শিরোনাম

পিরোজপুরে মালটার চাষে কৃষকদের দুঃখ, লাভের সুযোগ সীমিত

Views: 9

পিরোজপুর, যা একসময় নারকেল এবং সুপারির জন্য পরিচিত ছিল, বর্তমানে মালটার চাষের জন্য অন্যতম স্বর্ণখনি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মালটার ব্যাপক উৎপাদন হয়ে থাকে, যা এখন জেলার ব্র্যান্ডিং ফল হিসেবে জায়গা দখল করে নিয়েছে। জেলা প্রশাসন পাঁচ বছর আগে মালটাকে ব্র্যান্ডিং ফল হিসেবে ঘোষণা করেছে।

পিরোজপুরের সাতটি উপজেলায় হাজার খানেক মালটার বাগান গড়ে উঠেছে, যেখানে কৃষকরা এ ফল উৎপাদন করছেন। স্থানীয় পাইকাররা কৃষকদের কাছ থেকে মালটা সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। তবে, ফলন ভালো হলেও কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন। হিমাগারের অভাব এবং ফল সংরক্ষণের উপায় না থাকায় কৃষকরা তাদের মালটা তাড়াহুড়া করে কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে পাইকাররা লাভবান হলেও কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর পিরোজপুরে ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ৪,৬০০ মেট্রিক টন বারি-১ জাতের মালটা উৎপাদিত হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

কাথুলিয়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ হাসান জানান, প্রথমে এই গ্রামে গুটি কয়েক ব্যক্তি মালটা চাষ শুরু করেছিলেন। তাদের লাভ দেখে অন্যরাও মালটা চাষে আগ্রহী হন। এখন পিরোজপুরে মালটা জাতীয় ফল হিসেবে পরিচিত, তবে কৃষকরা আগের মতো দাম পাচ্ছেন না।

একই গ্রামের কৃষক অসীম হালদার বলেন, “আমার বাগানটি দুই বিঘা। এ বছর ৪ লাখ টাকায় বাগান বিক্রি করেছি, তবে পূর্বের তুলনায় দাম অনেক কম। যদি মালটা সংরক্ষণ করে বিদেশে রপ্তানি করা যায়, তবে আমরা আরো লাভবান হতে পারব।”

পিরোজপুর সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক তুহিন বালি জানান, “বাগানে পরিচর্যার খরচ বেড়ে যাওয়ার পরও প্রতিবছর মালটা পাইকারদের কাছে কম দামে বিক্রি করতে হয়। এ বছর ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বাগান বিক্রি করেছি, লাভ তেমন হয়নি।”

কৃষক কার্তিক মণ্ডল বলেন, “আগে মালটা উৎপাদন কম হলেও দাম ভালো পাওয়া যেত। বর্তমানে উৎপাদন বাড়ছে, কিন্তু দাম পাচ্ছি না। সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে, কিন্তু মালটার দাম বাড়েনি। যদি হিমাগারের ব্যবস্থা থাকত, তবে আমরা মালটা সংরক্ষণ করে সারা বছর বিক্রি করতে পারতাম।”

স্থানীয় পাইকার মোহাম্মদ রাজীব জানান, “মালটা হওয়ার আগেই আমি এই এলাকার ফলের বাগান কিনি। খাওয়ার উপযোগী হলে তা সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করি এবং ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ করি।”

পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “পিরোজপুরের উপকূলীয় নদীবেষ্টিত জেলা হওয়ায় এখানে ফল চাষে সুবিধা হয়। বিশেষ করে সাইট্রাস জাতের ফল এখানে ভালো হয়। এ বছর ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ৪,৬০০ মেট্রিক টন মালটা উৎপাদিত হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখেছে।” কৃষকদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, “মালটা সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা লাভবান হবেন।”

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম

 

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *