শিরোনাম

দশমিনায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

Views: 60

মো: আল-আমিন,পটুয়াখালী: পটুয়াখালীর দশমিনায় টেস্ট পরীক্ষার ফি পরিশোধ না করায় শিক্ষকের বকাঝকা ও পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে না পেরে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে তন্ময় চক্রবর্তী (১৫) নামে ১০ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।

সোমবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার আরোজবেগী এস এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

এদিন বেলা ১১টায় তন্ময় চক্রবর্তী বিদ্যালয় ভবনে বসে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করে। সে উপজেলার ওই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক গোপাল চন্দ্র চক্রবর্তীর একমাত্র ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আরোজবেগী এস এ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। তন্ময় সকালে সঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। পরীক্ষার হলের কক্ষ পরিদর্শক মরিয়ম বেগম তন্ময়কে ডেকে বলেন, তোমার টাকা বকেয়া আছে। তুমি পরীক্ষা দিতে পারবে না। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করে অনুমতি নিয়ে আস।

তন্ময় প্রধান শিক্ষক কাওসার হোসেন স্যারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, টাকা ছাড়া তোমার পরীক্ষা দেওয়া হবে না। তারপর তন্ময় তার মায়ের কাছে গিয়ে টাকা চাইলেও টাকা না পেয়ে বিদ্যালয়ে ফিরে আসে এবং প্রধান শিক্ষকের কাছে আবারও পরীক্ষায় বসার অনুমতি চাইলে প্রধান শিক্ষক তন্ময়ের সহপাঠীদের সামনে তাকে নেশাখোর বলে চড়থাপ্পর দেন।
প্রধান শিক্ষকের কথায় অভিমান করে তন্ময় বিদ্যালয় ভবনে বসে অনেকগুলো গ্যাসের ওষুধ খায়। এরপর ওষুধের প্রতিক্রিয়া শুরু হলে সে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে যায় এবং সেখানে গিয়ে বমি করে শিক্ষকের টেবিলের উপর পড়ে যায়। তখন তন্ময়কে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকেরা মিলে দশমিনা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মিঠুন চন্দ্র হাওলাদার তন্ময়কে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য পটুয়াখালী জেরারেল হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় বিকেল ৫টায় তন্ময়ের মৃত্যু হয়।

তন্ময়ের মা বলেন, প্রধান শিক্ষক টাকা না দিলে পরীক্ষা দিতে দেবে না বলে আমার ছেলেকে স্কুল থেকে চলে যেতে বলে। আমি সন্ধ্যা ৬টায় শুনি তন্ময় গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে পটুয়াখালী হাসপাতালে মারা গেছে। আমার মৃত স্বামী ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিল।

মৃত তন্ময়ের সহপাঠী রিফাত বলে, তন্ময়, আমি ও আরও করেকজনকে মরিয়ম ম্যাডাম প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠান। স্যার তখন তন্ময়ের সঙ্গে অনেক রাগারাগি করে। আর আমাদের অনুমতি দেওয়ায় আমারা পরীক্ষার হলে চলে যাই। পরে শুনি তন্ময় গ্যাসের ট্যাবলেট খাইছে, তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।

প্রধান শিক্ষক কাওসার আলম বলেন, কি হয়েছে জানি না। বিদ্যালয় আসার পর তন্ময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা জানার সঙ্গে সঙ্গে দশমিনা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। সেখানেও নিয়ে যাওয়া হয়। পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তবে টাকা বকেয়া থাকায় পরীক্ষা দিতে অনুমতি না দেওয়া এবং চড়থাপ্পর দেওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

পটুয়াখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, সোমবার রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল থেকে আনা হয়েছে। এখনো মরদেহ মর্গে রয়েছে। একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ দেওয়া হবে।

image_pdfimage_print

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *