বছরের শেষ বিরল সূর্যগ্রহণ

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: বছরের দ্বিতীয় এবং শেষ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে বুধবার (২ অক্টোবর)। জ্যোতির্বিদদের বরাত দিয়ে স্পেট ডটকম জানিয়েছে, সূর্যগ্রহণের দিন চাঁদে তুলনামূলক ছোট দেখাবে। এই সূর্যগ্রহণটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হবে না বরং এটি একটি বলয়াকার সূর্যগ্রহণ হবে। যাকে রিং অফ ফায়ারও বলা হয়। এই সময় সূর্যগ্রহণের কারণে আকাশে কোথাও কোথাও আগুনের বলয় দেখা যাবে। খবর এনডিটিভি

সূর্যগ্রহণটি রিং অব ফায়ারে পরিণত হলে সেটি ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। আগামী ২ অক্টোবর গ্রহণটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৩ মিনিট ৬ সেকেন্ডের দিকে গ্রহণটি শুরু হবে এবং গ্রহণ শেষ হবে রাত ৩টা ১৬ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে।

বিরল এই সূর্যগ্রহণটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে দেখা যাবে। বিশেষ করে দক্ষিণ চিলি এবং দক্ষিণ আর্জেন্টিনা থেকে এর দেখা মিলবে। বাংলাদেশে গ্রহণটি দেখা যাবে না।

বিজ্ঞানীদের মতে, সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবী যখন একটি সরলরেখায় আসে, তখন সূর্যগ্রহণ ঘটে। অর্থাৎ ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে চলে আসে তখন সূর্যের আলো পৃথিবীতে পড়ে না, যাকে সূর্যগ্রহণ বলে।

চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে এর দূরত্বও পরিবর্তিত হয়। কখনো চাঁদ পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে আবার কখনো দূরে। চাঁদ যখন পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে তখন বড় দেখায় এবং দূরে গেলে ছোট দেখায়। যদি সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে, তবে তার বড় আকারের কারণে এটি পৃথিবী থেকে সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। একই সময়ে, যখন এটি অনেক দূরে থাকে, তার ছোট আকারের কারণে এটি কেবল সূর্যের মাঝখানের অংশকে ঢেকে রাখতে সক্ষম হয়। যার কারণে সূর্যের ধার দেখা যায়, যা আকাশে আগুনের বলয় তৈরি করে। একে বলে রিং অফ ফায়ার। আগুনের বলয়টি সম্পূর্ণ হতে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় লাগতে পারে, তবে প্রকৃত রিং অফ ফায়ার কয়েক সেকেন্ড থেকে ১২ সেকেন্ডের মধ্যে দেখা যায়।




চিনি খেয়ে ফেলছি কি না, বুঝব কী করে?

 

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: অ্যাডেড সুগার (খাবারে যে চিনি যোগ করা হয়)’ খাওয়া উচিত নয়। কেননা আমরা যে চিনি খাই তার বেশির ভাগই অবচেতনভাবে। মিষ্টি, কেক, ফল, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পানীয়র সুক্রোজ, ডেক্সট্রোজ, ফ্রুক্টোজ ও কর্ন সিরাপের মাধ্যমে ‘লুকায়িত’ চিনি ঢুকে পড়ে।
আমরা যে চিনি খাই তার বেশির ভাগই অবচেতনভাবে। মিষ্টি, কেক, ফল, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পানীয়র সুক্রোজ, ডেক্সট্রোজ, ফ্রুক্টোজ ও কর্ন সিরাপের মাধ্যমে ‘লুকায়িত’ চিনি ঢুকে পড়ে l

চিনি তো আমরা কমবেশি সবাই খাই। কিন্তু আমরা বেশি চিনি খেয়ে ফেলছি কি না, বুঝব কী করে? জার্মানির ডার্মাটোলজিস্ট ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞ ডা. লিলা আহলেমান চিনি বেশি খেলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয়, তা জানিয়েছেন।

১. বারবার খিদে লাগে, ওজন বেশি

চিনিতে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। পাশাপাশি বেশি চিনি খেলে বারবার ক্ষুধা লাগে। কারণ, স্বল্প মেয়াদে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায় চিনি, কিন্তু ফাইবারের অভাবের কারণে এর কোনো স্থায়ী প্রভাব থাকে না। ফলে ‘সুগার স্পাইক’ হয় আর বারবার ক্ষুধা লাগে। পরিণতিতে বেশি বেশি খেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলি আমরা।

২. ত্বকের স্বাস্থ্য নষ্ট

চিনি খেলে শুধু ইনসুলিনের মাত্রাই বাড়ে না, রক্তে ইনসুলিনের মতো গ্রোথ ফ্যাক্টর-১ বা জিএফ-১ নামে একটি হরমোনও বাড়ে। ইনসুলিন ও জিএফ-১ সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলোকে উদ্দীপ্ত করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বকের প্রোটিন। আর ব্রণসহ বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই ব্রণ দেখা দিলে বুঝতে পারবেন যে আপনি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি চিনি খাচ্ছেন।

আমরা যে চিনি খাই তার বেশির ভাগই অবচেতনভাবে। মিষ্টি, কেক, ফল, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পানীয়র সুক্রোজ, ডেক্সট্রোজ, ফ্রুক্টোজ ও কর্ন সিরাপের মাধ্যমে ‘লুকায়িত’ চিনি ঢুকে পড়ে l

চিনি তো আমরা কমবেশি সবাই খাই। কিন্তু আমরা বেশি চিনি খেয়ে ফেলছি কি না, বুঝব কী করে? জার্মানির ডার্মাটোলজিস্ট ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞ ডা. লিলা আহলেমান চিনি বেশি খেলে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় l

৩. মুড সুইং, বদমেজাজ

রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ার ফলে ইনসুলিন নিঃসরণও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘটে। এটি মাঝেমধ্যে এতটাই শক্তিশালী হয় যে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক স্তর থেকে কমে ন্যূনতম মাত্রার নিচে চলে যায়। তখন আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। তখন ক্ষুধা লাগে আর ‘মুড সুইং’ হয়। ফলে হুট করে রেগে যাওয়া, অল্পতে হতাশ হয়ে পড়া ও মেজাজ হারানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

৪. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া

সাধারণত ক্ষুদ্রান্ত্রের মাধ্যমে চিনি শোষিত হয়। যখন গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজের মতো সাধারণ চিনির পরিমাণ আমাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের ধারণক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যায়, তখন এই চিনি বৃহদন্ত্রে শোষিত হয়। পুষ্টিবিশেষজ্ঞদের মতে, এই চিনি বৃহদন্ত্রে থাকা ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হয়ে ওঠে। এর ফলে এন্ডোটক্সিন নামের বিষ উৎপন্ন হয়। এটি লাইপোপলিস্যাকারাইড নামেও পরিচিত। এটি রক্তে প্রবেশ করে নীরব প্রদাহ তৈরি করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থাকে দুর্বল করে। আর শরীরের বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে।

৫. দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া

এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে বেশি বেশি চিনি খেলে ‘অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন অ্যান্ড প্রোডাক্টস’(এজিইএস) তৈরি হয়। এর ফলে বয়স ৩০-এর পর আমাদের ত্বকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যে ক্ষয় হয়, তা আর পূরণ করে উঠতে পারে না। ফলে মানুষ দ্রুত বুড়িয়ে যেতে থাকে।




লিভারের জন্য ৫টি উপকারী খাবার




ব্যস্ত সময় পার করছেন বরিশালে ঢাক-ঢোলসহ বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগররা

বরিশাল অফিস :: আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে বরিশালে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাক-ঢোলসহ বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগররা। তবে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব একটা লাভ না হওয়ায় ঋণ সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ পেশার সাথে জড়িতদের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান, বরিশাল জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা।

দুর্গাপূজা মানেই আনন্দ। আর এ আনন্দের অন্যতম উপকরণ ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্র। তাই এ সব বাদ্যযন্ত্র তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কারিগররা। ঠুক-ঠাক শব্দে ভোর হতে রাত পযর্ন্ত শক্ত কাঠ কেটে নানা রকমের ঢাক-ঢোল তৈরি করছেন কারিগররা। নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে এসব বাদ্যযন্ত্র যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। তবে প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ পেশার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকে।

নগরীর বাকলার মোড় সংলগ্ন বাজার রোড ঢাক তৈরি করা দোকানগুলোতে ঘুরে দেখাগেছে, শারদীয় দুূর্গোৎসবের প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে ঢাক। আর তাই ঢাক তৈরী ও মেরামত করতে বরিশালে ব্যস্ততম সময় পার করছেন ঢাক তৈরী কারিগর ও ঢাকিরা।

শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে ঢাক তৈরি কারিগররা ঢাক থেকে শুরু করে সকল প্রকার শব্দ যন্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই হিন্দু ধর্মাবোলম্বীদের প্রধান ও সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে ঢাক বাজানো বাদ্যকার ও বিভিন্ন মিউজিক পার্টি থেকে অর্ডার নেয়া ঢাক সঠিক সময়ে সরবরাহ করার জন্য ঢাক তৈরীর কারিগর ও শ্রমিকদের এখন দিনরাত এককার হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে নগরীর বাজার রোড ‘তবলা ভূবন’-এর প্রো. শ্রী শম্ভু দাস ও ‘তাল তরঙ্গ’-এর প্রো. শ্রী মন্টু দাস জানান, যুগ যুগ ধরে ঢাক বাদ্য তৈরি ও ঢাক বাজিয়ে শতাধিক শ্রমিক বা কারিগর তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

বর্তমান আধুনিকতার যুগও প্রাচীনকালের ঢাকের প্রথাকে আজো বিলুপ্তি ঘটাতে পারেনি। বিশেষ করে দুর্গাপূজা আসলেই ঢাকের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই ঢাক তৈরীর কারিগর ও শ্রমিকেরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের ১২ মাসের প্রায় প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঢুলীদের নাচ-ই হচ্ছে অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ। আর ঢাকের বাদ্য (শব্দ) ছাড়া দুর্গপূজার অনুষ্ঠানসহ হিন্দু ধর্মাবোলম্বীদের কোন অনুষ্ঠানই তেমন জমে না।

শম্ভু দাস ও মন্টু দাস জানান, বংশ পরম্পরায় বিগত প্রায় ৫০ বছর যাবৎ তারা এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের পূর্ব পুরুষ ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরীর কাজ করে আসছেন। বর্তমান সময়ে একটি মাঝারী ধরনের ঢাক তৈরী করতে তাদের খরচ হয় প্রায় ৯ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। আর সেটি বিক্রি করছেন ১৪ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকায়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইতোমধ্যেই তাদের কাছে নতুন ঢাক তৈরী ও মেরামতের বেশ কিছু অর্ডার এসেছে।

শম্ভু দাস আরো জানান, চার সদস্যের সংসারে ঢাকসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামত করে তার পরিবার নিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দেই বসবাস করছেন। তবে বিগত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ঢাক তৈরির অর্ডার অনেক ভালো।

এ প্রসঙ্গে বরিশাল প্রেস ক্লাব-এর সাবেক সহ সভাপতি বীরেন সমদ্দার বলেন, শারদীয় দুূর্গোৎসবের প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে ঢাক। সন্ধ্যা গড়ানোর সাথে সাথে ঢাকের বাদ্যে মুখরিত হয়ে ওঠে পূজামন্ডপগুলো। ঢাকের শব্দ শুনলেই বোঝা যায় মন্দিরের সম্মুখে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।

সাংবাদিক বীরেন সমদ্দার আরো বলেন, পূজায় ঢাক-ঢোলের বাদ্য অপরিহার্য হলেও বর্তমানে সাউন্ড সিস্টেমের দাপটে ঢাকের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া বেড়েছে কাঠ ও চামড়াসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম। ফলে এখন তেমন লাভের মুখ দেখছেন না বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগররা।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল জেলা সহকারী সমাজ কল্যাণ পরিচালক জাবের আহম্মেদ বলেন, পূজা ছাড়াও বাংলা ও বাঙলির সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে ঢাক-ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র। তবে পূজায় এখনও ঢাক-ঢোলের কদর রয়েছে। পূজার আরতিতে ঢাক-ঢোলের কোনো বিকল্প নেই। তাই বছরের এ সময়টাতে ব্যস্ত সময় পার করেন ঢোল-ঢোলের কারিগররা। এসব কারিগর বা শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা চলছে।




বাউফলে ১১ সদস্যের ভূমিহীন পরিবার পলেথিন ছাপড়ায় জীবনযাপন

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: বাউফলে ধানদী গ্রামে পারভীন বেগম ১১ সদস্য পরিবার নিয়ে পলিথিন ছাপড়ায় মধ্যে জীবন যাপন করেছে। উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধান্দী গ্রামের ৫নং ওয়ার্ড বসতী তার। ধান্দী বাজার দক্ষিন দিকে কালাইয়া-ধান্দী পাকা সড়ক তেতুঁলিয়া নদীর কুলে পানির ডোবা মধ্যে পলেথিন ছাপড়া চারদিকে হোগল পাতা বেড়া নিচে কাঠের তক্তার পাটাতন। স্বামী, স্ত্রী, ছেলে, ছেলে বউ এবং নাত-নাতনী নিয়ে একই ছেড়াকাথায় রাত কাটাচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিন ধান্দী গ্রামে গেলে প্রতিনিধিকে নিয়ে পারভীন তার পরিবারকে নদীর কুলে যায়। হাতের ইশারা দেখান সেই পূর্বে বসতবাড়ী যা নদীর মধ্যে লঞ্চ নৌকা চলাচল করছি। নদী বিলীন দেখিয়ে বারবার দাবি করেন একটি টুকরো জমির।

বজলু হাওলাদার সাথে আলাপ চারিতায় জানা যায়, ৪ বছর আগে তেতুঁলিয়া নদীতে বিলীন হয়ে যায় ৩০ শতক বসতবাড়ি ও কৃষি জমি। ৩ ছেলে মেয়ে ও নাত-নাতনী নিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, পারভীন বসতবাড়ি তেতুঁলিয়া নদীতে বিলীন হওয়ার পরে চর রায়সাহেব আদর্শগ্রামে একটি থাকার ঘর পেলেও ওই এলাকায় কাজের সংকট দেখা দেয়। ওই চরে যেখানে যায় সেখানে কাজের বাঁধা। আদর্শ গ্রামে ২ মাস থাকার পরে কাজ না পেয়ে নিজ ধানদী গ্রামে আসতে বাধ্য হয়।

স্পিড ট্রাস্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী সালমা বেগম বলেন, স্টার ফর হারল্যান্ড ক্যাম্পেইন প্রকল্পের ভূমিহীন দলের একজন সদস্য। ভূমিহীন দলের মাধ্যমে স্থানীয় চেয়ারম্যান মাধ্যমে ভূমিহীন সনদ গ্রহন করে থাকে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারারী কমিশনার (ভুমি) সচেতনতামূলক সভায় খাসজমি দাবি করেন। এ সময় প্রতীক কুমার কুন্ডু বর্তমান খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান বন্ধ তবে গুছ্চগ্রামে বন্দোবস্ত প্রদান রয়েছে। বাউফল উপজেলা ও জেলা খাসজমি বন্দোবস্ত কমিটি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নাজিরপুর ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান সহিদুল আলম জানান, ধান্দী গ্রামের মধ্য সবচেয়ে হচ্ছে বজলু হাওয়ালাদার ও পারভীন পরিবার। বর্তমানে তেতুঁলিয়া নদীর পাড়ে ডোবার মধ্য ডেড়াবাধ দিয়ে জীবন যাপন করেছে।




বাউফলে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে বিপাকে মা

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: নিলুফা বেগম (৫৫)। তার স্বামী ২০ বছর আগে সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে চলে গেছেন। তার অবর্তমানে ছেলে শাফিনকে নিয়ে বিপাকে পরে যান মা নিলুফা। ছেলে শাফিন লেখাপড়ায় ভালো হওয়ায় অনেক আশা ছিল তার। ছেলের পড়াশুনার খরচ মেটাতে নিলুফা বেগম বাধ্য হয়ে অন্যের বাসায় কাজ করেন। তার স্বপ্ন ছেলে বড় হয়ে চাকরি করলে সব দুঃখ-কষ্ট শেষ হয়ে যাবে। ২০১৫ সাল থেকে হঠাৎ অজানা কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে শাফিন। তার মা বিভিন্ন মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে ডাক্তার দেখালে শাফিন মানসিক ভারসাম্য কিছুটা ঠিক হলে আবারও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

অন্যদিকে, তার মা নিলুফা বেগমের এখন মেরুদন্ড ও পায়ের হাড়ে ক্ষয় রোগ হয়েছে। যার কারণে এখন আর তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করতে পারেন না। সোজা হয়ে ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারে না নিলুফা। মানুষের ধারে ধারে হাত পেতে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে কোনোরকম দিন পার করছে মা-ছেলে।

নিলুফা বেগম পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের হাওলাদার বাড়ির বাসিন্দা।

সরেজমিনে নিলুফা বেগমের বাড়িতে দেখা যায়, মাথা গোজার জন্য পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে পাওয়া একমাত্র টিন দিয়ে বানানো ছোট ঘরে দুই মা-ছেলে বসবাস করেন। এছাড়া, তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য নেই কোনো রাস্তা, যেতে হয় কাদা-মাটি পার হয়ে।

নিলুফা বেগম বলেন, ‘আমার অনেক আশা আছিলো। সবাই বলছে ও রেজাল্ট ভালো করে ওরে (শাফিন) পড়াও। আমি কষ্ট কইরা, কাজ কইরা ছেলেরে পড়াইছি। আইএ পাশ করছে। এ প্লাস পাইছে। ঢাকা দিছিলাম এরপর ব্রেন্টে সমস্যা হইছি। দেশের বাড়িতে আনার পর ডাক্তার দেখাইছি ফকির দেখাইছি। দেখানোর পর কিছু বুঝি নাহ। ছেলের বন্ধুরা টাকা পয়সা দিছে হেইয়া দিয়া মানসিক হাসপাতালে ডাক্তার দেখাইছি। এহন ঔষধ চলে পুরাটা ঠিক হয় নাই। এহন ওই আল্লাহ উপর ভরসা।’

কান্নাজড়িত কন্ঠে নিলুফা বেগম আরও বলেন, ‘আমি এহন কি করমু? মানষের কাজ করছি, এহন মেরুদন্ড সমস্যা হইছে। ডাক্তারে বলছে আপনি কোনো কাজ করতে পারবেনা, ভাড়ি জিনিস লইতে পারবেন নাহ। এহন কি কইরা চলমু আমার তো কোনো লোহা লক্কর নাই। আমার কোনো অর্থ সম্পদ নাই, কিচ্ছু নাই একমাত্র মালিক ছাড়া।

তিনি আরো বলেন, ‘আমার বাবার কাছে যৌতুক চেয়েছিলো আমার স্বামী, যৌতুক না দেওয়ায় আমাকে ডিভোর্স এর কাগজ দিয়া চইল্লা গেছে। আমি এই ছেলে (শাফিন) লইয়া হাবুডুবু করছি। সে বিয়া করছে, আমি বিয়া করি নাই। আমি আল্লাহরে ভাইব্বা এই ছেলে দেইখা রইছি। সে ছেলের কোনো খোঁজ খবর নেয় না, ছেলেকে পাত্তা দেয় নাহ। কোনো খরচও দিতে চায় না।’

মানসিক ভারসাম্যহীন শাফিনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তখন তিনি অদ্ভুত কিছু কথা বলেন। এছাড়া কিছুতেই যেন কথা ঘুছিয়ে বলতে পারছিলেন নাহ শাফিন।

এলাকাবাসীরা জানান, নিলুফা বেগম খুবই অসহায়। অনেক আগেই তার স্বামী চলে গেছে। খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। তার ছেলে শাফিনের দীর্ঘদিন ধরে ব্রেন সমস্যা। ওর মা অনেক ট্রিট মেন্ট করছে, বর্তমানে এখন যে ট্রিটমেন্ট করবে এজন্য কোনো টাকা পয়সা নাই। বৃত্তবানদের এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন স্থানীয়রা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নাই, আমি খোঁজ খবর নিবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’




নতুন ফোন কিনছেন, জেনে নিন এ বিষয়গুলো




তেঁতুলিয়া নদীর বেদে সম্প্রদায় জীবনযাত্রায় লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদী কুলে বসবাস করছে ভাসমান জেলে বেদে সম্প্রদায়। শতাধিক নৌকায় প্রায় সহস্রাধিক মানুষের পানি বসতি। পেশা নদীতে মাছ ধরা। আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। মধ্যমেয়াদীদেশ হিসাবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করছে। যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবন জীবিকায় দেশ উন্নয়ন হচ্ছে। প্রতি বছর আর্থিন বাজেট হতোদরিদ্র ও প্রান্তিকপেশার উন্নয়ন জন্য বাজেট সহ বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তবায়নের বাইরে রয়েছে প্রান্তিক পেশাজীবি বেদে সম্প্রদায়।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের উপকুলীয় এলাকায় তেতুঁলিয়া নদীতে স্বাধীনতার পর থেকেই বেদে সম্প্রদায় বাস করছে। পেশা হচ্ছে, সারাদিন নদীর মধ্যে মাছ ধরা। সন্ধার পুর্বে কালাইয়া বন্দরের পাশে এসে নৌকার পাড়ি জমানো। নেই নাগরিকতার ভোটার অধিকার। ভোটের সময় আন্ত ইউনিয়ন (নাজিরপুর-কালাইয়া) সীমানা বিরোধ কারনে ভোটার হতে পারেনি।

উপজেলার কালাইয়া ও নাজিরপুর ইউনিয়ন মধ্যেবতী হচ্ছে তেঁতুলিয়া নদীর পাড় সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রায় অর্ধশত নৌকার বহরে ২৫০ জন বাসিন্দা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত শিশু কোনো স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি।

দেখা গেছে, প্রতিটি নৌকার স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত। স্যানিটেশন অবস্থা নাজুক। নৌকার ঢালিকে বসে প্রাকৃতিক কাজটি সম্পন্ন করেন। আবার ওই নদীর পানি দিয়েই রান্না বান্না সহ সকল কাজ করেন।

সরেজমিন চিত্রে দেখা গেছে, বেদে সম্প্রদায় মধ্যে রয়েছে ইউনিটি। নেতার ছাড়া কথা বলতে নারাজ। বেদে সম্প্রদায় কয়েকজন জানান, তাদের ভিতর দাম্পত্য জীবন নিয়ে কোনো ঝগরা বিবাদ বা কলহ বাদলে নেতার স্বরনা পন্ন হয়। তাদের মধ্যে বেশিরভাই মুসলমান দাবি করেন। তবে তাদের বিবাহ কার্যটি তাদের মধ্যেই থেকেই করে থাকে। বাল্যবিবাহ আইন সর্ম্পকে তারা বেশি সচেতন না। ১২ বছর পা দেয়ার সাথে সাথেই ছেলে মেয়ের বিবাহ হয়ে যায়। বিবাহ বছর শেষ হতে না হতেই নব দম্পতির কুল জুড়ে আসে নতুন শিশু। এটাই তাদের বিনোদন একমাত্র মাধ্যম।

বেদে সম্প্রদায় আয় ব্যয় সর্ম্পকে জানতে চাইলে উপস্থিত কয়েকজন বলেন, কোনো আয় ব্যয় বুঝি না। মাছ ধরি বিক্রি করি। বাজার সদায় করে খেয়ে ফেলি।
ঋন সর্ম্পকে জানা যায়, মেইন ল্যান্ড বন্দর কোনো ব্যক্তি তাদের ধার দেয় না। নৌকার বহরের নিজেদের মধ্যে ধার-দেনা করতে হয়।
মৃত্যু ব্যক্তির দাফন সর্ম্পকে জানতে চাইলে মুখ আড়াল করে বলেন, মাটি নেই দাফন করব কোথায় তাই নদীর পাড়ে কোপে রাখতে হয়। ধান কাটা মৌসুমে তাদের নৌকার বহর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় অন্যান্য এলাকা থেকে কালাইয়া বন্দরে এসে যোগ দেয়।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, হতোদরিদ্র প্রান্তিক পেশাজীবীর উন্নয়ন জন্য বেসরকারি সংস্থা কাজ করার লক্ষ্য উদ্দেশ্য থাকলেও তারা প্রদর্শনীয় হিসাবে উপজেলার সদর এলাকায় কাজ করে থাকে। দাতা সংস্থার কোটি কোটি টাকা খরচ করার জন্য প্রশিক্ষন, সেমিনার সভা সমাবেশ, ক্রসলার্নিং ভিজিট কর্মসূচী মধ্যে দিয়ে বছর শেষ করেন। পক্ষান্তরে দরিদ্র মানুষকে উন্নয়নের কথা বলে নিজেদের কর্মসংস্থান নিয়ে ব্যস্ত থাকে। উপজেলার সদরের জাতীয় পর্যায়ে একাধিক এনজিও থাকলেও বেদে সম্প্রদায় নিয়ে তাদেও কোনো পরিকল্পনা নেই।

একাধিকসূত্রে জানা গেছে, বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে বেদে সম্প্রদায় মতো কলাপাড়া, গলাচিপা, পটুয়াখালী জেলার লোহালিয়া নদীর মধ্যে বেদে সম্প্রদায় আছে। দক্ষিণাঞ্চলে কালাইয়া বন্দর। ঢাকা থেকে আসা যাওয়া যাত্রাপতিকদের দেখার নিদর্শন এ বেদে সম্প্রদায়। নারী পুরুষ একসাথে কাজ করছে। রান্নাবান্নাসহ সম্পুন্ন নদীর মধ্যে। বিনোদন বলতে প্রায় নৌকায় রেডিও ও ট্যাপ শোনা। আর্থিক স্বচ্ছল ২/১টি নৌকায় সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে টিভি দেখা যাচ্ছে।




মহানবীর যুগে যেমন ছিল ধর্মীয় সহাবস্থান

চন্দ্রদ্বীপ ডেস্ক: প্রিয় নবী (সা.) মদিনায় হিজরতকালে (সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রি.) পাঁচ ধরনের মানুষের সংশ্লেষের এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। যথা—মুহাজির, আনসার, ইহুদি, খ্রিস্টান, পৌত্তলিক। তখন তাঁর প্রথম ও প্রধান অগ্রাধিকার হয় ভ্রাতৃবিরোধ-বিদ্বেষ ও বিগ্রহের অবসান ঘটানো। প্রিয় নবী (সা.)-এর দর্শন—‘সহজ করো, জটিল কোরো না। সুসংবাদ দাও, ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়ো না। ’ (বুখারি)

এই নীতিতে ‘শান্তি ও আনুগত্য-আত্মসমর্পণ’ তথা Peace & Submission-এর শিক্ষায় তিনি Social contract বা সামাজিক চুক্তির মতো সম্প্রীতিমূলক ‘মদিনা সনদ’ প্রণয়ন করেন।

মদিনা সনদের প্রধান অর্জন—

(ক) তাওহিদভিত্তিক লিখিত সনদের আলোকে সংঘাতের স্থলে সর্বজনীন নিরাপত্তা।

(খ) প্রিয় নবী (সা.)-এর নেতৃত্বে শান্তি ও রাজনৈতিক ঐক্য।

গ) সাম্য ও মানবাধিকারের নিশ্চয়তা। মদিনা সনদের ফলে অসাম্প্রদায়িকতা ও সহিষ্ণুতার পরিবেশ গড়ে ওঠা সহজতর হয়। মদিনা সনদকে বলা হয়, মানব ইতিহাসের প্রথম লিখিত সংবিধান Written constitution.

সনদের সারসংক্ষেপ

(ক) মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান ও পৌত্তলিক সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।

(খ) রাসুলুল্লাহ (সা.) হবেন নব গঠিত ‘মদিনা প্রজাতন্ত্রে’র প্রধান ও সর্বোচ্চ বিচারালয়ের Court of Appeal-এর সর্বময় কর্তা।

(গ) সবার পরিপূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে, এতে কোনো হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

(ঘ) কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায়ে তার সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।

(ঙ) দুর্বল, অসহায়কে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।

(চ) সনদ স্বাক্ষরকারী পক্ষগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে রাসুল (সা.) তা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা করবেন।

মদিনা সনদের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্ব বৃদ্ধি পায়, ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি রচিত হয়, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মদিনার পুনর্গঠন সম্ভব হয়। মদিনা সনদের ধারাবাহিকতায় প্রিয় নবী (সা.) গোত্রপ্রধান শাসিত ২৭৬টি দেশীয় রাজ্যকে একত্র করেন। মদিনাকেন্দ্রিক এ ব্যবস্থার বিস্তৃতি ছিল ১০-১১ লাখ বর্গমাইলেরও বেশি এলাকা। পরবর্তী সময়ে প্রিয় নবী (সা.) সংঘাতের স্থলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই ষষ্ঠ হি./ ৬২৮ খ্রি. ‘হুদাইবিয়া’র সন্ধি স্বাক্ষর করেন।

হুদাইবিয়ার সন্ধির ফলে মক্কা-মদিনার মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ স্থগিত থাকার সুবাদে প্রিয় নবী (সা.) ইসলাম প্রচারে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। ফলে প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় ইসলাম আন্তর্জাতিকরূপ পরিগ্রহ করে। যার ভিত্তি হলো—

উম্মাহ (অভিন্ন জাতীয়তাবোধ ও অখণ্ডতা),

উখওয়াৎ (বিশ্বজনীন ইসলামী ভ্রাতৃত্ব),

তাবলিগ (ধর্মীয় প্রচার) ও

খিদমতে খালক (সৃষ্টির সেবা-সংরক্ষণ)।

এই চেতনাবোধের সার্থকতায় প্রিয় নবী (সা.) পত্রাবলি অনন্য কিংবদন্তি ও প্রিয় নবী (সা.)-এর চলন্ত-জীবন্ত মুজিজা। মিসরীয় গবেষক ড. হামিদুল্লাহর মতে, প্রিয় নবী (স.) যাঁদের কাছে পত্র পাঠিয়েছিলেন তাঁদের সংখ্যা দু-আড়াই শর কম নয়। তাঁদের অন্যতম হলেন—

রোম সম্রাট (কায়সার) হিরাক্লিয়াস,

ইয়ামামার গভর্নর হাওয়া বিন আলী,

বাহরাইনের গভর্নর মুনজির বিন সাওয়া,

ওমানের গভর্নর জাফর বিন জুলান্দি,

দামেস্কের গভর্নর হারিস বিন আবি শামর গাসসানি,

আবিসিনিয়া বা হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসি আসহাম,

মিশররাজ মাকাওকাস এবং ইরানের শাহানশাহ কিসরা খসরু পারভেজ।

রোম সম্রাটের কাছে লিখিত পত্রের ভাষ্য—

প্রিয় নবী (সা.)-এর পবিত্র পত্র পাঠে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের মনোজগতে ঝড় বইতে শুরু করে। তিনি প্রিয় নবী (সা.)-এর নবুয়তের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে বলেছিলেন—‘হায়! আমি যদি তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারতাম! তবে আমি তাঁর পা ধুয়ে দিতাম। ’ (বুখারি)

শুধু তাই নয়, তিনি রাজপ্রাসাদে রোমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সামনে ঘোষণা করলেন : ‘হে রোমবাসী। তোমরা কি কল্যাণ, হিদায়াত এবং তোমাদের রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব চাও? তাহলে এই নবীর আনুগত্য (বাইআত) গ্রহণ করো…’ (বুখারি)

বস্তুত এভাবেই ইসলাম ‘বিশ্ব বিজয়ী ধর্ম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়, এতেও আল-কোরআনের বাণীর নিত্যতা প্রমাণিত হলো : ‘তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ…। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)




পটুয়াখালীর রাঙাবালী হবে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র

পটুয়াখালী প্রতিনিধি ::

অবস্থানঃ পটুয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিনে বঙ্গোপসাগরের পাদদেশে উত্তরে চালিতাবুনিয়া নদী, আগুনমূখা নদী ও চর বিশ্বাস, পশ্চিমে রামনাবাদ চ্যানেল ও কলাপাড়া উপজেলা পূর্বে চর ফ্যাশন উপজেলার চর কুররী- মুকরী এবং দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর।

উপজেলার নামকরনঃ রাঙ্গাবালী উপজেলার নামকরনের সঠিক ইতহাস জানা যায়নি। তবে কথিত আছে যে, সাগর বক্ষে নতুন বালুচর সৃষ্টির ফলে কালের বিবর্তনে এই বালুচরের বালু লাল ছিল। এই ‘‘লাল’’ শব্দটি আঞ্চলিক ভাষায় রাঙ্গা নামে পরিচিত। এ থেকে রাঙ্গাবালি নামের উৎপত্তি।

ইতিহাসবেত্তাগন জানান ১৭৮৪ সালে কতিপয় রাকাইন জনগোষ্ঠী আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তখন থেকে এতদঞ্চলে জনবসতি শুরু হয়।

উপজেলার উৎপত্তিঃ ৭ জুন ২০১১ তারিখে নিকারের (ন্যাশনাল ইপপ্লিমেন্টেশন কমিটি ফর এ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফর্ম ) ১০৫তম সভায় রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রশাসনিক অনুমোদন হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ জুন ২০১১ তারিখে বাংলাদেশ গেজেট প্রকাশিত হয়।

সাগর কন্যা খ্যাত পটুয়াখালী সাগর পাড়ের উপজেলা রাঙ্গাবালীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানঃ

১। সোনার চর দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকতঃ পটুয়াখালীর সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিয়ে জেগে আছে সোনার চর। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব এবং পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে ৪০ কিলোমিটার পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের মোহনায় বঙ্গোপসাগরে সোনার চর দ্বীপটির অবস্থান। সোনার চর পূর্ব-পশ্চিমে ৪ কিলোমিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে আড়াই কিলোমিটার। মোট আয়তন ১০ বর্গকিলোমিটার। গোটা দ্বীপটি যেন সাজানো-গোছানো এক বনভূমি। রয়েছে কেওড়া, সুন্দরী, গড়ান, হেঁতাল, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। নিভৃত সোনার চরে শুধু নানান ধরনের বৃক্ষের সমাহারই নয়, রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীও। হরিণ, শিয়াল, মহিষ, বন্য শুয়োর, বানর এ বনের বাসিন্দা। রয়েছে চার কিলোমিটার সমুদ্রসৈকত। নগরের কর্মচাঞ্চল্য থেকে বহুদূরে এই সৈকতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য এখনো অনেকের কাছে অজানা।

একই স্থানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় যা বিশ্বে বিরল। এ অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ বন মৌ চাষীদের মধু আহরণের অভয়ারণ্য।

২। চর হেয়ার দ্বীপ ও সমুদ্র সৈকতঃ সোনার চর সংলগ্ন মাত্র ০২ কিঃ মিঃ পশ্চিমে রয়েছে চর হেয়ার সমুদ্র সৈকত ও সংরক্ষিত বনাঞ্চল। প্রায় ৪.৬ বর্গকিলোমিটারের দ্বীপের ০৩ কিঃ মিঃ দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকত একেবারেই দক্ষিনের বঙ্গোপসাগর মুখি। ছোট বড় অসংখ্য লাল কাকড়ার অভয়ারণ্যের এই দ্বীপের অন্যতম বিশেষ দিক হলো একই স্থানে দাড়িয়ে সুর্যাস্ত ও সুর্যোদয় দেখা যায়।

৩। জাহাজমারা সমুদ্র সৈকত : উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে জাহাজমারা সৈকত। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি সবুজ বন। গাঁয়ের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে শোভাযাত্রার মতো মনে হচ্ছিল আমাদের মোটরসাইকেলের মিছিল! আমাদের অপেক্ষায় ছিলেন ওখানকার স্থানীয় কয়েকজন সহকর্মী। জাহাজমারা সৈকতে সারি সারি ঝাউবন আর পাখ-পাখালির কলরবে মুখরিত পরিবেশ। চিকচিকে বালুতে লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি আর সাদা ঝিনুকের সমারোহ। দেখা মিলবে পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদা বক, খেকশিয়ালসহ নানা ধরনের পাখ-পাখালি আর বন্যপ্রাণী।

৪। দ্বীপ তুফানিয়াঃ জাহাজ মারা সমুদ্র সৈকতের সামান্য দক্ষিনেই রয়েছে চর তুফানিয়া দ্বীপ।চারদিকে নদী ও সাগর, আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজ বনাঞ্চলে সৃষ্ট এই দ্বীপ। প্রায় চার কিলোমিটার সমুদ্রতট ঘিরে রয়েছে বিশাল ঝাউবাগান। সেখানেও প্রায় ১ কিঃ মিঃ দীর্ঘ সৈকত। দেখা মিলবে পাতি তিসাবাজ, সাদা কলার্ড মাছরাঙা, পানকৌড়ি, সাদা বক, খেকশিয়ালসহ নানা ধরনের পাখ-পাখালি আর বন্যপ্রাণী।সাগর ও নদীর তীরে অবস্থিত সহজ সরল মানুষ এর বসবাস যারা আপ্যায়ন ও আন্তরিক। রাঙাবালী সদরে সল্প খরচে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ।