জলবায়ু পরিবর্তন এবং জোয়ার ভাটা হ্রাস পাওয়ার ফলে বরিশালের নদীতে লবণাক্ততার সমস্যা বাড়ছে। ১০ বছর আগে যেখানে মাত্র ৪টি নদীতে লবণাক্ত পানি ছিল, বর্তমানে বরিশাল বিভাগের ২০টি নদী লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে বরিশালের ৮ লাখ ২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৫২% বা ৪ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়েছে, যা ফসল উৎপাদনে বড় ধরণের বাধা সৃষ্টি করছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সেচের জন্য সহনীয় লবণাক্ততা হলো নদীর পানিতে ০.৭ ডিএস/মিটার এবং মাটিতে ২ ডিএস, কিন্তু বরিশাল মৃত্তিকা ইন্সটিটিউটের রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে পানিতে ১৫ থেকে ২০ ডিএস/মিটার এবং মাটিতে ২৫ ডিএস/মিটার লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একীম মামুন বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে লবণ পানি ঢুকে যাচ্ছে। ২০২১ সালে কীর্তনখোলা নদীতে ক্ষতিকর লবণাক্ততা দেখা দেয় যা আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল।”
পটুয়াখালী মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী আমিনুল ইসলাম জানান, “লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের ফসল যেমন মুগডাল, সূর্যমুখী বা ভুট্টা চাষ করতে হবে। যদি লবণাক্ততার মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়, তবে জমিগুলো ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।”
গত ১০ বছরে বরিশালের আন্ধারমানিক, বিষখালী সহ ৪টি নদীতে শুকনো মৌসুমে লবণাক্ততা দেখা দিলেও বর্তমানে কীর্তনখোলা নদী এবং ভোলার একাংশসহ ২০টি নদীতে লবণাক্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় চাষিরা শঙ্কিত যে, ফসল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যাবে।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মুরাদুল হাসান বলেন, “বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লে নদী ও মাটিতে লবণাক্ততা কিছুটা কমে, তবে বৃষ্টি কমলে তা আবার বৃদ্ধি পায়। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাংগাবালীর চরমোন্তাজে স্থায়ী লবণাক্ততার দিকে যেতে শুরু করেছে, যার ফলে সাধারণ ফসল চাষ করা যাবে না।”
বরিশাল মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুষমা রানী হালদার বলেন, “প্রতি বছর আমরা মাটি ও পানি বিশ্লেষণ করে দেখে থাকি, শুকনো মৌসুমে লবণাক্ততা বেড়ে যায়, যা পানি ও মাটির গুণাগুণ কমিয়ে দেয়। কৃষকদের এ বিষয়ে নিয়মিত সতর্ক করা হচ্ছে।”
এদিকে, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে লবণাক্ততার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে, এবং মাটি ও পানির নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম