শিরোনাম

৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি, ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস

Views: 8

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: কাতারের রাজধানী দোহায় চূড়ান্ত করা হচ্ছে গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি। ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়টি ৪২ দিন স্থায়ী হবে এবং এ সময় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস তাদের হাতে বন্দি থাকা ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে।

ইসরাইলের ধারণা, মুক্তি পেতে যাওয়া জিম্মিদের বেশিরভাগই জীবিত আছেন। সোমবার এক জ্যেষ্ঠ ইসরাইলি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তবে যারা মুক্তি পাবেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন ‘নিহত’ জিম্মিও থাকবেন—অর্থাৎ, তাদের মরদেহ ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করবে হামাস।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণ সীমান্তে হামলা চালায় হামাস। সে সময় ২৫১ ব্যক্তি জিম্মি হন। তাদের মধ্যে এখনো ৯৪ জন হামাস ও তাদের মিত্রদের কাছে বন্দি আছেন বলে ধারণা করা হয়।

ইসরাইলি সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই ৯৪ জনের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন ইতোমধ্যে নিহত হয়েছেন। নিহতদের মরদেহ হস্তান্তরকেও জিম্মি মুক্তির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে এবং এর শর্তগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য ইসরাইল প্রস্তুত আছে।

সোমবারের এক বক্তব্যে একই ধরনের আশাবাদ প্রকাশ করেছেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

পররাষ্ট্রনীতির ওপর দেওয়া এই বক্তব্যে তিনি জানান, এই চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বড় আকারে চাপ অব্যাহত রেখেছে।

তিনি আরও জানান, আমরা যে চুক্তির কাঠামো তৈরি করেছি, তাতে জিম্মিরা মুক্তি পাবে, যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং ইসরাইল নিরাপত্তা পাবে। এর ফলে আমরা হামাসের শুরু করা যুদ্ধে ভয়াবহ পর্যায়ের দুর্ভোগ পোহানো ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মানবিক সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে পারব। তাদেরকে কার্যত নরক-যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে।

এই আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছেন এমন এক কূটনীতিবিদ সিএনএনকে জানান, আজ মঙ্গলবার দোহায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে চুক্তির সব বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হতে পারে।

পাশাপাশি, আজ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কয়েকজন জিম্মির পরিবারের সদস্যদের দেখা করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করছে।

প্রথম চুক্তি চালুর ১৬তম দিবস থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু হবে। সংশ্লিষ্টদের আশা, দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধবিরতিতে স্থায়ীভাবে গাজার সংঘাতের অবসান হবে।

সর্বশেষ প্রস্তাব মতে, ইসরাইলি বাহিনী ফিলাডেলফি করিডরে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখবে। মিশর-গাজা সীমান্তের এই অপ্রশস্ত ভূখণ্ডে চুক্তির প্রথম পর্যায়ে ইসরাইলি সেনারা এই করিডর ছাড়বেন না।

সেপ্টেম্বরের সর্বশেষ রাউন্ডের যুদ্ধবিরতি আলোচনা এই শর্তের কারণেই ব্যর্থ হয়েছিল বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। হামাসের জোর দাবি ছিল যুদ্ধবিরতির শুরু থেকেই গাজা থেকে ইসরাইলি সামরিক উপস্থিতি পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া।

তবে এবার হামাস এই শর্ত মেনে নেওয়ার আভাস দিয়েছে।

পাশাপাশি, ইসরাইল গাজার ভেতর একটি বাফার জোন তৈরি করবে বলে জানান ইসরাইলি কর্মকর্তা। ইসরাইল-গাজা সীমান্ত নিরাপদ রাখতেই এই উদ্যোগ। তবে এই বাফার জোন কতটুকু জায়গা জুড়ে স্থাপন করা হবে, তা জানাননি তিনি।

এ বিষয়টিও চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল।

এক জ্যেষ্ঠ ইসরাইলি কর্মকর্তা সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, রোববার রাতে দোহায় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক ডেভিড বারনিয়ার আলোচনায় তারা আশার আলো দেখতে পেয়েছেন।

কর্মকর্তা বলেন, খুব শিগগির চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে—তবে কয়েক ঘণ্টা না কয়েকদিনের মধ্যে, তা বলা সম্ভব নয়।

তিনি জানান, চুক্তির শর্তগুলো শিগগির বাস্তবায়নের জন্য ইসরাইল প্রস্তুত, তবে তা শুরুতে নিরাপত্তা ক্যাবিনেট ও সরকারের পূর্ণাঙ্গ ক্যাবিনেটের অনুমোদন পেতে হবে।

এক আরব কর্মকর্তা বলেন, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আমরা যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য বেশি প্রস্তুত আছি। তবে এখনো দোহার মধ্যস্থতাকারীরা উভয় পক্ষের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক জবাবের অপেক্ষায় আছে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *