সরকার ভোলা থেকে খুলনা পর্যন্ত ৪,৫০০ কোটি টাকার একটি গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে ভোলার প্রাকৃতিক গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জ্বালানি ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে, এটি গ্যাস-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভূমিকা রাখবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর এক বৈঠকে এই পাইপলাইন তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ইতোমধ্যেই প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে। ২০৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের নির্মাণ কাজ ২০২৯ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি মূলত ভোলা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, তবে পরে খুলনা পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পাইপলাইন দিয়ে ভোলার শাহবাজপুর, ভোলা উত্তর এবং ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রের নয়টি কূপ থেকে উত্তোলিত গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের দৈনিক গ্যাস সরবরাহ ক্ষমতা ২,৮০০ থেকে ৩,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন পাইপলাইন নির্মাণের মাধ্যমে আগামী ১৯ বছরে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন আরও ১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে, বিশেষ করে খুলনা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং এই অঞ্চলটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পোন্নত এলাকায় পরিণত হতে পারে। নতুন শিল্প স্থাপনের সুযোগ তৈরি হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে।
ভোলা একটি দ্বীপ হওয়ায় সেখানে পাইপলাইন নির্মাণ চ্যালেঞ্জিং হবে, কারণ ভোলা একাধিক নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং এর কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। তবে, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স সম্ভাব্য রুট বিশ্লেষণ করেছে এবং প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে।
জিটিসিএল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বরিশাল থেকে খুলনা পর্যন্ত পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে এবং এই প্রক্রিয়া যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ।
এছাড়া, ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০টি নতুন কূপ খনন এবং ২০২৬ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে আরও ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে ভোলায় গ্যাস মজুত বাড়ানো সম্ভব হবে এবং দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৩৬০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত বাড়ানোর আশা করা হচ্ছে।
গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বিষয়ে সরকারের অগ্রাধিকার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এটি ভোলার বিশাল গ্যাস মজুতকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে সহায়তা করবে।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম