কবি মোহন রায়হান।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে জনগণের আত্মত্যাগ অতুলনীয়। জনগণই সংস্কার করবে, তবে তাদের সেই সুযোগ দিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের অর্জন কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। লেখক-শিল্পীদের আরও সোচ্চার হতে হবে এবং জনগণের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”

সলিমুল্লাহ খান বলেন, “রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রতিবিপ্লব সংগঠিত হতে পারে, সেজন্য লেখক, শিল্পী ও রাজনীতিকদের সতর্ক থাকতে হবে।”

কথাসাহিত্যিক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, “কবি-শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা সবসময় সমাজ সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ফ্যাসিবাদীরা নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের প্রতিরোধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “ফ্যাসিবাদের পতনের পর লেখক-শিল্পীরা নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবেন। একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য লেখক-শিল্পীদের সতর্ক থাকতে হবে।”

জোনায়েদ সাকি বলেন, “রাষ্ট্র পুনর্গঠনে সংস্কৃতির বড় ভূমিকা রয়েছে। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার লেখক-শিল্পীদের বড় অংশকে তাবেদারে পরিণত করেছিল।”

সাইফুল হক বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যারা ‘না’ বলার সাহস দেখিয়েছেন, তাদের শ্রদ্ধা জানাই। ভবিষ্যতে কোন লেখক, কবি ও শিল্পী যেন স্বৈরশাসকের দোসর না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”

কবি মোহন রায়হান বলেন, “যদি কোনো ফ্যাসিবাদী সরকার ফিরে আসতে চায়, কবিরাই প্রথম প্রতিহত করবে। কবি-শিল্পীরা রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করবে।”

মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *