বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বৃদ্ধি এবং নীতিমালা শিথিল করার পরেও দেশের আমদানি গতিতে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসেনি। বরং আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি এবং নতুন ঋণপত্র খোলার হার কমে যাওয়ায় আগামী রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ সংকট এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দুর্বল অর্থনীতির কারণে আমদানিতে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হলে অর্থনীতির গতি বাড়াতে সহায়তা হবে। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের নিম্ন, মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করেছে। যদি এই সংকট রমজান মাসে বাড়ে, তবে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আমদানি ব্যয় ছিল ৬ হাজার ৬৭২ কোটি মার্কিন ডলার। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে এই আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬১৭ কোটি ডলার। এমসিসিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি ২ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং নতুন ঋণপত্র খোলার পরিমাণ ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমেছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমদানি কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো অর্থনৈতিক দুর্বলতা।’ তিনি আরো বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেড়েছে এবং নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে, তারপরও আমদানির গতি ফেরেনি।’
এছাড়া, ড. হোসেন আরও জানান, আমদানি কমার আরেকটি কারণ হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে এবং খাদ্যবহির্ভূত খরচ কমাতে বাধ্য করছে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।’
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করলে অর্থনীতি দ্রুত সচল হতে পারে। বিগত সময়ে যে অর্থনৈতিক সমস্যা ছিল, তার অনেকটাই বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে হয়েছিল, যা বর্তমানে কিছুটা শিথিল হলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান মনে করছেন, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নানা কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আগামী অক্টোবর-ডিসেম্বরে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানিতে শূন্য মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুবিধা এবং সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট সহজতর করা হয়েছে। এর ফলে আমদানি প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে, এবং সার্বিক আমদানি পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।