চন্দ্রদ্বীপ বিনোদন ডেস্ক: বলিউডের প্রথম সারির অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়া। সদ্যই সাতপাকে বাঁধা পড়ে নিজের নতুন জীবন শুরু করেছেন। কিন্তু চলচ্চিত্র জগতে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করার পথচলাটা মোটেও সহজ ছিল না তার জন্য।
কলেজে পড়াকালীন সেখানকার ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে কিছু সময়ের জন্য কাজ করেন পরিণীতি। এমনকি ম্যাচ চলাকালীন খাবার সরবরাহের দায়িত্বেও থাকতেন তিনি। ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন অভিনেত্রী। সেজন্য পড়াশোনা শেষ করে লন্ডনেই চাকরি খুঁজতে শুরু করেন।
২০০৯ সালে ব্রিটেনে অর্থনৈতিক মন্দার ফলে চাকরির অভাব দেখা দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে মুম্বাইয়ে ফেরেন পরিণীতি। সেখানে ফিরেই বলিপাড়ার নামি প্রযোজনা সংস্থা যশরাজ ফিল্মসের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন।
২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবির প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেই সময় অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় পরির। প্রযোজনা সংস্থার চাকরি ছেড়ে তিনি অভিনয় শিখতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন।
২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লেডিস ভার্সেস রিকি বহল’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় পরিণীতিকে। বক্স অফিসে এই ছবি তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। এরপর ২০১২ সালে যশরাজ ফিল্মসের প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ইশকজাদে’। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান পরিণীতি। বনি কপূরের পূত্র অর্জুন কপূর এই ছবির মধ্য দিয়ে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন।
এরপর ‘শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স’, ‘হাসে তো ফাঁসে’র মতো রোম্যান্টিক ঘরানার ছবিতে অভিনয় করেন পরিণীতি। দু’টি ছবিই ভালো ব্যবসা করে এবং এই তারকা তার অভিনয়ের জন্য যথেষ্ট প্রশংসা পায়।
তবে ২০১৪ সালের শেষ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পরিণীতির ক্যারিয়ারের সূর্য অস্তমিত হয়ে পড়ে। সে সময় এই নায়িকা যে ছবিগুলিতে অভিনয় করেছিলেন সেগুলির একটিও তেমন ব্যবসা করতে পারেনি। ফলে অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন অভিনেত্রী।
পরিণীতি বলেন, দেড় বছর আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল। ‘দাওয়াত-এ-ইশক’ এবং ‘কিল দিল’ ছবি দু’টি ভাল চলেনি। পেশাগত দিক থেকে আমি ভেঙে পড়ছিলাম। আমার কাছে কোনও টাকা ছিল না। বাড়ি কেনার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করে ফেলেছিলাম। ব্যক্তিগত জীবনেও ঝড় বয়ে যায়। মন ভেঙে গিয়েছিল আমার। জীবনে ইতিবাচক কোনও কিছু ছিল না।
পরিণীতি আরও বলেন, ‘খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম আমি। কোনও বন্ধুবান্ধব ছিল না। এমনকি পরিবার থেকেও নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলেছিলাম। হয়তো দু’সপ্তাহে একবার তাদের সঙ্গে কথা বলতাম। নিজের ঘরের চার দেওয়ালের বাইরে বের হতাম না।’
খারাপ সময়ের কথা উল্লেখ করে পরিণীতি বলেন, ‘ঘরে বসে শুধু টিভি দেখতাম আর ঘুমাতাম। অসুস্থও হয়ে পড়তাম অধিকাংশ সময়। ছয় মাস কোনও মিডিয়ার সঙ্গেও কথা বলিনি আমি।’
পরিণীতি জানান, তার ভাই সাহেজ অবসাদ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন। অভিনেত্রী তার এক বান্ধবীর কথাও উল্লেখ করেন। সাক্ষাৎকারে পরিণীতি বলেন, ‘আমার ভাই সাহেজ সেসময় আমায় সঙ্গ দিয়েছিল। ও একমাত্র মানুষ যার সঙ্গে আমি রোজ কথা বলতাম। আমার বান্ধবী সঞ্জনাও সেই সময় আমার পাশে ছিল। দিনে অন্তত ১০-১২ বার কাঁদতাম আমি। দেড় বছর এই পরিস্থিতিতে থাকার পর ২০১৬ সালের গোড়ার দিকে সব ধীরে ধীরে ঠিক হতে শুরু করে।’
২০১৬ সাল থেকে পরিণীতি আবার নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন বলে সাক্ষাৎকারে জানান। ‘মেরি প্যারি বিন্দু’ এবং ‘গোলমাল’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবে রাজি হন তিনি। এমনকি শরীরচর্চার দিকেও মনোনিবেশ করেন।
বলিউডে ক্যারিয়ার শুরু করার সময় চেহারা নিয়ে কটাক্ষের শিকার হন পরিণীতি। মুখের গড়ন থেকে শুরু করে ওজন নিয়েও নানা রকম কু-মন্তব্য শুনতে হয়েছিল তাকে। বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, কটাক্ষের শিকার হয়ে শরীরচর্চার মাধ্যমে ২৮ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন অভিনেত্রী।
যদিও এই সবকিছুকে পেছনে ফেলে বর্তমানে নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত পরিণীতি। পাশাপাশি ৬ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে তার ছবিও মুক্তি পেতে চলেছে। টিনু সুরেশ দেশাইয়ের পরিচালনায় মুক্তি পাচ্ছে ‘মিশন রানিগঞ্জ’। এই ছবিতে পরিণীতির সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যাবে অক্ষয় কুমারকে।