চন্দ্রদীপ নিউজ : ১৬ ই ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আজকের দিনে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। ৩০ শহীদ আর লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হ স্বাধীনতা।
৩০ লাখের অধিক প্রাণ আর লাখ লাখ মায়ের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে নিজেকে মুক্ত করেছে দীর্ঘকালের নাগপাশ আর বঞ্চনা থেকে।
আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের শেষে বাংলার শোষিত মানুষ পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ, বিজয়ের আনন্দ। আজ সেই মহান বিজয় দিবস। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত গোটা জাতি- নেবে সাম্য ও মানবিক দেশ গড়ার অঙ্গীকার।
মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা করা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।
বিদেশি কূটনীতিকরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
বঙ্গভবনে অপরাহ্নে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এ উপলক্ষ্যে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ) ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে এবং চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের জাহাজগুলো দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরগুলো বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।
স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, লাখো শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে দেওয়া রোববার এক বাণীতে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন- ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, গড়ে তুলি উন্নত-সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ- মহান বিজয় দিবসে এ আমার প্রত্যাশা।
দেশকে আরও উন্নত ও স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর : প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। ‘মহান বিজয় দিবস’ উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গৌরবময় এবং স্মরণীয় দিন। লাখ লাখ শহিদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়ে যাই আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। তিনি বলেন, বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার। তিনি বলেন, আজকের এদিনে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহিদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করছে।