নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে যখন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা রাজপথে ছিলেন, তখন বরিশালের শীর্ষ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপন এবং কারাগারে থাকায় তাদের উপস্থিতি ছিল না। যদিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও সেরনিয়াবাত ভবন ছিল একেবারে নিস্তব্ধ।
বরিশাল নগরের সোহেল চত্বরস্থ নগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি একসময় ছিল একাধিক কর্মসূচি ও দলীয় মিটিংয়ের কেন্দ্রস্থল। দীর্ঘ এক যুগ ধরে এটি সরব ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় এবং স্লোগানে। তবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে গত কয়েক বছর ধরে দলের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম সেরনিয়াবাত ভবন থেকে পরিচালিত হতে থাকে। এরপর থেকেই ভবনটি ছিল বরিশালের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
তবে, সম্প্রতি, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সিটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করলে সোহেল চত্বরের কার্যক্রম কিছুটা ধীর হয়ে পড়ে। এর ফলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয় এবং অনেক সিদ্ধান্ত নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে সাধারণ জনগণ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, এবং তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।
২০২৫ সালের শুরুতে, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর বরিশালের রাজনীতি পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে যায়। দলীয় নেতারা পালিয়ে গিয়ে নগরবাসী কিছুটা স্বস্তি পায়। বিশেষত, কালিবাড়ি রোডের ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাদের দীর্ঘ ৫-৬ বছরের ভোগান্তি শেষ হয়ে গেছে, কারণ সেরনিয়াবাত ভবন থেকে নেতাকর্মীদের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে এবং এখন রাস্তায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে এসেছে।
একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বরিশালের বিবির পুকুরের দক্ষিণ প্রান্তেও, যেখানে সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবনের নিচতলার পশ্চিম প্রান্তে আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। এই ঘটনায় পুরো অ্যানেক্স ভবনও ধ্বংস হয়ে যায়। তবে বর্তমানে, এখানে নেতা-কর্মীদের পদচারণা নেই এবং স্থানটি শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, বরিশালের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের শিকার ছিল, যার ফলে তাদের মাঝে বিরক্তি ও ক্ষোভ জমা হয়ে গেছে। ৪ ও ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লব সেই ক্ষোভেরই ফলস্বরূপ ছিল, এবং এই ঘটনাগুলোর ফলে আওয়ামী লীগের নেতারা বর্তমানে রাজপথে অনুপস্থিত।
নগরবাসী এখন এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়ে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছেন, যদিও অনেক নেতাই এখনও দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বা কারাগারে রয়েছেন।
মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম