শিরোনাম

ভারতীয় ঋণের প্রকল্প: বাংলাদেশে ফায়দা না ভারতীয় স্বার্থ পূরণ

Views: 15

বাংলাদেশে ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলো নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ভারত যেসব সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ করেছে সেগুলো মূলত নিজেদের সুবিধার্থে এবং তা বাংলাদেশের জন্য তেমন লাভজনক হয়নি। সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির রিপোর্টে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।

অর্থনীতির শ্বেতপত্রে এ অভিযোগ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ ভারতীয় ঋণে মূলত অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করেছে। অনেক প্রকল্প এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা শুধু ভারতের স্বার্থসিদ্ধি করেছে, কিন্তু বাংলাদেশে এর উপকারিতা কম। বিশেষত, ভারত যে প্রকল্পগুলোতে ঋণ দিয়েছে, সেগুলোতে বাংলাদেশকে কম সুবিধা মিলেছে এবং প্রকল্পগুলোতে অর্থায়নও যথাযথভাবে হয়নি।

সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ নভেম্বর শ্বেতপত্র প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করা হবে, এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে। তিন মাসের আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

কমিটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষত, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক প্রকল্পের বাস্তবায়ন দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে। প্রশাসনও রাজনৈতিকভাবে বাধাগ্রস্ত ছিল, যার ফলে অনেক প্রকল্পে স্বচ্ছতা এবং কার্যকরী ফলাফল ছিল না।

ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোর জটিলতা

ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে মোট ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৮৬ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। এই ঋণের জন্য প্রধানত সড়ক ও রেলপথের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তবে সেগুলোর সিংহভাগ লাভ ভারতই পেয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর কিছু কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সময়সীমাও দীর্ঘ হয়েছে।

প্রতিবেদনটি আরও জানায়, রাজনৈতিক প্রভাব এবং দুর্নীতির কারণে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন এবং সময়সীমা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট এবং পাচার

শ্বেতপত্রের প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ ওঠেছে, যেখানে অধিকাংশ অর্থ আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কোম্পানির কাছে চলে গেছে।

এছাড়া, প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।

সংশোধন এবং পরামর্শ

শ্বেতপত্রে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, এবং বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

কমিটি সরকারের দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার বিষয়েও সুপারিশ করেছে, যা আগামী দিনে বাংলাদেশকে এক নতুন অর্থনৈতিক অবস্থায় নিয়ে আসতে পারে।

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *