শিরোনাম

পিরোজপুরে সাঈদীর উদ্বোধনের ১৮ বছরেও চালু হয়নি ফেরিঘাটটি

Views: 14

পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার পানগুছি নদীর কলারন-সন্ন্যাসী ফেরিঘাট, এক সময়ের জমজমাট ফেরিঘাটটি এখন দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে একটি ফেরি ছিল। ২০০৬ সালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও পিরোজপুর-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ফেরিঘাটটি উদ্বোধন করেন। তবে ২০০৭ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরে কলারন প্রান্তের ঘাটটি বিধ্বস্ত হয়। এরপর থেকে ১৮ বছরেও পুনরায় সংস্কার করে চালু করা হয়নি পিরোজপুর-মোরেলগঞ্জ-মোংলা-শরণখোলা রুটের ওই ফেরিঘাটটি।

ফলে এই নৌপথে চলাচলকারী কয়েক হাজার যাত্রী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হচ্ছেন। দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ফেরিঘাটটি চালু করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

নদীর দুই পাড়ের ফেরির পন্টুনগুলো সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর কয়েক বছর পড়েছিল। পরবর্তীতে মেরামতের জন্য নিয়ে গেলে আজও সেখানে পন্টুন দেওয়া হয়নি। সেই ঘাটটি দিয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন দুই পাড়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে চলাচল করে। নদীটি প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরত্ব এবং খরস্রোতের কারণে প্রায়ই ট্রলারে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে পার হতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। বৃষ্টির মৌসুমে এই নদী পার হতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এছাড়া এটি পিরোজপুর থেকে সুন্দরবন যাওয়ার একমাত্র পথ হওয়ায় এখান থেকে সুন্দরবন, মোংলা, শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জসহ দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা সংলগ্ন পানগুচি নদীর কলারন-সন্ন্যাসী ফেরিঘাটটি ২০০৬ সালের ৪ আগস্ট চালু হয়। চালুর এক বছর পর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরে কলারন প্রান্তের ঘাটটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। এরপর নদী পারাপারের জন্য চালু করা হয় ট্রলার। তবে দুই পাড়ের যাত্রী ওঠানামার ঘাটটিও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়। যাত্রীরা কোনো মতে ওঠানামা করতে পারলেও মোটরসাইকেল ওঠানামার ক্ষেত্রে থাকে প্রচুর ঝুঁকি। দুই পাড়ের ঘাটের অবস্থা ভালো না থাকায় অনেক সময় নদীতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় যাত্রীদের। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ঘাটটি তলিয়ে যাওয়ায় আরও বেশি বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীদের। এই পথে না গিয়ে সড়ক পথে যেতে গেলে ৩৫ কিলোমিটার পথ বেশি ঘুরে বাগেরহাটের সাইনবোর্ড হয়ে যেতে হয় এই এলাকার লোকজনকে।

এদিকে পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর-নাজিরপুর-ইন্দুরকানী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ফেরিঘাটটি চালু করেছিলেন বলে সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় সংস্কার করে ফেরিঘাটটি চালু করেনি বলে দাবি এলাকাবাসীর।

ইন্দুরকানী উপজেলার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৬ সালে আল্লামা সাঈদী সাহেব ফেরিটি চালু করেন। এর আগেও কেউ করেনি, পরেও করেনি। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড়ে ফেরিঘাটটি নষ্ট হয়ে যায় এরপর আর কেউ করেনি। সাঈদী সাহেবের বাড়ির এলাকা হওয়ায় ফেরিঘাটটি করতে কেউ আগ্রহ দেখায়নি। আমাদের দাবি আবারও এখানে একটি ফেরিঘাট হোক। আমারদের খুব উপকার হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাসান জোমাদ্দার বলেন, নদীটি পার হতে ট্রলারই আমাদের একমাত্র ভরসা। বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই ট্রলার বন্ধ থাকে। তাছাড়া এ সময় নদীতে বেশি ঢেউ থাকায় ট্রলারে করে নারী ও শিশুদের নিয়ে নদী পারাপার অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে, অসুস্থ রোগী ও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন। আমাদের দাবি হাজারো মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে আবারও কলারন সন্ন্যাসীর ফেরি চালু করা হোক।

ট্রলার চালক শাহজাহান মিয়া বলেন, এই ঘাটের পাশেই নদীর মোহনা হওয়ায় প্রায়ই নদীতে অনেক ঢেউ হয়। দুই পাশে ভালো ঘাট নেই। যাত্রীদের অনেক কষ্ট হয়। তুফান থাকলে যাত্রীরা অনেক ভয় পায়। বাচ্চারা কান্নাকাটি করে। আমরা ভয় পাই মাঝে মধ্যে। এখানে একটি ফেরি জরুরি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মিঠু হাওলাদার বলেন, ব্যবসার কারণে নিয়মিত এই পথে যাতায়াত করতে হয়। এই ঘাটে মাত্র দুটি ট্রলার থাকার কারণে প্রায়ই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ট্রলারে উঠতে এবং নামতেও চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। পারাপারেও বেশি ভাড়া গুনতে হয়। মোটরসাইকেল প্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা দিয়ে পার হতে হয়। এই পথে না যেতে পারলে ৩৫ কিলোমিটার বেশি ঘুরে যেতে হয়। আমাদের এখানে একটা ফেরি খুব প্রয়োজন।

এ বিষয়ে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি খুব দ্রুত এ বিষয়ে একটি ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে।

মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *