বরিশাল অফিস: মুলাদীতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে প্রশাসনের জব্দ করা জাল জেলেদের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় একটি চক্র জব্দকৃত জাল নিয়ে জেলেদের কাছে বিক্রি করছেন। অভিযানে জব্দ জালের নামমাত্র কিছু অংশ পুড়িয়ে বেশিরভাগ জাল বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন জেলে ও স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় সাধারণ মানুষ বিক্ষুদ্ধ হয়ে সোমবার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের বেপারীর হাট এলাকায় অভিযানে থাকা পুলিশকে ধাওয়া করে। এ ছাড়া নদীতে জাল কেনা-বেচার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১১ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা থেকে মা ইলিশ সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর ১২ অক্টোবর নদীতে অভিযান শুরু করে প্রশাসন ও নৌ-পুলিশ। উপজেলার আড়িয়ালখা নদে এবং জয়ন্তী নদীতে ১৭টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং ৩টি স্পিডবোট নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তার অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের সময় নদী থেকে জেলেদের আটক না করতে পারলেও বিপুল পরিমান জাল জব্দ করা হয়। এসব জালের কিছু অংশ পুড়িয়ে বেশিভাগ অংশ ট্রলার চালকের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের এলাকাভিত্তিক নেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। ওই নেতারা কমদামে জাল ক্রয় করে জেলেদের কাছে বেশি বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ জেলেদের।
দড়িচরলক্ষ্মীপুর এলাকার জেলে মো. সিদ্দিক জানান, অভিযানে জব্দ করা জাল পুরাতন হলে পুড়িয়ে নষ্ট করা হয় আর নতুন করে বিক্রি করে দেয়। গত রোববার রাতে আড়িয়ালখাঁ নদ থেকে জব্দকৃত প্রায় ১০০ মিটার জাল ক্রয় করেছেন তিনি। অভিযানে থাকা জনৈক ট্রলার চালক এই জাল বিক্রি করেছেন। বাজারে জাল কিনতে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাগে। সেখানে অভিযানে জব্দ করা জাল প্রায় অর্ধেক কিংবা দুই তৃতীয়াংশ দামে কেনা যায়।
উপজেলার সফিপুর গ্রামের আব্বাস হাওলাদার জানান, জয়ন্তী নদী থেকে তার ২০০মিটার জাল জব্দ করে নেয় উপজেলা মৎস্য কার্যালয়। স্থানীয় নেতার হাত ঘুরে সেই জাল একই এলাকায় এক জেলের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। প্রশাসন জাল জব্দ করে ব্যবসা করছেন। এতে কিছু জেলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আর স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের সহকারী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নদী থেকে জব্দ করা জাল কেনা-বেচার বিষয়ে আমার কিছুই জানা নাই। অভিযানে থাকা কর্মকর্তার জাল জব্দ করে পুড়িয়ে থাকেন।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দীন বলেন, জব্দ করা জাল বিনষ্ট না করে বিক্রির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি।
বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।