সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির আবেদন আজ থেকে শুরু

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: সরকারি-বেসরকারি স্কুলে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির আবেদন শুরু হচ্ছে আজ (মঙ্গলবার) থেকে। বেলা ১১টা থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এই প্রক্রিয়া চলবে ৩০ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। আবেদন শেষে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই ও ভর্তি করানো হবে।

এবারের ভর্তির আবেদন ফি ১১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান টেলিটকের মাধ্যমে এ ফি পরিশোধ করতে হবে।

ডিজিটাল লটারি শেষে আগামী ১৭ ডিসেম্বর শুরু হবে ভর্তি কার্যক্রম। যা চলবে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর প্রথম অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ভর্তি শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর দ্বিতীয় অপেক্ষমাণ তালিকার ভর্তি চলবে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।




বরিশাল মডেল স্কুলের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ

বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। রোববার সকাল ১১টায় নগরীর বাধরোড শিশু পার্কের সামনে সড়ক অবরোধ করে তারা এ প্রতিবাদ জানায়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. এহতেসাম উল হক ২০২১ সালের জুন মাস থেকে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। তার আমলে, বিশেষত সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে নানা সময়ে ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে দুর্ব্যবহার এবং অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, তিনি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন এবং সাধারণ মানুষের সাথে কোনো সহযোগিতা বা সহানুভূতি দেখান না বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. এহতেসাম উল হক আমাদের সাথে ঠিকমতো ব্যবহার করেন না। তিনি আমাদের নানা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে শুধু দুর্ব্যবহার করেন।’’ শিক্ষার্থীরা আরও জানান, তিনি অভিভাবকদেরও কোনো গুরুত্ব দেন না, তাদের সাথেও তার আচরণ অসংবেদনশীল।

এ ঘটনার পর, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন। এ সময় তারা ১০ দফা দাবি তুলে ধরে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে শিগগিরই পদক্ষেপ না নেয়া হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন।

পরে শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল এসে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেন। তারা শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দেন। এরপর শিক্ষার্থীরা ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে তাদের মানববন্ধন শেষ করে ক্লাসে ফিরে যান।

মো: তুহিন হোসেন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম




খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রথম পুনর্মিলনী উৎসব উদযাপন

“এখানে ছিল- এখানে আছে, আমাদের ঋণ তোমারই কাছে” স্লোগানকে ধারণ করে সাগরপারের জনপদ কলাপাড়ার ঐতিহ্যবাহী খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রথম পুনর্মিলনী উৎসব উদযাপনের আহ্বান জানিয়ে শহরে বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে সকল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয় এই র‍্যালির মাধ্যমে।

রবিবার সকাল দশটায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে র‍্যালিটি শুরু হয়ে কলাপাড়া পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফের বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। র‍্যালি শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম বিশ্বাস, উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির তালুকদার, সদস্য সচিব রেজাউল করিম বাবলা, প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম। র‍্যালিতে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছাড়াও শত শত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এদিকে, আগামী ২৮ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান উদযাপনের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে এতে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং নিবন্ধনের শেষ তারিখ আগামী ১৫ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে কলাপাড়ায় ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।

মো: আল-আমিন
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চন্দ্রদ্বীপ নিউজ ২৪ ডট কম



প্রজ্ঞাপন জারি, যারা পারবেন না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: ট্রাস্ট ও অন্যান্য সংস্থা পরিচালিত স্কুল-কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনোনয়ন আগের মতোই সংস্থা প্রধান দেবেন। পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের আওতার বাইরে থাকবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গভর্নিংবডি-ম্যানেজিং কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রবিধানমালা-২০২৪-এর প্রবিধি ৬৩-তে উল্লিখিত ট্রাস্ট, মিশনারি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কালেক্টরেট, পুলিশ লাইন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, রেলওয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ড বা অন্য কোনো সংস্থা বা ফাউন্ডেশন পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০ আগস্টের ১৮৩ নম্বর প্রজ্ঞাপনের আওতা বহির্ভূত থাকবে।
অর্থাৎ বিভাগীয় কমিশনার-জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং তার মনোনীত প্রার্থী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সভাপতি হতে পারবেন না।

এদিকে ২০ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে বিভাগীয় কমিশনার-জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা তাদের মনোনীত প্রার্থীকে দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে বেসরকারি ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০২৪’-এর ৬৮ অনুযায়ী নির্দেশনা দেওয়া হলো।




বিশ্বের ৩ শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: পার্সটুডে- ইহুদিবাদী ইসরাইলের বেন-গুরিয়ন ইউনিভার্সিটির প্রধান ড্যানিয়েল চামুভিট্‌স বলেছেন, আল-আকসা তুফান অভিযানের পর থেকে এ পর্যন্ত ‌আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ ইসরাইলের শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে তিনশ’র বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইসরাইলি দৈনিক ‘ইয়েদিউত আহারোনোত’ এ তথ্য জানিয়েছে।
বেন-গুরিয়ন ইউনিভার্সিটির প্রধান আরও জানিয়েছেন, ইসরাইলের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞায় বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ, আমেরিকা এবং কানাডা শামিল হয়েছে।

বার্তা সংস্থা ‘মেহের নিউজ’ এসব নিষেধাজ্ঞার ধরণ সম্পর্কে লিখেছে, এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ইসরাইলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেওয়া, যৌথ নিবন্ধের প্রকাশনা বাতিল করা, ইসরাইলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্রের শিক্ষক ও গবেষকদের সম্পর্ক ও সহযোগিতা বাতিল করা, এমনকি দখলদার ইসরাইলের সাথে সহযোগিতা রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠাগুলোকে সহায়তা প্রদান বন্ধের পাশাপাশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার করা।

বেন-গুরিয়ন ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট আরও জানিয়েছেন, গাজা ও লেবাননে ইসরাইলি হামলা তাদের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রায় এক-চতুর্থাংশকে সেনাবাহিনীতে ডাকা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বেন-গুরিয়ন ইউনিভার্সিটির প্রধান ড্যানিয়েল চামুভিট্‌স গত এক বছরের যুদ্ধের প্রভাবকে অকল্পনীয় হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থীকে সেনাবাহিনীতে ডাকা হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর পর থেকে ইহুদিবাদী ইসরাইল গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। লেবাননেও এখন একই কায়দায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার সেনারা।




মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা রেখেই ঢাবির ভর্তি কার্যক্রম

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। যে আন্দোলনের শুরুটা ছিল কোটা সংস্কার ঘিরে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-নাতি-নাতনিদের জন্য বরাদ্দ করা ৩০ শতাংশ কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।

অথচ অভ্যুত্থানের তিন মাস না পেরোতেই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা বহাল রেখে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই ভর্তি প্রক্রিয়া জুলাই বিপ্লবের চেতনাবিরোধী বলে মনে করছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।




পাঠচক্র থেকে গণ-অভ্যুত্থানে

ভাবিনি কখনো সামনের সারিতে এসে রাজনীতি করব। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকে রাজনীতিতে আগ্রহ ছিল। যুক্ত ছিলাম প্রথম কোটা আন্দোলনে। সামাজিক একটা পরিবর্তন চাইতাম। যখন প্রথম বর্ষে পড়ি, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে আমার এক সহপাঠীকে আটক করা হয়। ঘটনাটি আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।

২০১৯ সালে নুরুল হকের প্যানেল থেকে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিই। কিন্তু প্রথাগত ধারার রাজনীতি কখনো সেভাবে আমাকে আকর্ষণ করেনি। তাই নুরুল হকের সংগঠনে পরে আর যুক্ত হইনি। তবে ক্যাম্পাসের যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনে সব সময় সোচ্চার ছিলাম। ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে যে আন্দোলন হয়, সেখানে ছিলাম। সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমার ভূমিকা ছিল। ২০২০ সালে সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী ৫৫ দিন কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে আমরা অড্ডা দিয়েছি, মাহফুজ ভাইয়ের (মাহফুজ আলম) সম্পাদনায় কাঁটাতার নামে পত্রিকা বের করেছি। ওই সময় আমার ভেতরে একটা পরিবর্তন আসে। বুঝতে পারি, নতুনভাবে শুরু করতে হবে। তবে কী করব, তা জানতাম না। এ সময় পৃথিবীতে করোনা শুরু হলো।

করোনার পর ক্যাম্পাসে ফিরে দেখলাম, আবরার হত্যাসহ আরও কিছু নিপীড়নমূলক ঘটনায় ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি যেভাবে নাজুক হয়েছিল, তারা সেটা কাটিয়ে উঠেছে—ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি দিচ্ছে, লাইব্রেরি করছে ইত্যাদি। অনুভব করলাম, ছাত্র আন্দোলন হারিয়ে যাচ্ছে। তাই একটু পড়াশোনার মধ্যে ঢুকলাম। এই পর্যায়ে মাহফুজ ভাইয়ের নেতৃত্বে অনেকটা গোপনেই শুরু হলো গুরুবার আড্ডা। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, ছাত্র আন্দোলন, ধর্ম প্রভৃতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা আর তর্ক—এভাবেই আড্ডাটা চলছিল।

২০২২ সালে আবরারের স্মরণসভায় হামলা হয়। এ ঘটনায় সে সময় ছাত্রদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। একপর্যায়ে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামে নতুন সংগঠন করলাম। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি কোনো বাধা ছাড়াই ভোটারবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এল। সবার মধ্যেই হতাশা।

আমি তখন টিউশনি করতাম, কোচিংয়ে ক্লাস নিতাম। তবে মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ছাত্রশক্তির সাংগঠনিক বিস্তার ঘটানো। আমরা হাল ছাড়িনি। নানা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। সংগঠনের ব্যানারে না করে সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ইফতার মাহফিল, ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে কর্মসূচি—এসব করেছি। আমাদের চিন্তা যত না ছিল সংগঠন করা, তার চেয়ে বেশি ছিল সংগঠনের হাত ধরে একটা রাজনৈতিক পরিসর রচনা এবং ছাত্রদের সেখানে যুক্ত করা। এ জন্য আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দিই। মাহফুজ ভাই, আসাদ ভাই (ভূঁইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান) মিলে পূর্বপক্ষ ও রণপা নামে পত্রিকা বের করেন। পাশাপাশি চলে গুরুবার আড্ডা, রসিক আড্ডা নামের পাঠচক্র এবং ছয়চক্র নামের একটি একাডেমিক আড্ডা। আরও ছিল রাষ্ট্রকল্প লাইব্রেরি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে এগুলো আদতে ছিল লড়াই।

এই বাস্তবতায় আমরা ওই দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হই। সবাই মিলে গ্রন্থাগারের ভেতরে গিয়ে বিসিএসপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ডাকলাম। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবাই-ই এল। আমরা একটা দলের মতো হলাম। গ্রন্থাগারের সামনে মিছিল করে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিলাম। তখন কিন্তু আমাদের কোনো ব্যানার ছিল না। ব্যানারবিহীনভাবে মাত্র তিনটি কর্মসূচির পর কোরবানি ঈদের বন্ধ শুরু হলো। আন্দোলনে ঈদের আগে অল্প কয়েকজন মেয়ে ছিল, পরে অনেকে যোগ দেয়। আমরা আলটিমেটাম দিলাম।

ঈদের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে গোছালাম। সারা দেশে তৈরি করলাম প্রতিনিধি নেটওয়ার্ক। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়ে অভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া হলো। জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুরের বেগম রোকেয়া—বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে শুরু হলো আন্দোলন। ঈদের ছুটিতে আমরা বিভিন্ন সার্কেলে গিয়েছি, বুদ্ধিজীবীদের কাছে গিয়েছি। তেমন সাড়া পাইনি।

ঈদের পর ১ জুলাই আন্দোলন শুরু হলেও ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে যাত্রা শুরু হয় ৫ তারিখ। ‘কোটা পুনর্বহাল চাই না’ ফেসবুক গ্রুপে নাম আহ্বান করলে এই নামের পক্ষে বেশি ভোট পড়ে। আর এমন নাম দেওয়ার কারণ হলো, কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের আন্দোলনটা ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থের জায়গা থেকে। ফলে এমন একটা নাম আমরা দিতে চেয়েছি, যাতে নামের মধ্যেই একটা নীতি প্রতিফলিত হয়। শুধু চাকরি নয়, এ আন্দোলনের মাধ্যমে দুর্নীতির বিতাড়ন, ভালো আমলাতন্ত্র—এসবও যুক্ত করতে চেয়েছিলাম। করা যায়নি। মাঠে শুধু বৈষম্যবিরোধীটাই টিকে গেছে।

আন্দোলনের কৌশল

আন্দোলনে সব সময় ভিন্ন ধরনের নামে কর্মসূচি দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা। হরতাল-অবরোধ—এসব খুব প্রচলিত। মানুষ জানে এখানে কী হয়—একটা বাধা আসে, পুলিশ বা ছাত্রলীগ হামলা করে। তাই আমরা ‘বাংলা ব্লকেড’ নাম দিলাম এই চিন্তা করে যে শহুরে মধ্যবিত্ত এখানে যুক্ত হোক। আবার জেন-জি প্রজন্মও যেন যুক্ত হয়, তা-ও আমাদের লক্ষ্য ছিল। এই ভিন্নধর্মী কর্মসূচির প্রভাব কিন্তু আন্দোলনে বেশ ভালোভাবেই পড়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার মধ্য দিয়ে আন্দোলন যখন দমনের চেষ্টা হলো, তখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। আবার দোয়া-মোনাজাত, গায়েবানা জানাজা—এ ধরনের কর্মসূচিও ছিল আমাদের। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এতে সংযুক্ত হয়েছেন। আদতে আমরা ডান-বাম, শহর-গ্রামসহ নানান মতাদর্শের মানুষ যেন একটা জায়গায় দাঁড়াতে পারে—এমন এক পরিসর তৈরি করতে চেয়েছি।

আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান ছিল মধ্যপন্থী। বামপন্থী-ইসলামি-বিএনপিপন্থী—সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এ অবস্থানের কারণে সবার সঙ্গেই আমরা মিশতে পারতাম, এখনো পারি।

আন্দোলনের আরেকটি কৌশলগত দিক ছিল একক নেতৃত্ব না রাখা এবং পরিচিত কাউকে সামনে না আনা। আমি যেহেতু পরিচিত ছিলাম না, তাই সামনে ছিলাম। এমনকি প্রথম দিকে জুনিয়ররা সামনে ছিল। প্রতিদিনই গান-কবিতা হচ্ছে। অপরিচিতদের দেখে সবাই যুক্ত হচ্ছে। কেউ বুঝতেই পারেনি, এখানে নেতৃত্বটা দিচ্ছে কে।

শেখ হাসিনা তখন দেশে ছিলেন না, চীনে গিয়েছিলেন। আমরা ভেবেছি, দেশে ফিরে তিনি ইতিবাচক কিছু একটা বলবেন। কিন্তু ১৪ জুলাই তিনি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে কটূক্তি করলেন। কথাটি সবার আত্মমর্যাদায় আঘাত করল। ওই রাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হল থেকে বেরিয়ে এলেন ক্যাম্পাসের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা।

১৫ জুলাই মেয়েদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করল। ক্যাম্পাস থেকে আমরা বিতাড়িত হলাম। ১৫ তারিখ রাত থেকে একটু একটু পালিয়ে থাকতে শুরু করি। মুঠোফোন বন্ধ রাখি। ১৬ জুলাই রংপুরে আবু সাঈদসহ ছয়জন শহীদ হন। এদিন বিকেলে শহীদ মিনারে আমাদের কর্মসূচি ছিল। সবাই লাঠি নিয়ে শহীদ মিনারে এলেন। আমি ঘোষণা করলাম, আবু সাঈদ শহীদ হয়েছেন। মারা যাওয়ার আগের দিনও বাকেরের (আবু বাকের মজুমদার) সঙ্গে তাঁর কথা হয়।

আবু সাঈদ শহীদ হওয়ার পর থেকেই মূলত আন্দোলন সর্বব্যাপকতা লাভ করে। গণজোয়ার শুরু হয়। জাহাঙ্গীরনগর, ঢাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করে তাদের বিতাড়িত করেন শিক্ষার্থীরা। মেয়েদের হলে শুরু হয় প্রতিরোধ। এ আন্দোলনে মেয়েদের ভূমিকা ছিল ব্যাপক। আন্দোলনের বড় শক্তিও তাঁরা।

যেভাবে গোয়েন্দাদের ধোঁকা দিয়েছিলাম

আমাদের আন্দোলনের সফলতার আরেকটি বড় কারণ হলো, গোয়েন্দাদের ধোঁকা দিতে পারা। ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো বন্ধের ঘোষণা দেয় ইউজিসি। ১৭ জুলাই ছিল কফিনমিছিল। ওই দিন আবার মহররম। আমরা এত প্রচারণা করতে পারিনি। সেদিনও পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সম্মিলিতভাবে আমাদের আক্রমণ করে। এর মধ্যে ডিজিএফআইয়ের লোকজন কথা বলতে চায় আমাদের সঙ্গে। তারা চেয়েছিল আমরা যেন সবাইকে নিয়ে ওদের সঙ্গে বসি, যাতে ওদের পক্ষে সবাইকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। কিন্তু সবাইকে নিয়ে ওদের সঙ্গে আমরা বসিনি, আমাদের কেউ কেউ বসেছে আর পরিকল্পনা করেই কাউকে কাউকে বাইরে রাখা হয়েছে। ক্যাম্পাসের মধ্যে ওদের সঙ্গে যখন বসেছি, তারা আমাদের বলেছে, ‘তোমরা সংলাপ করো। তোমরা যার সঙ্গে বসতে চাও, তার সঙ্গেই বসতে পারো।’ বিপরীতে আমরা বলেছি, ‘ঠিক আছে আমাদের কথা মানলাম।’ আমি হয়তো গোয়েন্দাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসেছি, আর আসিফকে (আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) রাখা হয়েছে বাইরে। আমাদের মিটিং শেষ হওয়ার আগেই সে পরের দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দিয়েছে। গোয়েন্দারা বারবার এভাবে বিভ্রান্ত হয়েছে। ওরা বুঝতে পারত না, কাকে বললে কী হবে? কে মূল নেতৃত্বে?

একপর্যায়ে ভাবতে থাকি, যেকোনো মুহূর্তে আমাদের গ্রেপ্তার করবেন গোয়েন্দারা। তাই তাঁদের সঙ্গে বৈঠকের সময় নিজেদের মুঠোফোন নিয়ে যাইনি। এ সময় তাঁরা আবারও আমাদের বলেন, ‘তোমাদের সবাইকে লাগবে, তোমরা সংলাপে বসো।’ আমরা বলেছি, ‘আমাদের হল থেকে বের করে দিচ্ছেন, মন্ত্রীরা নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছেন, ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এভাবে তো সংলাপ হয় না। এগুলো ঠিক করেন, বসব।’ তাঁদের এভাবে বুঝ দিয়ে বের হতাম। কথা দিলেও তা বাস্তবায়ন করতাম না, অন্য কিছু একটা করতাম।

১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দিলাম। এ সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাঠে নামলেন, শহীদ হলেন অনেকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যখন মারা হচ্ছিল, সে সময় শুরু হয়েছে আমাদের পলাতক জীবন—মাঠে ছিলাম না—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিলাম। ভিডিও–বক্তৃতা দিচ্ছি, ঘন ঘন জায়গা পাল্টাচ্ছি। কাছে কখনো মুঠোফোন ছিল, কখনো ছিল না। সবই করেছি গোয়েন্দাদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য। জানতাম আমাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এক রাতে ধানমন্ডির একটা বাসায় ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, আমি এখানে নিরাপদ না। কাউকে না বলে খালি পায়ে বের হয়ে গেলাম। ওই রাতে ধানমন্ডির একটা মসজিদে ছিলাম। পরদিনই সেই বাসার মালিককে তুলে নিয়ে গেছে। সে রাতে ওখানে থাকলে গ্রেপ্তার হতাম নিশ্চিত।

তুলে নিয়ে গেল

১৯ জুলাই ১০-১২ দিন পর বাসায় গেলাম। তত দিনে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে। আসিফ ও বাকেরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পারলাম না। সরকার সে সময় একদিকে নির্বিচার মানুষ মারছে, অন্যদিকে ধরছে আন্দোলনকারীদের। আওয়ামী বয়ান ছিল, মৃত্যুর জন্য ছাত্ররা দায়ী, আন্দোলনকারীরা দায়ী। সরকারবিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে, তাই এত মানুষ মারা গেছে।

এদিকে এভাবে পালিয়ে বেড়াতে আমার আর ভালো লাগছিল না। ভাবলাম, যা হওয়ার হবে, এবার প্রকাশ্য হব। ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় নন্দীপাড়ায় এক বন্ধুর বাসায় গেলাম। রাত ১১টায় কারফিউর সংবাদ দেখলাম। তবে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে আন্দোলনের কোনো সংবাদ নেই। তখন আমি বিবিসি, এএফপি ও নেত্র নিউজের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। বার্তা পাঠালাম, শাটডাউন অব্যাহত থাকবে।

রাত বোধ হয় তখন আড়াইটা-তিনটা বাজে। ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ডেকে তোলা হলো আমাকে। শুনলাম, ডিবি পুলিশ এসেছে। ছাদে চলে গেলাম। আমাকে অনুসরণ করে পুলিশও উঠে এল ছাদে। তাদের বললাম, ‘আমিই নাহিদ ইসলাম।’ চোখ বেঁধে আমাকে নিয়ে চলে গেল তারা। পরে আমাকে একটা রুমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করল, কার কার সঙ্গে যোগাযোগ আছে, কে টাকা দেয় ইত্যাদি।

২০ জুলাই বিকেল থেকে আমাকে ওরা দাঁড় করিয়ে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে মারতে থাকে। কেউ এসে মারে, কেউ বোঝায়। কেউ আবার ইমোশনাল কথাবার্তা বলে। বলে, ‘আন্দোলন স্থগিত করো।’

আমাকে ওরা খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল কি না জানি না, ডিবিতে সব সময়ই হ্যালুসিনেশনের মতো হতো আমার। একসময় তারা বলল, ‘তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কাল কোর্টে রায় হবে। তুমি গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে, আন্দোলন স্থগিত করবে। কোটা সংস্কার হয়ে যাবে। তোমরা চাইলে আন্দোলন থেকে এভাবে এক্সিট নিতে পারবে।’ আমি হ্যাঁ-না কিছুই বলিনি।

২১ জুলাই ভোর চারটার দিকে আমাকে তারা পূর্বাচলে ফেলে যায়। বলেছিল, ‘তোমাকে যে তুলে এনেছি, এটা কেউ জানে না। কাউকে জানাবে না। জানালে আবার তুলে নিয়ে যাব।’ তারা আমার পকেটে এক হাজার টাকাও দিয়ে যায়, যাতে বাড়ি ফিরতে পারি। গোটা দিন গোয়েন্দারা আমাকে নির্যাতন করেছিল। আন্দোলনের পরিস্থিতি কিছুই জানতাম না। ২১ তারিখ ভোরে প্রথম আলোনিউ এজসহ ৮-১০টি পত্রিকা কিনে বাসায় এলাম। পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেলাম।

তারপর চিকিৎসার জন্য গেলাম গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে। সেখানেও গোয়েন্দা সংস্থা পিছু ছাড়ল না। আদতে ২২ জুলাই থেকেই গণস্বাস্থ্যে আমরা ওদের কাছে জিম্মি ছিলাম। দরজার সামনে সব সময় সাত-আটজন গোয়েন্দা থাকত। ইন্টারনেট সংযোগ কেটে দিয়েছিল। দর্শনার্থীদের আসতে দিত না। এমনকি আমার মুঠোফোনও নিয়ে গিয়েছিল। তখন সহযোদ্ধা অনেকের খোঁজ পাচ্ছি না। এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ক্রমাগত আমাদের চাপ, প্রলোভন, সবশেষে হুমকি দিচ্ছে। ওদের এসবের উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলন দমন করা। আমাদের বলল, ‘সংবাদ সম্মেলন করো।’ কী কী বলতে হবে, তা তারা শিখিয়ে দিল।

তবে ২৩ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে যে সংবাদ সম্মেলন হলো, সেখানে আমরা ওদের শেখানো কথা বললাম না। ওরা কোনোভাবেই আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। কারণ, ওদের আমি এক কথা বলি, আবার গণমাধ্যমে বলি সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা।

এর মধ্যে আসিফ, বাকেরও গণস্বাস্থ্য হাসপাতালবাসী হয়। একপর্যায়ে হাসপাতাল থেকে আসিফ, বাকেরসহ আমাকে ওরা আবার তুলে নেয়। এবার ডিবি অফিসে। পরে আরও কয়েকজন সমন্বয়ককে তুলে আনা হয়। চলতে থাকে মানসিক-শারীরিক নির্যাতন। ওরা বলে, মেয়েদের ধরে নিয়ে আসবে। যেসব সমন্বয়ক এখন বাইরে আছে, তাদেরও গুম করা হবে। নানা রকম চাপ দিয়ে আমাদের কাছ থেকে বিবৃতি আদায় করে তারা।

বলা দরকার, ডিবি অফিসেই পুলিশের নিম্নপদস্থ দু-একজন আমাদের সাহায্য করত। রাতে পত্রিকা দিতে চেষ্টা করত।

৩০ তারিখ ছাড়া পেলাম আমরা। নির্যাতনের ধকলে আমি তখন খুব অসুস্থ। কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। ডিবিতে বাধ্য হয়ে বিবৃতি দিয়েছি, মানুষ ভুল বোঝে কি না—এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। পরে বুঝলাম, না, সবাই বুঝতে পেরেছে কোন পরিস্থিতিতে আমরা সেদিন বিবৃতিটি দিয়েছিলাম।

অতঃপর এক দফা

ব্যক্তিগতভাবে ১-২ আগস্টেই আমি বুঝেছি, এবার এক দফার ঘোষণা দিতে হবে। ৩ জুলাই বলেছিলাম, আমাদের চোখ গণভবনের দিকে। এরপর তো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ভীত হয়ে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেন। বেলা দেড়টার দিকে শুনলাম, হাসিনা পালিয়েছেন। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, ঘটনা সত্যি।

মানুষ মুক্তি খুঁজছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে সেই মুক্তি ঘটেছে। সব সময় আমি পেছনেই থাকতে চেয়েছি। কিন্তু নিয়তি আমাকে সামনে নিয়ে এসেছে।

নাহিদ ইসলাম: তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক ও টেলিযোগ উপদেষ্টা; বৈষম্যবিবোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা




বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যে ১০ দেশে অল্প খরচে পড়তে পারেন

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীর ভাবনার বিষয় থাকে স্বল্প খরচে দেশের বাইরে পড়াশোনা। বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা ও উন্নত জীবনব্যবস্থার সঙ্গে বাজেটের দিকটা মিলে গেলেই উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাড়ি জমান অনেক শিক্ষার্থী। ইউরোপ, মধ্য-এশিয়া, আমেরিকার বিভিন্ন দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কম খরচে অধ্যয়নের সুযোগ আছে। বেশ ভালো শতাংশ ছাড়ের পরও আর্থিক সংকুলান না হলে আছে স্কলারশিপের ব্যবস্থা। এতে টিউশন ফিসহ থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকটাই পুষিয়ে নেওয়া যায়। স্বল্প খরচে দেশের বাইরে পড়ার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অন্যতম ১০ গন্তব্য হতে পারে এসব দেশ

জার্মানি
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য এখন শিক্ষার্থীদের শীর্ষ পছন্দের দেশ জার্মানি। এখানকার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত। এগুলোর ব্যাচেলর কোর্স এবং বেশির ভাগ মাস্টার্স কোর্সের জন্য সাধারণত কোনো ফি নেই। কিছু মাস্টার্স প্রোগ্রামে টিউশন ফি থাকলেও তা অন্যান্য দেশের তুলনায় তেমন বেশি নয়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খরচ বলতে আছে সেমিস্টার কন্ট্রিবিউশন ফি, যার সঙ্গে টিউশন ফির কোনো সম্পর্ক নেই।

এটি শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই পাবলিক পরিবহন, ক্রীড়া, অনুষদ/বিভাগীয় ছাত্রসংগঠন এবং প্রশাসনিক ফি ব্যায়ভার বহন করে। এই ফি প্রতিষ্ঠান ভেদে পরিবর্তিত হয় এবং সাধারণত ১০০ থেকে ৩৫০ ইউরোর (১ ইউরো সমান বাংলাদেশি টাকা ১১৮ টাকা ৯১ পয়সা) মধ্যে থাকে।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার খরচ সাধারণত প্রতি মাসে ৭২৫ ইউরোর মতো হয়ে থাকে, যেখানে বাসস্থান, খাবার, পোশাক এবং বিনোদনমূলক কার্যক্রম সবই অন্তর্ভুক্ত।

নরওয়ে
এখানেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি মুক্ত। প্রতি সেমিস্টারে শুধু একটি শিক্ষার্থী ইউনিয়ন ফি দিতে হবে, যা ৩০ থেকে ৬০ ইউরোর মধ্যে। এর মাধ্যমে পাবলিক পরিবহন, জাদুঘর এবং সাংস্কৃতিক ইভেন্ট, স্বাস্থ্যসেবাতে বিশেষ ছাড় এবং ক্রীড়া সুবিধাগুলোসহ বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। নরওয়েতে জীবনযাত্রার জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ইউরোর মতো খরচের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বড় শহরগুলোয় স্বাভাবিকভাবেই খরচ অনেক বেশি কিন্তু ছোট শহরগুলোয় গড়পড়তায় ৮০০ থেকে ১ হাজার ইউরোর মধ্যেই থাকা-খাওয়া, চলাফেরার যাবতীয় খরচ হয়ে যায়।

ফ্রান্স

বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্গ বলা যেতে পারে ফ্রান্সকে। শুধু পড়াশোনার জন্যই নয়; বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং সমগ্র ইউরোপীয় বাজারে তাদের রয়েছে অভিজাত পদচারণ। স্নাতক করার পর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এখানে বিভিন্ন ব্যবসায়িক খাতে আকর্ষণীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার আশা করতে পারেন। সুস্বাদু খাবার থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক, ফ্যাশন, শিল্প-সাহিত্য এবং জীবনধারা; জীবনের প্রায় সবকিছুর একটি আনন্দদায়ক মিশ্রণের নাম ফ্রান্স। এখানে লাইসেন্স (স্নাতক) স্তরে প্রতিবছর খরচ হতে পারে ২ হাজার ৭৭০ ইউরো। মাস্টার লেভেলে খরচ আছে বছরপ্রতি ৩ হাজার ৭৭০ ইউরো।

জীবনযাত্রার জন্য প্যারিস, নিস, লিয়ন, ন্যান্টেস, বোর্দো বা টুলুজের মতো অভিজাত শহরগুলো বাদ দিয়ে বাকি অন্যান্য শহরগুলোকে বাছাই করলে ৬৫০ ইউরোর নিচেই দিন যাপন করা যাবে।

অস্ট্রিয়া
ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র অস্ট্রিয়া। ইউ (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন)/ইইএ(ইউরোপিয়ান ইকোনমিক এরিয়া) দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি একদম ফ্রি। কিন্তু নন-ইউ/ইইএ দেশগুলোর ছাত্রছাত্রীদের জন্য এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতি সেমিস্টারে ২০ ইউরো ছাড়াও টিউশন ফি বাবদ গড়ে ৭২৬ দশমিক ৭২ ইউরোর মতো খরচ হয়।




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ২০১৯ সালের এসএসসি পাসেও আবেদন

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মাধ্যমিক বা সমমান এবং ২০২৪ সালের উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ইউনিটে ভর্তির জন্য নির্ধারিত শর্ত পূরণ করবেন, কেবল তাঁরাই ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ৪ নভেম্বর ২০২৪ সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ২৫ নভেম্বর ২০২৪ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন ফি ১০৫০ (এক হাজার পঞ্চাশ) টাকা এবং আইবিএ ইউনিটের আবেদন ফি ১৫০০ (এক হাজার পাঁচ শত) টাকা। চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী) যেকোনো শাখায় অথবা অনলাইনে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সেবা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের আবেদন ফি জমা দিতে হবে।




পটুয়াখালীতে তিন শিক্ষার্থীর জন্য পাঁচ শিক্ষক, একক প্রতিষ্ঠার স্কুল চলছে একক আধিপত্যে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:: পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ৯নং ধুলাসার ইউনিয়নের ১২৮নং চর ধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৫ জন শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যদিও কাগজে কলমে বিদ্যালয়ের মোট ১১৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ বর্তমানে ফাঁকা পড়ে আছে।

প্রতিদিন সকালে সাড়ে ৯টায় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিকের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিদ্যালয়টি নিজেদের নিয়মে চলছে। সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর ও শিক্ষিকা আকলিমা সাধারণত ১০টার কিছু পরে ক্লাসে আসেন, এবং প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীর অভাব দেখা যায়।

সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সহকারী শিক্ষক আকলিমা অফিস কক্ষে প্রবেশ করে বিগত কয়েক দিনের স্বাক্ষর দ্রুত সেরে ফেলেন। তবে হাজিরা খাতায় প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির তথ্য লক্ষ্য করা যায়। অন্য সহকারী শিক্ষক সাওদা ছুটিতে রয়েছেন বলে জানানো হলেও, তার ছুটির কাগজ দেখাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে ৩ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন এবং মোট ১১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষকদিগের অশোভন আচরণ ও অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি সংকটময় হয়ে উঠেছে। ম্যানেজিং কমিটি কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থেকে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। বিদ্যালয়ের সামনে বড় করে একক প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের একক আধিপত্য প্রকাশ করে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাস নেওয়া হচ্ছেনা। ফলে গত ৭-৮ বছর ধরে স্কুলটি কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, একই পরিবারের সদস্যরা—প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, এবং তাদের মেয়ে—পালাবদল করে ক্লাস নিচ্ছেন। বাবা আসলে মেয়ে আসে, মা আসলে বাবা আসে; এ যেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চোর-পুলিশের খেলা।

স্থানীয় সজীব তালুকদারসহ একাধিক অভিভাবক আশা প্রকাশ করেন, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবার মুখরিত হয়ে উঠবে। অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ সুফিয়ান তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাসে আসেন না। তারা কখনো ১০টায়, কখনো ১১টায় আসেন এবং যথাযথ ক্লাস নেন না। প্রধান শিক্ষক, তার স্ত্রী ও মেয়ে তিনজনই একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন এবং তারা নিজেদের সুবিধামতো উপস্থিত হন।

স্থানীয় লিটন হোসেন তালুকদার বলেন, শিক্ষকদের অনিয়মের কারণে বিদ্যালয়টি বর্তমানে প্রায় শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, যদি শিক্ষকদের স্থায়ীভাবে অপসারণ না করা হয়, তারা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করবেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, তিনি গত এক বছর আগে তার ছেলেকে এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন, কিন্তু তার ছেলে এখনো পর্যন্ত বই দেখেও পড়তে পারে না। বর্তমানে বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে মোট শিক্ষার্থী ১১৭ জন হলেও, গড় উপস্থিতি হয় মাত্র ১০-১২ জন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস জানান, তিনি এবং তার স্ত্রী ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও কখনো ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাননি। তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত দুই দিন বিদ্যালয়ে আসেননি এবং অনিয়মের দায় স্বীকার করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, ছুটি না নিয়ে স্কুলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বখতিয়ার রহমান জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ এর নিচে রয়েছে, তবে তারা বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।