মো:আল-আমিন,পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর দুমকিতে ঈশিতা রানী (২২) নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। স্বামী ও তার পরিবারের দাবি- স্ট্রোক করার পর বরিশাল রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অপরদিকে, ঈশিতাকে হত্যার অভিযোগ করেছেন গৃহবধূর বাবা কৃষ্ণকান্ত মাঝি।
গত বুধবার রাতে বরিশাল রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৃহবধূ ঈশিতার মৃত্যু হলে রাত ৩টায় মরদেহ স্বামীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার উত্তর মুরাদিয়ায় নিয়ে আসা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তিন বছর আগে উপজেলার উত্তর মুরাদিয়া গ্রামের কৃষ্ণকান্ত মাঝির মেয়ে ঈশিতা রানী (২২)-র সাথে একই গ্রামের ধীরেন মিস্ত্রির ছেলে গাড়ি চালক সজল মিস্ত্রির বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ১৬ মাসের একটি শিশু সন্তান রয়েছে।
মৃত গৃহবধূর মা উষা রানী অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকেই নানা অজুহাতে তার মেয়ের ওপর শাশুড়ি ও জামাই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত। এ নিয়ে দুই পরিবারে দীর্ঘ মনমালিন্য রয়েছে। ঈশিতার শাশুড়ি তাকে সব সময় ঘরবন্দি করে রাখত এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলতে দিত না। তারা মা-ছেলে মিলে নির্যাতন করেই আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে।
হতদরিদ্র ঈশিতার বাবা কৃষ্ণকান্ত মাঝি অভিযোগ করেন, ঈশিতাকে মুমূর্ষু অবস্থায় পটুয়াখালীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করার খবরও দেওয়া হয়নি। লোকমুখে খবর পেয়ে দেখতে গিয়ে অচেতন দেখি। অচেতন অবস্থায় আমাদের রেখে তারা ঈশিতাকে বরিশাল রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে নেয়। তারা শ্বশুর, শাশুড়ি ও জামাই মিলে পরিকল্পিতভাবেই অত্যাচার-নির্যাতন করে আমার মেয়েটাকে মেরেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
থানায় অভিযোগ করার বিষয়ে তিনি বলেন, সজলের পরিবারের লোকজন তাকে থানায় অভিযোগ করতে বাধা দিচ্ছে।
গৃহবধূর স্বামী সজল মিস্ত্রি অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্ট্রোকে মারা গেছে। হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ আছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু হানিফ জানান, ঈশিতাকে ঘরবন্দি করে রাখার খবর লোকমুখে শুনেছি। মেয়েটি মানসিক অশান্তির কারণে স্ট্রোক করে থাকতে পারে।
খবর পেয়ে দুমকি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহবুবুর রহমানসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে মৃত গৃহবধু ঈশিতার বাবা কৃষ্ণকান্ত মাঝির আবেদনের ভিত্তিতে দুমকি থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
দুমকি থানার ওসি মো. আবদুল হান্নান অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।