বরিশাল নগরীতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে নগরবাসীর একটি বড় অংশ। সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার একুশ বছরেও স্বাস্থ্যসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি, ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাড়ছে বিভিন্ন রোগের প্রকোপও। এমনকি, ডাম্পিং স্টেশনের আশপাশের বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বিগত একুশ বছরে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রয়োজনীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম গড়ে উঠেনি, ফলে নগরের বাসিন্দাদের জীবন হয়ে উঠেছে অস্বস্তিকর। বিশেষ করে, কাউনিয়া এলাকা, যেখানে প্রতিদিন আবর্জনা ফেলা হয়, সেখানে অবস্থানরত বাসিন্দারা পোহাচ্ছেন এক অমানবিক পরিস্থিতি।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুর রহমান জানান, তার বাড়ির শান্তিনীড় নামক স্থানে বাস করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। মশা, মাছি ও দুর্গন্ধে তাদের ২৪ ঘণ্টাই সমস্যায় কাটে। তিনি বলেন, “ঘরে মশারির নেট টাঙিয়ে থাকতে হচ্ছে, জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে।”
অন্যদিকে, ময়লা খোলার বাসিন্দা রুহিনা আক্তার অভিযোগ করে জানান, তার পাঁচ বছরের কন্যা শিশুটি নিয়মিত অসুস্থ হয়ে পড়ে। সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিদিনই তাদের বাড়ির সামনে খোলা মাঠে শহরের সব আবর্জনা ফেলে রাখে, যা শিশুদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, শহরের ৩০টি ওয়ার্ডের বর্জ্য প্রতিরাতে ট্রাক ভর্তি করে কাউনিয়া এলাকায় ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, যা শহরের স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, ডাম্পিং স্টেশনের আশপাশের এক কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী পরিবারগুলো অতি কষ্টে ভাড়া বাসায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। পশু-পাখি এসব আবর্জনা ছড়িয়ে দেয়, যা পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এতে রোগের সংক্রমণও বাড়ছে।
বরিশাল সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, “যদি আবর্জনাকে উন্মুক্ত স্থানে রাখা হয় এবং তা যথাযথভাবে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বিনষ্ট না করা হয়, তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। বায়ু ও পানিবাহিত রোগ হতে পারে।”
এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল বারী জানান, “ডাম্পিং স্টেশনের জন্য নতুন জায়গা খোঁজার চেষ্টা চলছে এবং অর্থ বরাদ্দ পেলে জনবসতি থেকে দূরে একটি নতুন ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে।”
বরিশাল শহরে ৫৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ছয় লাখ মানুষ বসবাস করছে। ডাম্পিং স্টেশনের বর্জ্য সাপানিয়া খাল হয়ে কীর্তনখোলা নদীতে গিয়ে মেশে, যার মধ্যে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্যও থাকে, যা নগরীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম