পিরোজপুর জেলার দুইটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পিরোজপুর সদর উপজেলা এবং কাউখালী উপজেলার এই নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের যোগসাজশে এই অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে মেসার্স রাজ অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যার স্বত্বাধিকারী সাবেক পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ছিলেন, এবং তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক অভিযোগ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্সের প্রোপাইটর নাসির খান জানান, তারা তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে মসজিদ দুটির কাজ পায়। এর মধ্যে সাবেক পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের প্রতিষ্ঠানও ছিল। তার প্রভাবের কারণে তারা অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি মেসার্স রাজ অ্যান্ড ব্রাদার্সকে দেয়। তবে গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক মেয়র মালেক কাজটি বিক্রি করে এবং আত্মগোপনে চলে যান। তিনি জানান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে, আর এর দায়ভার তারা নেবেন না।
তথ্য মতে, ৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫ অক্টোবর মসজিদ দুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান—ইলেক্ট্রো গ্লোব, মেসার্স খান বিল্ডার্স, এবং মেসার্স রাজ অ্যান্ড ব্রাদার্স—এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠান কাজ না করে মালেকের প্রতিষ্ঠানকে কাজের অনুমতি দেয়।
নির্মাণকাজ তদারকির জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রকৌশলী উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পস্থলে কোনো প্রকৌশলী উপস্থিত না থাকায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি, ৮০ ফুট পাইল কাস্টিং করার কথা থাকলেও সেখানে ৫৫ ফুটের পাইল কাস্টিং করা হয়েছে। ঢালাইয়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের রড, ইট এবং বালু।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, মডেল মসজিদের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের নির্মাণস্থলে কোনো সাইনবোর্ড নেই। টিনের বেড়া দিয়ে ঢেকে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের প্রতিবাদে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে সাবেক মেয়র মালেক প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ পুনরায় শুরু করেন।
এই বিষয়ে মেসার্স রাজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের ঠিকাদার হাবিবুর রহমান মালেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অনিরুদ্ধ মণ্ডল বলেন, “কাজের ত্রুটি খুঁজে বের করা গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্ব। আপনাদের নয়।”
পিরোজপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খাইরুজ্জামান বলেন, “প্রতিটি প্রকল্প তদারকির জন্য একজন ইঞ্জিনিয়ার থাকা বাধ্যতামূলক। হয়তো আপনারা তাকে পাননি।”
বরিশাল গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মানিক লাল দাস বলেন, “এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম